×

মুক্তচিন্তা

কীর্তিময় জীবন গড়ার প্রশিক্ষণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২০, ০৫:৩৫ পিএম

রোজার মাসের দ্বিতীয় মাগফিরাতের দশক আজ শুরু হচ্ছে। এই দশকে রোজাদাররা নিঃসন্দেহে রোজা, তারাবি ও কুরআন তেলাওয়াতসহ নানাভাবে ইবাদতে রত থেকে আল্লাহর অনুগ্রহসিক্ত হওয়ার সতত প্রয়াস চালিয়েছে। পাপে-তাপে দগ্ধ, অনুশোচনায় কাতর মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা লাভের সুযোগ এখন দোরগোড়ায়। মাগফিরাত তথা ক্ষমার দিনগুলোতে আমাদের আল্লাহর দরবারে কৃত পাপ-অপরাধের মাফ চেয়ে নিতে হবে। পবিত্র রমজান মাসের পুণ্যমুহূর্তগুলো ধীরে ধীরে আমরা পার করছি। কে কতটুকু রোজার দিনের মূল্যবান সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করছি, আল্লাহর স্মরণে, ইবাদত-সাধনায় কতটা মনোযোগী হতে পেরেছি সেই হিসাব আমাদের মেলাতে হবে। বিগত দিনে কোনো শৈথিল্য ও স্খলন হয়ে থাকলে শোধরাতে হবে নিজেকে। মাহে রমজানের মাহাত্ম্য ও ফজিলতের ভাগিদার হতে নিবিষ্ট মনে আল্লাহর স্মরণে নিবেদিত হতে হবে। তবে যারা একনিষ্ঠ রোজাদার ফেলে আসা দিনগুলোতে তারা সিয়াম সাধনা, তারাবি, নামাজে তাহাজ্জুদ, কুরআন তেলাওয়াত, নফল ইবাদত-বন্দেগি ও দান-সদকাহের নানা উপলক্ষ পালনের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর করুণাধন্য হওয়ার সতত প্রচেষ্টায় নিবেদিত ছিল। করুণার দশকে যারা নিবিষ্ট চিত্তে সিয়াম সাধনা ও সৎকাজে নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিল নিঃসন্দেহে তারা সৌভাগ্য ও করুণার ভাগিদার। মাগফিরাত তথা ক্ষমার দশকেও ইবাদত-সাধনায় আরো বিশেষ মনোযোগী হওয়া দরকার। মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার জন্য জৈবিক চাহিদার জোগান দরকার পড়ে। শরীরের চাহিদা খাদ্য-পানীয় দ্বারা মেটানো যায়। মানুষের দেহ ও রুহে খোরাক ভিন্ন ভিন্ন, খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে দেহের প্রয়োজন পূরণ হলেও রুহ বা আত্মার যে চাহিদা তা মেটাতে ‘জিকরুল্লাহ’ বা আল্লাহর জিকিরের বিকল্প নেই। বলা হয়েছে- ‘আলা বিজিকরিল্লাহি ওয়ালি তাতমায়িন্নাল কুলুব’ অর্থাৎ আল্লাহর স্মরণেই প্রশান্তি মিলে। লক্ষণীয় যে, মাহে রমজানে কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস, চলাফেরা ইত্যাদিতে পরিবর্তন দেখা যায়। তেমনিভাবে আমাদের ইবাদত বন্দেগিতেও দেখা যায় বিভিন্ন আমলের সংযোজন, সাধনার নানা কর্মকৌশল। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, আমাদের প্রিয়নবী হজরত রাসুলে কারিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র রমজান মাসের চারটি অভ্যাস বেশি আয়ত্ত করার জন্য খাস তাগিদ দিয়েছেন। প্রথমটি হলো কালেমায়ে তায়িবাহ। পবিত্র হাদিস শরিফে এই কালেমাকে সর্বোৎকৃষ্ট জিকির বলা হয়েছে। মিশকাত শরিফে হজরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাদ্বিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত আছে, হজরত মুসা (আলাইহিস সালাম) একদিন আল্লাহ তা’আলার দরবারে আরজ করলেনÑ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমন একটি দোয়া শিক্ষা দাও যা দ্বারা আমি তোমাকে সর্বাবস্থায় স্মরণ করতে পারি। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালেমা প্রদত্ত হলো। হজরত মুসা (আলাইহিস সালাম) আরজ করলেন, এ দোয়া তো তোমার প্রতিটি বান্দামাত্রই পড়ে থাকে। তাই আমি আমার জন্য একটি নির্দিষ্ট দোয়া প্রার্থনা করছি।’ তদুত্তরে আল্লাহ তা’আলা বললেন- ‘হে মুসা! আমি ছাড়া সাত আসমান জমিন এবং এর মধ্যস্থিত যা কিছু আছে, তৎসমুদয়কে এক পাল্লায় দিয়ে অন্য পাল্লায় এই কালেমাকে রাখা যায়, তবে এরই ওজন বেশি।’ সুবহানাল্লাহ। দ্বিতীয়টি হলো ইস্তেগফার! হাদিস শরিফে আছে যে ব্যক্তি যত অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনা অভ্যাস করেন, আল্লাহ তা’আলা তার যাবতীয় অভাব অভিযোগ আয়াসসাধ্য করে থাকেন এবং প্রতিটি চিন্তা থেকে মুক্ত করেন। আরেকটি হাদিস আছে, যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজে নিয়োজিত হয়, তখন তার কলবে পাপের একটি কালো চিহ্ন অঙ্কিত হয়। যদি সে পবিত্র চিত্তে তাওবা অর্থাৎ এ কাজ আর করবেন না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় এবং কৃতকার্যের জন্য অনুশোচনা করে তবে উক্ত কালো চিহ্ন ধৌত হয়ে যায়। তৃতীয় ও চতুর্থ হলো যথাক্রমে ‘দোজখ থেকে মুক্তি লাভ’ ও ‘জান্নাত লাভের নিমিত্তে দোয়া করা’। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে বহু জাহান্নামিকে মুক্ত করা হয় এবং প্রত্যেক মুসলমানের প্রত্যেক দিন ও রাতে (কমপক্ষে) একটি দোয়া কবুল হয়। আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায় যে ব্যক্তি রমজান মাস পাওয়ার পরও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারেনি তার ধ্বংস হওয়ার জন্য জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) দোয়া করেন। তাই প্রত্যেক মুসলমানকে উল্লিখিত চারটি অভ্যাস বেশি করে আমল করা প্রয়োজন।

লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App