×

শিক্ষা

বাদ পড়ল বিতর্কিত ১১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২০, ১২:০৭ পিএম

বাদ পড়ল বিতর্কিত ১১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

ফাইল ছবি

সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া ১১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাপক সমালোচনার মুখে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোই এমপিওর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু শিক্ষাপ্র্রতিষ্ঠান সম্প্রতি সরকারি হলেও এমপিওর তালিকায় ঢুকে পড়েছিল। সেগুলোর নামও বাদ পড়েছে। আগামী রবিবার এমপিওভুক্তির প্রকাশিত এই তালিকার খুঁটিনাটি জানাতে সংবাদ সম্মেলন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত সেই তালিকায় অযোগ্য ও নাম-গোত্রহীন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের নামের প্রতিষ্ঠানও ছিল। এতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এরপর তালিকা সংশোধনে একাধিক কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই কমিটি দীর্ঘ সাত মাস যাচাই-বাছাই শেষে এমপিওভুক্তির নতুন তালিকা প্রকাশ করল। তাতে আগের তালিকা থেকে ১১৫টি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। কেন বাদ পড়ল তার ব্যাখ্যা অবশ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো দেয়নি। গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে স্কুল-কলেজের এবং গতকাল বৃহস্পতিবার কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির চ‚ড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই দুটি তালিকায় স্থান পেয়েছে মোট ২ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৬৩৩টি স্কুল-কলেজ এবং ৯৮২টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা রয়েছে। বাদ পড়া ১১৫টি প্রতিষ্ঠান তথ্য গোপন করে, ভুয়া তথ্য দিয়ে, অনিয়ম করে এমপিওভুক্তির প্রথম তালিকায় ঠাঁই নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাইয়ে সেসব অনিয়ম ধরা পড়েছে। ফলে তাদের বাদ দিয়ে নতুন এমপিওর তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। চ‚ড়ান্ত তালিকার ২ হাজার ৬১৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকেই বেতন-ভাতা পাবেন। অবশ্য তার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া শেষ করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশীদ আমিন ভোরের কাগজকে বলেন, আগামী রবিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপিওভুক্তির তালিকা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। এর আগে এ বিষয়ে আমি কিছুই বলব না। তবে তালিকা বিশ্লেষণ করলেই আপনারা বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পাবেন। দুই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গেল অক্টোবরে এমপিওর জন্য স্কুল-কলেজ পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছিল ১ হাজার ৬৫১টি প্রতিষ্ঠান। সেই তালিকা নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে শিক্ষামন্ত্রী পুরো তালিকাটি যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশের সাত মাস পর এসে ১ হাজার ৬৩৩টি স্কুল ও কলেজের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯৯১টি মাধ্যমিক স্কুল, ৪৩০টি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, ৬৮টি স্কুল এন্ড কলেজ, ৯২টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৫২টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। এমপিওভুক্তির নতুন তালিকা থেকে এর মধ্যে ৯টি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, ৪টি মাধ্যমিক স্কুল, ১টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৪টি ডিগ্রি কলেজ মিলিয়ে মোট ১৮টি স্কুল ও কলেজ বাদ পড়েছে। কারিগরি শাখা থেকে এমপিওভুক্তির জন্য চ‚—ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে ২৬৩টি বিএম কলেজ, ৬০টি কৃষি ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান এবং ১৬০টি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান। এখানে আগের তালিকা থেকে ২০টি বিএম কলেজ, ১৭টি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ও ২টি কৃষি ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। মাদ্রাসা বিভাগের তালিকার ৪৯৯ মাদ্রাসার মধ্যে ৩২৪টি দাখিল, ১১৯টি আলিম, ৩৪টি ফাযিল ও ২২টি কামিল মাদ্রাসা। আগের তালিকা থেকে ৩৪টি দাখিল মাদ্রাসা, ৯টি আলিম মাদ্রাসা, ৮টি ফাজিল মাদ্রাসা এবং ৭টি কামিল মাদ্রাসা বাদ পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ২ হাজার ৬১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে পাঁচ দফা শর্ত আরোপ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এমপিও কোড বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। কোড বরাদ্দ দিয়ে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও যোগ্য শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি দেয়ার ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত হওয়া কোনো প্রতিষ্ঠান নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত করা হবে বলেও আদেশে বলা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, এমপিও কোড পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করতে হবে। এরপর যাচাই-বাছাই করে তাদের এমপিও কার্যকর করে সরকারি বেতন-ভাতা পাঠানো হবে। শতভাগ ঈদ বোনাস চান এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা : আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাসের পরিবর্তে সরকারি নিয়মে শতভাগ ঈদ বোনাসসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বিশেষ আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি জানানো হয়। শিক্ষকদের দাবি, ২০০৪ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ ঈদ বোনাস দেয়া হলেও দীর্ঘ ১৬ বছরে এর কোনো পরিবর্তন নেই। তারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাত্র এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দেয়া হয়। বর্তমানে শিক্ষকরা করোনার প্রভাবে গৃহবন্দি। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মারাত্মক অর্থকষ্টে দিনযাপন করছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থকষ্ট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। শিক্ষকরা আরো জানান, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থা চরম পর্যায়ে। তারা অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় শতভাগ ঈদ বোনাস প্রদানসহ তাদের সমস্যা লাঘবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App