×

অর্থনীতি

বন্দরে আটকা শত কোটি টাকার পণ্য 

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫৮ পিএম

বন্দরে আটকা শত কোটি টাকার পণ্য 

ফাইল ছবি।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে চলছে লকডাউন এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশে আমদানীকৃত পণ্যভর্তি কন্টেইনার প্রায় একমাস খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে।  এতে শতকোটি টাকার পণ্য বন্দরে আটকা পড়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় আমদানীকৃত অনেক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় এমনিতেই তারা বিশাল অংকের পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় আছেন।
এদিকে  বিশাল অংকের বন্দর, শিপিং ও বেসরকারি ডিপো চার্জও বাণিজ্যিক আমদানীকারকদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এজন্য তাদের পণ্য খালাস বন্ধ রাখার সময়টুকুর বন্দর, শিপিং ও বেসরকারি ডিপো চার্জ মওকুফ চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। গত ১২ এপ্রিল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ সাক্ষরিত এক চিঠিতে নৌমন্ত্রী বরাবর এ আবেদন করা হয়।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প কারখানাকে টিকিয়ে রাখতে এ খাতে বিপুল অঙ্কের প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। তবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের স্বার্থ সুরক্ষায় তেমন কোন উদ্যোগ নেই। উপরন্তু বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্য খালাসে এনবিআরের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় বন্দরে তাদের শত শত কোটি টাকার পণ্য আটকা পড়েছে। এতে একদিকে যেমন বন্দরে কন্টেনার জট বাড়ছে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কন্টেনারগুলোর ওপর প্রতিদিন বন্দর, শিপিং ও বেসরকারী ডিপো চার্জ বাড়ছে। এতে তাদের বিনিয়োগ (পুঁজি) ধ্বংস হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে তারা পণ্য আমদানির সক্ষমতা হারিয়ে ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হবেন। এমনকি তাদের অনেকের পথে বসারও ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে।
অথচ বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্যের একটি বড় অংশ শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে তারা নিঃস্ব হয়ে পথে বসলে শিল্প ক্ষেত্রে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতি বছর পাওয়া শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হবে।
বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কন্টেনারগুলো খালাসে এনবিআরের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তাদের শত শত কোটি টাকার পণ্য বন্দরে আটকা আছে। এরই মধ্যে গত ২৪ মার্চ এনবিআরের অফিস আদেশে (আদেশ নং ০৮.০১.০০০০.০১১.০৯.০১৮.১৯-১৭৯) সাধারণ ছুটি চলাকালীন সময়ে আমদানিকৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, জরুরী চিকিৎসা, অন্যান্য সেবা সামগ্রী শুল্কায়নসহ খালাস প্রদান এবং রপ্তানি ও ইপিজেডের পণ্য চালান শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে এনবিআরের নতুন অফিস আদেশ (১৭(০৩) শূ:নী: ও বা:/২০১৩/১৩৮ তাং ৩০.০৩.২০২) এর মাধ্যমে নতুন পণ্য সংযুক্ত করা হয়। এগুলো হলো- শিল্পের কাঁচামাল ও সরকারী/বেসরকারী/স্বায়ত্তশাসিত আমদানি পণ্য। তবে কমিশনার অব কাস্টমস, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক আমদানিকারক কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্য শুল্কায়নসহ খালাস বন্ধ রাখে।
পরবর্তীতে এনবিআরের নতুন অফিস আদেশে (১৭(০৩) শূ:নী: ও বা:/২০১৩/১৪০ তাং ০৭.০৪.২০২০ তারিখে- এর মাধ্যমে বেসরকারী আমদানি কথাটি বাদ দিয়ে আধাসরকারী সংযুক্ত করে নতুন পণ্য যেমন মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ, পোল্ট্রি/ডেইরি/মৎস্য শিল্পের খাদ্য ও উপকরণ এবং কূটনৈতিক সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য সংযুক্ত করে তা শুল্কায়নসহ খালাস করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্য শুল্কায়নসহ খালাস করার ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালকের (ট্রাফিক) দফতর কর্তৃক জারিকৃত বিজ্ঞপ্তির (০৫/২০২০ তারিখ ০৫.০৪.২০২০) মাধ্যমে জানানো হয়েছে, সরকার কর্তৃক ঘোষিত ছুটি চলাকালীন সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব কন্টেনার জাহাজ আগমন করেছে/করবে, সেসব জাহাজের মাধ্যমে পরিবাহিত কন্টেনার কেবলমাত্র ছুটিকালীন সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা হলে তার বিপরীতে প্রদত্ত/প্রদেয় বন্দরের স্টোর রেন্ট সম্পূর্ণ (১০০%) মওকুফ/ছাড়যোগ্য হবে। অথচ এনবিআরের নতুন অফিস আদেশের কারণে বাণিজ্যিক আমদানিকারদের আমদানিকৃত কন্টেনারগুলোর পণ্য কমিশনার অব কাস্টম, চট্টগ্রাম শুল্কায়নসহ খালাস করছে না। এতে যেমন বন্দরে কন্টেনার জট বাড়ছে, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদানকৃত ছাড় থেকে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা মওকুফ পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের আমদানিকৃত অনেক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য এরই মধ্যে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে তাদের বিশাল অংকের পুঁজি গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ ট্রেডের সঙ্গে জড়িত বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারাবে। তাদের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান (যাদের নিজেদের আমদানির আইআরসি নেই); যারা আমদানিকারক থেকে পণ্য কিংবা ক্ষুদ্র শিল্পের উপকরণ সংগ্রহ করে উৎপাদন পরিচালনা করে থাকে তাদের শিল্প কারখানা বন্ধ হবে। এতে বাজারে পণ্য ঘাটতি দেখা দেবে, পণ্যের দাম বাড়বে এবং জনগণের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App