×

সারাদেশ

গাজীপুরের ফোর মার্ডারে জড়িত গ্রেপ্তার আরো ৫

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০, ০৭:২১ পিএম

গাজীপুরের ফোর মার্ডারে জড়িত গ্রেপ্তার আরো ৫
গাজীপুরের ফোর মার্ডারে জড়িত গ্রেপ্তার আরো ৫

উদ্ধার করা হত্যাকাণ্ড পরিচালনার সময় আমিদের ব্যবহৃত রক্তমাখা বস্ত্র, লুট করা টাকা ও স্বর্ণালংকার

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের একটি বাড়িতে একই পরিবারের চারজনকে হত্যার ঘটনায় পারভেজ নামে একজনকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশের তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আগেই জানিয়েছিল। তদন্তের বরাত দিয়ে সংস্থাটি বলছিল, ১৭ বছরের কিশোর পারভেজ মুঠোফোন চুরি করতে রাতের আঁধারে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল। তারপর একে একে কুপিয়েছে বাড়ির চার বাসিন্দাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় ধর্ষণ করেছে দুই কিশোরী বোনকে। শেষমেশ ছুরি দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রত্যেকের। এই নির্মমতা থেকে রেহাই পায়নি আট বছরের প্রতিবন্ধী শিশুও। তবে পিবিআই এর সঙ্গে সমন্বয়হীনতার বিষয়টি র‌্যাব স্বীকার না করলেও সংস্থাটির তদন্তে উঠে এসেছে নৃশংস এ খুনের ঘটনার ভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিশোর হলেও পারভেজের প্রখর অপরাধ মস্তিষ্কের কাহিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিবিআইয়ের কাছে সমস্ত ঘটনা একা ঘটিয়েছে স্বীকার করে এ কিশোর জবানবন্দী দিলেও আসলে এ কাজে তার সঙ্গে ছিলেন বাবা মো. কাজিম উদ্দিনসহ (৫০) আরো ৮-৯ জন। ধর্ষণের ঘটনাও ঘটান বাবা ছেলে দুজন মিলেই। তবে ধরা পড়ায় সে সমস্ত দোষ নিজের কাধে টেনে নেয়। আর এর পেছনে তার মূল কারণ ছিল তার বয়স। পারভেজ বুঝতে পেরেছিল বা তাকে বোঝানো হয়েছিল তার বয়সের কারণে এ ঘটনায় অনেক ছাড় পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ এর আগেও ২০১৮ সালে এই কিশোর তার চাচার এক ভাড়াটের সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় হওয়া মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দেয়া হয়েছে। ৯ মাস জেল খাটার পর কিছুদিন আগে সে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলার কক্ষ থেকে একই পরিবারের চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই চারজন হলেন- ফাতেমা আক্তার (৪০), তার বড় মেয়ে সাবরিনা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে শাওরিন (১২) ও ছোট ছেলে ফাদিল সামদানি (৮)। পরের দিন নিহত গৃহবধূর শ্বশুর আবুল হোসেন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তিদের আসামি করে শ্রীপুর মডেল থানায় মামলা করেন। বুধবার ( ২৯ এপ্রিল) এ ঘটনায় আরো ৫ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিং করা হয়। সে সময় র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, এ খুনের ঘটনায় আরো ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- কাজিম উদ্দিন (৫০), হানিফ(৩২), বশির (২৬), হেলাল (৩০) ও এলাহি মিয়া (৩৫)। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। সে সময় ভিকটিমের বাড়ি থেকে লুট করা নগদ ৩০ হাজার টাকা ও ১টি আংটিসহ আসামিদের রক্তমাখা পরিধেয় বস্ত্র যথাক্রমে ১টি হলুদ রংয়ের গেঞ্জি, ১টি জিন্স প্যান্ট এবং ৩টি লুঙ্গি উদ্ধার করা হয়। তিনি আরো বলেন, এর আগেও গ্রেপ্তারকৃত কাজিমের ছেলে পারভেজ আনুমানিক দেড় মাস আগে সন্ধ্যার দিকে গোপনে ভিকটিমের বাড়ির খাটের নিচে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গৃহকত্রী কর্তৃক ধৃত হয়েছিল। সে ধর্ষণসহ হত্যা মামলার আসামি বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার ও তাদের অন্যান্য সঙ্গী সাথিরা উক্ত বাড়ির সামনে কেরামবোর্ড খেলার নামে ভিকটিমদের ইভটিজিংও করতো। গ্রেপ্তারকৃতরা ঘটনার কয়েকদিন আগে জানতে পারে যে, কাজল মালয়েশিয়া থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ২০/২২ লাখ টাকা পাঠিয়েছে এমনি একটি ধারনার বশবর্তী হয়ে ঘটনার ৫/৭ দিন আগে গ্রেপ্তারকৃত কাজিম ও হানিফ একত্রিত হয়ে কাজলের বাড়িতে ডাকাতির পরিকল্পনা করে। অতঃপর অন্য আসামি বশির, হেলাল, এলাহি ও অন্যান্যদেরকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে। এদের দলে কাজিম এর ছেলে পারভেজও অন্তর্ভূক্ত ছিল বলে জানায়। গ্রেপ্তারকৃতরা আরো জানায়, তাদের আয়ের মাধ্যমে নেশা ও জুয়ার টাকা সংকুলান হচ্ছিল না বিধায় তারা এ অপরাধ সংগঠনে যুক্ত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ওই বাড়ির পিছনের এলাকায় জড়ো হয়। প্রথমে পারভেজ ভেন্টিলেটর দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। এছাড়া হানিফ মাদারগাছ ও পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে সিড়ির ঢাকনা খুলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। অতঃপর অন্যদের প্রবেশের জন্য বাড়ির পিছনের ছোট গেট খুলে দেয়া হয়। [caption id="attachment_217886" align="aligncenter" width="700"] উদ্ধার করা হত্যাকাণ্ড পরিচালনার সময় আমিদের ব্যবহৃত রক্তমাখা বস্ত্র, লুট করা টাকা ও স্বর্ণালংকার[/caption] কাজিম, হেলাল, বশির, এলাহি ও আরো কয়েকজন পিছনের গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। কাজিম ও হেলালসহ তিনজন প্রথমে ফাতেমার ঘরে ঢুকে এবং কাজিমের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফাতেমাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাগুলো দিতে বলে। ফাতেমা এত টাকা নেই বলে জানায়। অতঃপর ফাতেমা তার রুমের স্টিলের শোকেসের উপর রাখা টেলিভিশনের নিচে চাপা দেয়া টাকা (৩০ হাজার) বের করে দেয়। পরবর্তীতে ফাতেমার স্বর্ণালংকারগুলো ছিনিয়ে নেয় ও পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অন্যান্য রুমেও লুটতরাজ চলতে থাকে। আসামি বশির ও এলাহিসহ আরো একজন ভিকটিম নুরাকে তাদের হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গলার চেইন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। তাকেও পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়। এছাড়া আসামি বশিরসহ আরো একজন ফাতেমার ছোট মেয়ে হাওয়ারিনকেও পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। আসামি পারভেজও বর্ণিত হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণে অংশগ্রহণ করে। ধৃত আসামিরা তাদের আরও কয়েকজন সক্রিয় সহযোগির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ফাতেমা ও তার মেয়েরা গ্রেপ্তারকৃতদের কয়েকজনকে চিনে ফেলায় তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও গলাকেটে ভিকটিমদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। তবে, সর্বশেষে প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকে হত্যা করা নিয়ে আসামিদের ভিতর দ্বীধা-দ্বন্ধ ও সংশয় তৈরী হয়। কিন্তু কোন প্রকার স্বাক্ষী যেন না থাকে সে জন্য প্রতিবন্ধী শিশু ফাদিলকেও হত্যা করা হয়। লুন্ঠনকৃত মালামাল ও টাকা কাজিম নিয়ে নেয় ও সুবিধাজনক সময়ে পরস্পরকে বন্টন করবে বলে বাকীদের জানায়। পারভেজ সব একাই করেছে প্রাথমিক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে রয়েছে। এ ঘটনায় তদন্তে সমন্বয়হীনতা ছিল এমন প্রশ্নর উত্তরে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান এমনটা মনে করেছেন না তারা। তবে পারভেজকে খুব ধূর্ত প্রকৃতির মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনায় আরো কয়েকজনের সংশ্রিষ্টতার নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App