×

সাহিত্য

আঁধার বিনাশী বিপ্লবীর আজ জন্মদিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২০, ০১:৩৪ পিএম

আঁধার বিনাশী বিপ্লবীর আজ জন্মদিন

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

আঁধার বিনাশী বিপ্লবীর আজ জন্মদিন

প্রীতিলতা ও তার মা প্রতিভাময়ী

মহাপরাক্রমশালী ব্রিটিশদের ভিত কাঁপিয়ে দেয়া ‘বাংলার আঁধার বিনাশী বিপ্লবী’ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আজ ১০৯তম জন্মদিন। ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাটে তার জন্ম হয়েছিল। বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি আর মা প্রতিভাদেবী সাধারণ গৃহিণী। প্রীতিলতাকে প্রতিভাদেবী আদর করে ডাকতেন রানী বলে। ছাত্রী হিসেবে সেরাদের তালিকায় ছিলেন প্রীতিলতা। শিক্ষার হাতেখড়ি চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। স্বপ্ন ছিল বড় বিজ্ঞানী হওয়ার। তবে ইংরেজ সৈন্যদের সঙ্গে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানীর লড়াইয়ের ইতিহাসের গল্প শুনে তার চেতনা উদ্দীপ্ত হয়। বাংলাকে ব্রিটিশদের কবল থেকে মুক্ত করতে নিজেকে অকুতোভয় বিপ্লবী হিসেবে গড়ে তোলেন প্রীতিলতা। তবে বিপ্লবী হলেও পড়াশোনায় ছিলেন দারুণ মেধাবী। সংস্কৃত কলায় লাভ করেছিলেন বৃত্তি। লেটার মার্কস নিয়ে প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেছিলেন। নাটক লিখে মঞ্চে পরিবেশনও করতেন। ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম ও সম্মিলিতভাবে পঞ্চম স্থান লাভ করেন। এর জন্য মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান। পরে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ডিসটিংশান নিয়ে বিএ পাস করেন। তবে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ায় তার সেই কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো- সেই ফলাফলের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ৮০ বছর পর। অর্থাৎ ২০১২ সালের ২২ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রীতিলতাকে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি দেয়া হয়। ছোটবেলায় ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসির’ কথা পড়তে গিয়ে ভাবতেন এও কি সম্ভব! মনে প্রশ্ন জেগেছিল, আমরা মেয়েরা কি তাদের মতো পারি না? ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাবে ভয়াবহ হামলা হয়েছিল। যা ছিল বাংলার ইতিহাসের এক অনন্য ঘটনা। আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই যখন দেখি, ভয়াবহ এই হামলার ২১ বছর বয়সী দলনেতা পুরুষ বেশে একজন নারী! বাংলারই নারী! নাম তার প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের প্রথম নারী আত্মদানকারী। তখন বয়স ছিল তার একুশ। কৈশোর থেকে কেবল তারুণ্যে পা দিয়েছেন। পরনে মালকোঁচা ধুতি। মাথায় গৈরিক পাগড়ি। গায়ে লাল ব্যাজ লাগানো শার্ট। এক হাতে রিভলবার, অন্য হাতে হাতবোমা। ইনিই দলনেতা। দলের সদস্য সংখ্যা সাত। সবার পরনে রাবার সোলের কাপড়ের জুতো। সবাই প্রস্তুত। দলনেতার মুখে ‘চার্জ’ শুনতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ল শত্রুর ওপর। ক্লাবে তখন নাচ-গানের মচ্ছব। পিকরিক অ্যাসিডে তৈরি বোমাটি বজ্রের মতো ভয়ঙ্কর শব্দে ফেটে পড়ল; হলঘরে তখন শুধু ধোঁয়া। দলনেতাই এগিয়ে গেল সবার আগে। অথচ এটাই তার প্রথম অভিযান। বোমার বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ, শত্রুর মরণ চিৎকার মিলে এলাকাটা যেন পরিণত হলো এক দক্ষযজ্ঞে! না, এটা কোনো অ্যাডভেঞ্চার ফিল্মের দৃশ্য নয়। [caption id="attachment_218878" align="aligncenter" width="700"] প্রীতিলতা ও তার মা প্রতিভাময়ী[/caption] ইউরোপিয়ান ক্লাবে ভয়াবহ এই অভিযান চালানোর আগে প্রীতিলতা মাকে লিখেছিলেন, ‘মাগো, অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি। তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা!’ প্রীতিলতার বিপ্লবী হওয়ার বিষয় অবগত হওয়ার পর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক ইন্সপেক্টর হতবাক হয়ে বলেছিলেন, ‘এত শান্তশিষ্ট মেয়ে ও, এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে, ভাবতেও পারি না তার ভেতর এত কিছু! আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে পালিয়ে গেল।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App