×

সাহিত্য

অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিরোধ গড়ব?

Icon

nakib

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২০, ১০:৫৫ এএম

অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে কীভাবে প্রতিরোধ গড়ব?

কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক

আনোয়ারা সৈয়দ হক, যার সৃজনসত্তা বহুমাত্রিক। তিনি মনোসমীক্ষণের মানুষ। মানুষের অন্তর্জমিনের বয়ন ও বয়ান নিবিড়ভাবে অনুধাবন করেন বটে। কিন্তু গল্পে-উপন্যাসে সেই সব চরিত্র রাখেন সৃষ্টির অলক্ষে। ফলে আনোয়ারা সৈয়দ হকের গল্প ও উপন্যাস হয়ে ওঠে অনুভবের নির্বাণ। দীর্ঘ জীবনযাত্রায় অর্জন করেছেন বিচিত্র্য অভিজ্ঞতা। শিল্পের অগণন পথে যাত্রা করলেও কথাসাহিত্যে তিনি স্থিতি লাভ করেছেন পূর্ণমাত্রায়। কথাসাহিত্যে রেখে চলেছেন বাঙালির চিরায়ত সত্তায় ভাঙনের খেলা ও নির্মাণের পিচ্ছিল সড়কচিহ্ন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা একশর অধিক। পেশায় মনোরোগ চিকিৎসক হয়েও বিস্তৃত হয়েছেন সাহিত্যে। মনোসমীক্ষণের এ মানুষটির করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময় ভালোই কাটছে, তবে বিরক্তিকর। পড়াশোনা করে এবং লিখে দিন কাটছে। আবারো রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা পড়ছি। করুণাময় গোস্বামী সংগীত কোষ নামে সংগীতের ওপর বিশাল একটা বই লিখেছেন, সেটা পড়লাম কদিন ধরে। বইটা নিয়ে আমি একটা লেখাও লিখেছি। মনি হায়দারের উপন্যাস কিংবদন্তির ভাগীরতী পড়ে শেষ করলাম। এখন পড়ছি সুভাস মুখোপাধ্যায়ের লেখা বাঙালির ইতিহাস। আরেকটা বই নাজির হোসেনের লেখা কিংবদন্তির ঢাকা। সাংঘাতিক ভালো বই। পুরো ঢাকা শহরের উপরে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। আরেকটা বই পড়ছি আন্দালিব রাশদী অনুদিত মাতিলদে উরুটিয়ার পাবলো নেরুদার সঙ্গে আমার জীবন, সুন্দর অনুবাদ করেছেন, সেটা পড়ে শেষ করলাম। ধ্রুব এষ আমাকে একটা বই উৎসর্গ করেছেন সেটা এখনো পড়ার সময় পাইনি। এছাড়া হাতে যা পাচ্ছি তাই পড়ার চেষ্টা করছি। এরমধ্যে দুতিনটা গল্পও লিখলাম। আমি ঘুরে ফিরে এক সঙ্গে চার পাঁচটা বই পড়ি। একটা বই নিয়ে থাকতে পারি না। এছাড়া বিবিসি, সিএনন এবং দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে খবর দেখি। সময় কেটে যাচ্ছে। তবে এভাবে কতদিন থাকতে পারব জানি না। মানুষ তো আমেরিকায় বিদ্রোহ করছে। তারা বেরিয়ে পড়ছে বাড়ি থেকে। মানুষকে এভাবে একটা ভাইরাসের ভয়ে আটকে রাখা। কি সাংঘাতিক! মরলেও মানুষ বেরুবে। মানুষের এরকম একটা রোগ চেপে গেছে যে ভাইরাস ধরলে ধরুক তবুও বেরুব!সুন্দর করে নিঃশ্বাস নিতে পারাটাও যে পৃথিবীর সর্বোত্তম সাহিত্য যদি বলা হয় তাই। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। মানুষের এ বেঁচে থাকার কাছে কবিতা, সাহিত্য সংগীত সব সেকেন্ডারি হয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার আকুলতা মানুষের এতো বেশি! সে বুড়ো হোক আর অল্প বয়সী হোক। মরব সবাই। কিন্তু এভাবে আকস্মিকভাবে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মরব! এটা আমার কাছে একটা বিভৎস ব্যাপার মনে হচ্ছে! করোনার অভিঘাতে বদলে গেছে চারপাশ, আপনার চেনা পৃথিবীটা বদলে গেছে বলে মনে হচ্ছে কী- জবাবে এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, নাহ, এই পৃথিবীটার সঙ্গে আমার চেনা পৃথিবীর কোনোই মিল খুঁজে পাচ্ছি না। এই পৃথিবী আমার মোটেও ভালো লাগছে না। আমার চেনা পৃথিবী হচ্ছে- সর্বক্ষণ বাইরের জীবন, হাসপাতাল, আমার রোগী, আমার সাহিত্য, আমার ঘুরে বেড়ানো, সভা-সেমিনার। এই জীবন আমার সেই জীবন নয়। যত বয়সই হোক আমি বইমুখী মানুষ। আমার নেচার হচ্ছে বাইরে বেরুনো, মানুষের সঙ্গে মেশা, কাজ করা, হই চই করে মেতে থাকা জীবন। সেখানে এমন গৃহবন্দি জীবন মানে মনে হচ্ছে রিগোরাস পানিশমেন্ট! রীতিমতো মানুষকে দোজখের দিকেই টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! আমাদেরই দোষ এটা। আমরা পৃথিবীটাকে টানতে টানতে এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। একটা ছোট্ট করোনা ভাইরাস আমাদের সমস্ত শক্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখানে মানুষ যে কতো নগণ্য করোনাই সেটা প্রমাণ করে দিল। পৃথিবীর বড়ো শক্তি এবং অপশক্তি তারা এই সত্যিটা বুঝবে কিনা, আমার সন্দেহ আছে। এমন মহামারির দেখা পেয়েছেন কখনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে মহামারি এসেছে। কিন্তু বাতাসে ওরা এরকম মহামারির দেখা পাইনি। যেখানে বলছে সামাজিক দূরত্ব রাখো, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে একঘরে থাকতে পারবে না। প্রেমিক প্রেমিকাকে হাত তুলে চুমো খেতে পারবে না! একাত্তরের আমরা ভয়াবহ সময় পার করেছি। সে সময় ফাঁক ফোকর দিয়ে দেখছি- মিলিটারি আসছে কিনা। এখানে ভাইরাস দেখছি না। সে আক্রমণ করতে আসছে কিনা। এটা তো আনসিন এনিমি, সিন এনিমি ইজ মাচ বেটার দেন আনসিন এনিমি। অর্থাৎ দৃশ্যমান শত্রু হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলব? তিনি বলেন, পাকিস্তানিদের সঙ্গে যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধের ভয়াবহতার তুলনা হয় না। সেটা অন্যধরনের ভয়াবহতা। এটা আরেক ধরনের ভয়াবহতা যে আমার শত্রুকে চোখে দেখছি না। একাত্তরে তো পাকিস্তানি শত্রুকে চোখে দেখেছি। মনে হচ্ছে- জেলখানায় আছি সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে! আমার মনে হয় এটা প্রকৃতিরই প্রতিশোধ। আমরা বহু বছর ধরে, বহু যুগ ধরে আমরা প্রকৃতির ওপর অত্যাচার করছি। তারই একটা রিপার্কেশন প্রকৃতি দেখাচ্ছে। অর্থাৎ তোমরা আমাকে অত্যাচার করছ! দেখো আমি তোমাদের কিভাবে অত্যাচার করি!

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App