×

জাতীয়

ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত, ছুটি বাড়ছে ১১ দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২০, ০১:০৭ পিএম

চালু হচ্ছে মিষ্টির দোকান, রেস্টুরেন্ট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্যাথলজিক্যাল সেন্টার

ফের বাড়ছে ছুটি, তবে খানিকটা শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। আগামীকাল সোমবার (৪ মে) থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে ছোট-বড় খাবারের দোকান, প্রতিষ্ঠিত রেস্টুরেন্ট, মিষ্টির দোকান, মল ও নানা ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিয়ে আরেক দফা ছুটির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোন এলাকায় কি কি দোকান খোলা থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে আজ-কালের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। এর মাধ্যমে মিলছে ধাপে ধাপে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত। গণপরিবহন চালুর অনুমতি আপাতত দেয়া হচ্ছে না বরং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াতে আরো কড়াকড়ি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র বলেছে, চলমান ছুটি ৫ মে পর্যন্ত রয়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে ১১ দিনের ছুটি যোগ হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি শুক্রবার এবং দুটি শনিবার মিলিয়ে রয়েছে চারদিন, ৬ কর্মদিবস এবং একদিন বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটি। সবমিলিয়ে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত ছুটি মিলবে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় প্রথম দফায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিসে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। দ্বিতীয় দফায় তা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এবং তৃতীয় দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এবং চতুর্থ দফায় ৫ মে পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছিল।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের জন্য নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা এখনো মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়নি বলে মনে করছে সরকার। এ অবস্থায় কদিন আগেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পোশাক কারখানা চালুর অনুমতি দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার আরো কিছু প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চায়। এভাবে ধাপে ধাপে সবকিছু চালু করে চলতি মে মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, দুধ ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর জন্য মিষ্টির দোকান খুলে দিতে চায় সরকার। খাবারের দোকান এবং নামি রেস্টুরেন্টও চালু করা হবে। কারণ এসব দোকানে ব্যবসা হলেও ভিড় কম হয়। শপিং মলগুলো- যেগুলো চেইন শপ সেগুলো খুলে দিতে চায় সরকার। কারণ ওগুলোতে মানুষের জমায়েত হলেও বাজারের মতো ভিড় হবে না। চিকিৎসা পরিষেবাকে আরো সহজলভ্য করার জন্য সরকার প্যাথলজিক্যাল সেন্টারও খুলে দিতে চায়। বর্তমানে স্থবির হয়ে যাওয়া লেনদেনকে গতিশীল করতে সীমিত পরিসরে লিজিং কোম্পানি, ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং শেয়ার বাজারের কিছু কোম্পানিও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে যেমন ভিড় হবে না তেমনি অর্থনীতির চাকাও সচল হয়ে উঠবে।

জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে আজ অথবা কাল নতুন করে আদেশ জারি করবে সরকার। কি কি শিথিল করা হবে তা নতুন করে জারি করা ছুটির আদেশে বলা থাকবে। অর্থাৎ ব্যবসা হয় আবার ভিড়ও কম হয় এমন কিছু দোকান ও প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে মিষ্টির দোকান, খাবারের দোকান, শপিং মল (চেইন শপ), উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নামি রেস্টুরেন্ট, প্যাথলজিক্যাল সেন্টার, অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউট (লিজিং কোম্পানি, ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং শেয়ারবাজারের কিছু কোম্পানি)। তার মতে, এসব দোকান এবং প্রতিষ্ঠানকে চালুর অনুমতি দিলেও লোকের ভিড় হবে না। এতে সংক্রমণেরও ভয় থাকবে না।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ছুটি বাড়ানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী দ্রুতই পদক্ষেপ নেবেন। প্রস্তাবনাটিতে তিনি স্বাক্ষর করলেই আজ অথবা কাল প্রজ্ঞাপন জারি হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১০ দিনের জন্য ছুটি বাড়লেও তাতে কিছু বিষয় শিথিল করা হবে। কি কি শিথিল হতে যাচ্ছে তা তিনি বলতে চাননি। তবে গত কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লঞ্চ ও ফেরিতে করে কলকারখানা শ্রমিকদের তাদের কর্মক্ষেত্রের দিকে ফেরার ঘটনা নজরে আসার পর নতুন করে জারি হওয়া ছুটির আদেশে এবিষয়ে কিছু নির্দেশনা যোগ করা হবে বলে জানান তিনি। ফরহাদ হোসেন বলেন, সাধারণ ছুটি বলা হলেও এই সময়ে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মানুষজন যেন যাতায়াত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হবে। কবে থেকে গণপরিবহন চালু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিস্থিতি বুঝে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, কিছু বিষয় শিথিল থাকলেও সারাদেশে গণপরিবহন, আন্তঃজেলা চলাচল, স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, সিনেমা, জিমনেসিয়াম, স্পোর্টস কমপ্লেক্স প্রভৃতি বড় বড় সমাবেশের স্থান, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য ধরনের সমাবেশ এবং জনসাধারণের জন্য ধর্মীয় ও উপাসনা স্থান আগের মতোই বন্ধ থাকবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলাচল আগের মতোই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা- বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন, ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। কৃষি পণ্য, সার, কীটনাশক, খাদ্য শিল্প পণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এবং কাঁচাবাজার, ওষুদের দোকান ও হাসপাতাল এ ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App