×

জাতীয়

করোনার প্রভাবে সক্রিয় অপেশাদার অপরাধীরাও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১১:৩৩ এএম

করোনার প্রভাবে সক্রিয় অপেশাদার অপরাধীরাও

প্রতীকী ছবি

করোনো ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে কার্যত পুরো দেশ লকডাউনে। সরকারি নির্দেশনা মেনে অধিকাংশ মানুষই ঘরে থাকছেন। জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সব কিছুই বন্ধ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও করোনা মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করছে। কিন্তু এরপরেও থেমে নেই অপরাধ। করোনা পরিস্থিতিতে পেশাদার অপরাধী নয় এমন লোকও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। তারা হত্যার মতো অপরাধও করছেন। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সংখ্যা তত্তে¡ করোনা পরিস্থিতিতে বেশি আপরাধ না হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু করোনাকালের পরিধি বাড়ার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে। এ সময় যত দীর্ঘ হবে, পরিস্থিতিও পাল্টাতে থাকবে। অপরাধ বাড়ার পাশাপাশি পাল্টাবে এর ধরনও। তবে এ মুহূর্তে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাও ঘাবড়ানোর মতো হতে পারে। ইঙ্গিতবহ হতে পারে সামনের দিনগুলোর জন্য। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও প্রশাসনকে নিতে হবে সঠিক পরিকল্পনা। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পেশার মানুষদের পাশে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন ১০তলা একটি ভবন থেকে আনোয়ার হোসেন (৫৫) নামে কেয়ারটেকারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে খুনের ঘটনায় অংশ নেয় তারই দীর্ঘদিনের পরিচিত ও আস্থাভাজন ওই ভবনের পাঁচ নির্মাণশ্রমিক। আরো জানা যায়, দেশে করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় ভবনের নির্মাণকাজ। কিন্তু, পাওনা মজুরি না মেলায় তারা টাকার প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নেয় ভবনের পানির পাম্প ও বেশ কয়েকটি নতুন বৈদ্যুতিক তারের কয়েল চুরি করে বিক্রি করার। কিন্তু, তাদের বিবেচনায় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কেয়ারটেকার মো. আনোয়ার হোসেন। ঘটনাচক্রে খুন হন আনোয়ার। এদিকে, পুরো দেশ বন্ধ ঘোষণার পরের দিন ২৭ মার্চ রাজধানীর রমনা থানা এলাকায় নেশার টাকা দেয়া-নেয়াকে কেন্দ্র করে ঘটে খুনের ঘটনা। মাস্ক পরিধানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোহাম্মদপুর ও খিলগাঁওয়ে ওষুধের দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। যদিও এসব ঘটনায় অপরাধীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় দ্রুত সময়ের মধ্যেই। তবে গণমাধ্যমে এসব বিষয় এলে সুশীল সমাজ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা চলতে থাকে। শেরে বাংলা নগরের ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়, করোনা পরিস্থিতি গরিব ও অপেশাদার মানুষকেও অপরাধে জড়িয়ে ফেলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান ক্রিমিনোলজি (ঢাবি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, একটি ঘটনাও অনেক বড় কিছুর ইঙ্গিত দেয়। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক খাতে ৩০-৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। এছাড়া ও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ দিন-মজুরিসহ বিভিন্ন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। এরা সবাই নি¤œআয়ের মানুষ। দিন এনে দিন খান। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে তারা কর্মহীন হয়ে অর্থাভাবে নানা অপরাধ-অপকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে। রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি আরো বলেন, এমন পরিস্থিতিতে প্রাতিষ্ঠানিক খাতেই যে দুর্দশার চিত্র আমরা দেখছি, সেখানে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা আগে থেকেই। শুধু অল্পকিছু টাকার জন্য অপরাধী হয়ে গেল কয়েকজন। তাই এসব নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও প্রশাসনকে আরো কার্যকরী পরিকল্পনা নিতে হবে। বাড়াতে হবে সহায়তার হাত। তবে এদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে ত্রাণসহ নানা সুবিধা নিয়ে। এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি মিডিয়া এন্ড পিআর সোহেল রানা ভোরের কাগজকে জানান, কিছু কিছু অপরাধের হার বাড়তে পারে এ বিষয়ে পুলিশ অবগত রয়েছে। অপরাধের কিছু নতুন ট্রেন্ডও আমাদের সামনে আসতে পারে। আমরা জণগণের জীবন ও সম্পত্তি সুরক্ষিত রাখতে এই ধরনের অপরাধের সমাধানে সম্ভাব্য পরিকল্পনা তৈরি করে তা নির্মূলে কাজ করছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App