×

স্বাস্থ্য

করোনার প্রতিষেধক নিয়ে আশা-নিরাশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২০, ০৬:১৯ পিএম

সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা পরিশ্রম করে চলছেন করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের। এ নিয়ে উন্নত দেশগুলোতে চলছে প্রতিযোগিতা। কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে ১০২টি সম্ভাব্য প্রতিষেধক তৈরির কাজ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি নথি প্রকাশ করে এই তথ্য জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বজুড়ে গবেষণাধীন সম্ভ্যাব্য এই ১০২টি ভ্যাকসিনের মধ্যে ৮টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন পেয়েছে। তবে চারদিন আগেও এই সংখ্যা ছিল ৭টি। নতুন করে যুক্ত হয়েছে চীনে গবেষণাধীন একটি সম্ভ্যাব্য প্রতিষেধক। প্রথম ৭টি প্রতিষেধক মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। নতুন করে নথিভূক্ত হওয়া চীনের ওই প্রতিষেধক এখনো মানবদেহে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি এই সংস্থাটি।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, জাপান, ইরানসহ কয়েকটি দেশ দাবি করছে তারা করোনার প্রতিষেধক তৈরি করেছে। হাইড্রোক্সোক্লরকুইন আর এন্টিবায়োটিক এজিত্রমাইসিনকে অনেকে এবং অনেক মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর প্রতিকারক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলো এবং অনেকে এই ওষুধ গুলা কোভিড-১৯ এর প্রতিকারক হিসেবে প্রয়োগও করেছিলো। কিন্তু এই ওষুধ গুলো ব্যবহার করে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক প্রভাবই বেশী দেখা গেছে। উপরন্তু কয়েকটা দেশে দেখা গেছে যারা হার্ট আর কিডনি রোগে আক্রান্ত তাদেরকে কোভিড-১৯ এর প্রতিকারক হিসেবে এই ওষুধ দেবার কারণে তাদের সাংঘাতিক শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছিলো বা অনেকের এই কারণে মৃত্যুও হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে কার্যকরি ওষুধ তৈরির দাবি করেন ইরান। দেশটি ওষুধের জেনেরিক নাম ফ্যাভিপিরাভির হলেও এটিটি-৭০৫ বা আভিজেন নামেও পরিচিত। ‘কেভজারা’ নামে আরেকটা মেডিসিন নিয়েও গবেষণা চলছে। তবে সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় রেমসিডিসিভির ওষুধে আশার আলো দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজের প্রধান ও হোয়াইট হাউসের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ড. অ্যান্থনি ফৌসি দাবি করেন, রেমডেসিভির করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ভালই কাজ করছে। তিনি জানান, আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার নানা জায়গায় এক হাজার ৬৩ জন কোভিড পজিটিভ রোগীকে এই ওষুধ প্রয়োগ করে দেখা গেছে যে তারা সেরে উঠছে। রেমডেসিভির ভাইরাস নির্মূল করতে পারে বলেই দাবি করেছেন ফৌসি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের গবেষকরা বলছেন যে করোনা চিকিৎসায় রেমডেসিভির ওষুধ তেমন কার্যকরি নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ এমার্জেন্সি প্রোগ্রামের নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল রায়ান বলেছেন, রেমডেসিভির নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। এই ওষুধ কতটা কার্যকরী তা এখনই সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। আরও অনেক অ্যান্টি-ভাইরাল ওষুধেরই ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছে যার মধ্যে রেমডেসিভির একটি। এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফল সার্বিকস্তরে খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ একেবারের নতুন। অনেক পুরনো ভাইরাসের চিকিৎসারও এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুরাহা হচ্ছে না। কিন্তু গবেষণা থেমে নেই।

ফার্মাসিস্ট ও গবেষক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ বলেন, করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও অনুমোদিত ওষুধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কার্যকরী ওষুধ নিয়ে গবেষণা করছে। জানা গেছে, এই মুহূর্তে রেমসিডিসিভির ফেস থ্রি ট্রায়াল হয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার মোট ৬৮টি স্থানে এক হাজার ৬৩ জন করোনা আক্রান্তের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে রেমসিডিসিভির প্রয়োগ করা হয়েছে। তারা দাবি করছে এতে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধই শতভাগ অনুমোদন পায়নি। আসলে কোনো একটা নতুন ভাইরাসের যথাযথ ওষুধ আবিষ্কার করতে অনেক অনেক দিন সময় লেগে যায়। আর যেহেতু এখনো সব প্রতিষেধক পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে সেহেতু এখনই বলা যাবে না ওই ওষুধ কার্যকরি কি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App