×

জাতীয়

থামছে না ঢাকামুখী ঢল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২০, ১০:০১ এএম

থামছে না ঢাকামুখী ঢল

ঢাকা মাওয়া সড়কের হাসারা এলাকায় ঢাকামুখী মানুষ। ছবি: ভোরের কাগজ

থামছে না ঢাকামুখী ঢল

প্রতীকী ছবি

মালিকপক্ষের ফোন পেয়ে ছুটে আসছে শ্রমিকরা রাতের আঁধারেও ভিন্ন পথে কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা শ্রমিকদের জীবিকা নিয়ে তামাশার অভিযোগ
কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না পোশাক শ্রমিকদের ঢাকামুখী ঢল। চাকরি হারানোর ভয়ে কারখানায় যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মস্থলে ফিরছেন হাজারো শ্রমিক। সাধারণ ছুটিতে গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও গতকাল বুধবারও তারা মাইলের পর মাইল হেঁটে, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যন্ত্রচালিত ভ্যান রিকশা বা পিকআপ ট্রাকে চেপে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়াসহ রাজধানীর আশপাশের অঞ্চলে আসছেন। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আসায় বাধা দিলেও রাতের আঁধারে আবার তারা ভিন্ন পথে কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করছেন। পাটুরিয়া ও মাওয়া ঘাটে পুলিশি বাধাও মানছেন না শ্রমিকরা। গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রাজধানী ও আশপাশের বেশকিছু কারখানা ইতোমধ্যে খুলেছে। এমতাবস্থায় কারখানার মালিকপক্ষ, শ্রমিক নেতারা, গার্মেন্টস সুপারভাইজারদের ফোন পেয়ে তারা কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন। পোশাক কারখানার মালিকরা তাদের চাকরিচ্যুত করা এবং বেতন কাটার ভয় দেখিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে বাধ্য করছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কারখানায় হাজারো শ্রমিক কর্মচ্যুত হয়েছে। মূলত চাকরি হারানোর ভয়ে যে যেভাবে পারছেন কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এদিকে সরকারি অনুমোদন নিয়ে রাজধানীতে বেশকিছু কারখানা গত রবিবার থেকে চালু হয়েছে। গত শনিবার তৈরি পোশাক শিল্পের দুই খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ ঘোষণা দেয় স্বল্প পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু পোশাক কারখানা চালু করা হবে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, এ পর্যন্ত তিন বিলিয়ন ডলারের ওপর অর্ডার বাতিল হয়েছে। আমাদের ওপর ৮৬৫টি কারখানা খুলে দেয়ার চাপ আছে। এলাকাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনক্ষণ বেধে, সীমিত আকারে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে কারখানা খুলে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। [caption id="attachment_217932" align="alignnone" width="700"]কাজ করছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা কাজ করছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা[/caption] মালিকপক্ষের পাশাপাশি খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবসায়ী ও সরকারের পক্ষ থেকেও এই প্রস্তাবে সায় দেয়া হয়। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার এই সময়ে সতর্কতার সঙ্গে কীভাবে কারখানা চালু করা যায় তার একটি প্রটোকল তৈরি করে বিজিএমইএ। ধাপে ধাপে সব কারখানা মে মাসের প্রথমে খুলে দেয়া হবে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়। বিজিএমইএর সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ জানান, ঢাকা ও আশপাশের অন্তত ৩০০ কারখানা চালু হয়েছে। এদিকে, চট্টগ্রামে তিনটি ইপিজেড এবং নাসিরাবাদ, কালুঘাট এলাকায় দেড় শতাধিক কারখানা চালু হয়েছে। প্রতিদিনই গোপনে কারখানা চালু করছেন বেশ কিছু মালিক। আবার কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে পুলিশ বেশ কয়েকটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল দৌলতদিয়া ও মাওয়া ফেরিঘাটে দেখা গেছে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়েই জীবিকার তাগিদে কর্মস্থল রাজধানী ঢাকায় ছুটছে মানুষ। ভিড়ের মধ্যেই গাদাগাদি করে ফেরিতে নদী পার হচ্ছেন তারা। তবে দুপুরে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপে মানুষের ভিড় কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে লকডাউন চলছে। এতে করে অ্যাম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ জরুরি যানবাহন পারাপারের জন্য দৌলতদিয়ার পাটুরিয়া নৌপথে সীমিত আকারে ৫টি ফেরি সচল রয়েছে। কিন্তু ফেরি সচল থাকায় বিভিন্ন জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনের সঙ্গে কর্মস্থলে ফেরা মানুষ নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে নদী পারাপার হচ্ছেন। এতে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। ঢাকামুখী যাত্রীরা জানান, পেটের ক্ষুধার কাছে করোনা ভাইরাস কিছুই না। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও যেতে হবে কর্মস্থলে। না যেতে পারলে চাকরি থাকবে না। তাই বাধ্য হয়েই ঢাকায় যেতে হচ্ছে। দৌলতদিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুন্নাফ জানান, দৌলতদিয়ার পাটুরিয়া নৌরুটে কোনো যাত্রী যেন নৌযানে পারাপার হতে না পারে, আমরা সে চেষ্টা করছি। হঠাৎ করেই ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেড়ে গেছে। আমাদের লোকবল কম থাকায় যাত্রী পারাপার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, সরকারি আদেশে সারাদেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। নৌপথে শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও পণ্যবাহী ট্রাকসহ জরুরি যানবাহন পারাপারের জন্য সীমিত আকারে ফেরি চলাচল সচল রাখা হয়েছে। কিন্তু মানুষের চাপে আমরা ঠিকমতো পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার করতে পারছি না। প্রতিটি ফেরিতেই মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এরা সবাই বিভিন্ন গার্মেন্টস ও অন্যান্য ছোটখাটো কারখানা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মী। করোনা ঝুঁকি থাকলেও ফেরিতে এদের পারাপার এভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়। এর আগে গত শনিবারেও শত ভোগান্তি সঙ্গী করেই পোশাক শ্রমিকদের অনেকেই কর্ম এলাকায় ফিরেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়ক ও সড়কে মানুষকে দলে দলে পায়ে হেঁটে আসতে দেখা যায়। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় ঘোষিত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, আমরা কারখানা বন্ধ করতে বলিনি। শ্রমিকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ কারখানা বন্ধ করা হয়। এসব কারখানা হয়তো কেউ কেউ খুলছে। কাজ না থাকলে শ্রম আইন অনুসারে মালিকরা চাকরিচ্যুত করতে পারে। তবে কলকারখানা অধিদপ্তরের ও বিজিএমইএ পরামর্শ দিয়েছে, এ দুর্যোগকালে যেন কাউকে চাকরিচ্যুত না করা হয়। বিজিএমইএ ও পোশাক খাতের অন্য সংগঠন বিকেএমইএর তালিকাভুক্ত ৪০ হাজার কারখানা রয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। এদিকে, গার্মেন্টস খোলাকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি। গার্মেন্টস টিইউসির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, শ্রমিকদের নিয়ে উদ্যোক্তারা তামাশা করছেন। করোনার সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন তাদের জোর করে কারখানায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, চাকরি হারানোর ভয়ে শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে। সারাদেশ বন্ধ থাকলেও অসাধু মালিকরা শ্রমিকদের ঠকানোর জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App