×

সাহিত্য

একাত্তরের চেয়েও এর ভয়াবহতা বেশি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১২:৩২ পিএম

একাত্তরের চেয়েও এর ভয়াবহতা বেশি

চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী

চিত্রশিল্পী আবুল বারক আলভী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় ছাপচিত্র বিভাগের শিক্ষক তিনি। অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং নির্মমভাবে নির্যাতিত হন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় বেঁচে ফেরেন তিনি। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সংবিধান অলঙ্করণেও অন্যদের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। কিন্তু শিল্পী পরিচয়ের কাছে মুক্তিযোদ্ধা আলভী নামটা যেন চাপা পড়ে যায় খানিকটা। তার প্রধান পরিচয় হয়ে ওঠে তিনি একজন শিল্পী। নিভৃতচারী এই শিল্পী প্রকৃতি থেকেই খুঁজে নেন ফর্ম, শেপ, রং আর বৈচিত্র্যকে। আর তা পর্যবেক্ষণ করেন নিবিড়ভাবে। প্রকৃতির নিজস্ব কম্পোজিশন তাকে প্রশান্তি দেয়। তাই তার ক্যানভাসে নীল আর সবুজে বাংলার জলাভূমির শ্যাওলাগন্ধ ও ভেজা মাটির স্পর্শ পাওয়া যায়। তার প্রিয় মাধ্যম জলরং, অ্যাক্রেলিক, গোয়াশ, তেলরঙে করা অধিকাংশ কাজে প্রকৃতির শান্ত-স্নিগ্ধ ভাবকে ফুটিয়ে তোলেন। পছন্দ করেন নিভৃতে কাজ করতে। অনেকের ভিড়ে আঁকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। যদিও বর্তমানে এ অভ্যাস অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। প্রথম দিকে তিনি রিয়েলিস্টিক কাজ করলেও ধীরে ধীরে ইম্প্রেশনিস্ট, কিউবিস্ট ধারায় কাজ করছেন। বিমূর্তায়নের মধ্য দিয়ে তার শিল্পের যেন সার্থকতা খুঁজে পান। নির্জনতা প্রিয় এ চিত্রশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধার করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একেবারেই গৃহবন্দি আছি। যেহেতু বাসা থেকেই বেরুনো হচ্ছে না, তাই প্রথম দিকে কাজ করেছিলাম। এখন একেবারে পুরোটাই গৃহবন্দি। আমার বিল্ডিংটা লকডাউন করা হয়েছে। একজন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। যে কারণে বাড়ি থেকে বেরুনো এবং ঢোকা সবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। বই পড়া, টেলিভিশন দেখা ছাড়া তো আর কিচ্ছুু করার নেই। নানা ধরনের পুরনো বই পড়ছি। যেগুলো এতদিন পড়া হয়নি। ছবি আঁকায়ও মনোযোগ দিতে পারছি না। অথচ চারদিকে নির্জনতা। ছবি আঁকার মনোরম সময়। কিন্তু মন বসাতে পারছি না। তাছাড়া আমি তো ঘরে বসে থাকার মানুষ না। কিন্তু ঘরে বসে থাকার অভ্যাসটা হয়ে গেছে। স্মৃতিচারণ করে এই মুক্তিযোদ্ধা আরো বলেন, একাত্তরের আমি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধ আর এখনকার যুদ্ধ অন্যরকম। একাত্তরের চেয়েও এ যুদ্ধের ভয়াবহতা বেশি। এ রকম সময়ের মুখোমুখি আর কখনো পড়িনি। এ আতঙ্ক একদিন-দুদিনে শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। করোনার অভিঘাতে কতটা সামাজিক পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে করছেন? বিশিষ্ট এই শিক্ষক বলেন, ব্যাপক সামাজিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে। একমাত্র এই পরিস্থিতির কারণেই তো মানুষ আজ একেবারেই গৃহবন্দি জীবনযাপন করছে। শুরুর দিকে দেখেছি চায়ের দোকানগুলো যখনই খোলা থাকত লোকজন ভিড় করত। দেখে আতঙ্কিত হচ্ছিলাম। আমার পরামর্শ হচ্ছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া বের না হলে নিজের জন্য মঙ্গল এবং সবার জন্য মঙ্গল। দেশের জন্য মঙ্গল তো বটেই। আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করেছি- খুব বয়সীরা বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না, তরুণ যুবারাই বেরুচ্ছেন। করোনার ভয়াবহতার কথা তাদের বুঝতে হবে। আর যারা শ্রমজীবী তারাও বেরুচ্ছেন। বিশেষ করে দেশের এমন পরিস্থিতিতে যেসব মানুষ করোনার ভয়াবহতা জানার পরও রাস্তায় নামছেন তাদের দেখে খারাপ লাগছে। বাঁচার জন্যই তো বের হচ্ছেন। তাদের বিপন্নতার কথা বেশি করে ভাবতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App