পোকা না টিকলে মানুষও টিকবে না
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ মে ২০২০, ০৬:১৭ পিএম
গবেষক রোয়েল ভ্যান ক্লিঙ্ক
ফড়িং
লেডিবার্ড বিটল
ফড়িং
গান্ধী পোকা
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই দুনিয়ার ছোট-বড় প্রতিটি জীবেরই সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকা জরুরি। যে কোনও জীবের অস্তিত্বের সংকটই এই দুনিয়ার জন্য বিপদের ইঙ্গিত। তাই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে কীট-পতঙ্গদের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু উদ্বেগের বিষয়, পতঙ্গদের পরিমাণ পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে কমছে। শেষ ৩০ বছরে গোটা বিশ্বে পতঙ্গের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমেছে।
[caption id="attachment_218528" align="aligncenter" width="300"] ফড়িং[/caption]
লকডাউনের জেরে মানুষ যখন সারা বিশ্বজুড়ে ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছে, তখন প্রকৃতি সেজে ওঠার নানা সুখবরও এসেছে। মানুষের অবাধ আনাগোনা বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণীরা প্রাণ খুলে ঘুরতে পারছে। কোথাও জলের দূষণ সাফ হতেই ভেসে উঠেছে ডলফিনের পরিবার, কোথাও আবার শহরের পথে নির্ভয়ে ঘুরেছে হরিণ। কোথাও আবার ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে এসেছে ফ্লেমিংগোর দল। বহু বছর পরে যেন পৃথিবীকে নিজের করে পেয়েছে তারা।
এসব তথ্য ও ছবি নেটিজেনদের মধ্যে বেশ তোলপাড় তুলেছে। এরই মাঝে আবার এই চিন্তা বাড়িয়ে তোলা তথ্যটিও সামনে এল। পৃথিবীর বুক থেকে পতঙ্গদের সংখ্যা দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। গবেষণা বলছে, ১৯৯০ সালের পর থেকে ২৫ শতাংশ কমে গেছে পতঙ্গরা। এই কমে যাওয়ার হার দিনের পর দিন বাড়ছে।
[caption id="attachment_218529" align="aligncenter" width="300"] লেডিবার্ড বিটল[/caption]
এই কমে যেতে থাকা পতঙ্গদের মধ্যে কিছু কিছু প্রজাতি আবার রীতিমতো সংকটে। দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বহু অঞ্চলে এমন অনেক পতঙ্গ আছে, যাদের সংখ্যা এখন কত, তা নিয়ে কোনও সমীক্ষাই হয়নি। হারিয়ে যাওয়া পতঙ্গদের খোঁজ রাখেনি কেউ।
[caption id="attachment_218531" align="aligncenter" width="300"] ফড়িং[/caption]
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির নিয়মেই মানবসভ্যতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই পতঙ্গদের ওপর চূড়ান্ত নির্ভরশীল। কারণ প্রকৃতির বাস্তুতন্ত্রে পতঙ্গদের ভূমিকা অপরিসীম। পরিবেশের বর্জ্যকে নতুন করে ব্যবহারের উপযোগী করা, গাছের ফলন, চাষাবাদে সাহায্য ইত্যাদি নানা কাজ নিঃশব্দে ঘটিয়ে যায় পোকারা। সম্প্রতি প্রায় ৭৩টি ভিন্ন গবেষণা থেকে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যদি পতঙ্গদের এই হারিয়ে যাওয়ার হার কোনও ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা না যায় মানব সভ্যতাধ্বংসের সম্মুখীন হবে। এই গবেষণা যদিও বলছে জলজ পোকারা এই বিপদ থেকে খানিক মুক্ত তবু তাতে সামগ্রিক ভাবে কোন সুরাহা হবে না।
[caption id="attachment_218527" align="aligncenter" width="300"] গবেষক রোয়েল ভ্যান ক্লিঙ্ক[/caption]
‘জার্মান সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ বায়োডাইভার্সিটি রিসার্চ’-এর গবেষক রোয়েল ভ্যান ক্লিঙ্ক বলছেন, শেষ ত্রিশ বছরে ২৫ শতাংশ পতঙ্গ ধ্বংসের পরও মানুষের যদি হুঁশ না ফেরে তাহলে তা সত্যিই আশঙ্কার। পতঙ্গের অভাবে মানুষের একদিন খাদ্যেরও সমস্যা তৈরি হবে। এই পতঙ্গ পতনের হার সব থেকে বেশি ইউরোপে বলেই তিনি জানান।
ভ্যান ক্লিঙ্কের মতে, শহুরে সভ্যতার আগ্রাসী নির্মাণের জন্যই পতঙ্গরা নিজেদের বাসভূমি হারাচ্ছে। এইটুকু বুঝতে কাউকে খুব জ্ঞানের অধিকারী হতে হয় না, সংবেদী হতে হয়– এমনটাই মনে করেন তিনি। মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য জলবায়ুর আমূল পরিবর্তন ঘটছে, যার প্রভাব এই পতঙ্গদের ওপর খুব খারাপ ভাবে পড়ছে। চাষাবাদে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহারেও পতঙ্গদের ক্ষতি বাড়ছে। পাশাপাশি ব্রাজিলের আমাজন অরণ্য ধ্বংসের জন্যও পতঙ্গদের ওপর প্রভাব পড়বে বলে তিনি জানান।