×

সারাদেশ

আনোয়ারা উপকূলে পাথর আছে বাঁধ নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২০, ০১:২৫ পিএম

আনোয়ারা উপকূলে পাথর আছে বাঁধ নেই

ছবি: প্রতিনিধি

আজ বুধবার ভয়াল ২৯ এপ্রিল। ১৯৯১ সালের এদিনে "ম্যারি এন" নামক কালনাগীনি ভয়াবহ প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে আনোয়ারা উপকুলীয় এলাকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ নিহত এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় হাজার কোটি টাকার সম্পদ, এক লক্ষ মানুষ তাদের সর্বস্ব হারায়। দীর্ঘ ২৯ বছর পেরিয়ে গেলেও আনোয়ারা উপকূলের মানুষের স্বজন হারানোর আহজারী থামেনি এখনো। ৯১-এর এই ভয়াল ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। নিহতদের লাশ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বার বার ফিরে আসে তাদের জীবনে।

ঘূর্ণিঝড়ে দেশের সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকা আনোয়ারাতেই সেদিন ২০ হাজার মানুষ নিহত এবং কয়েকশ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। সেই দিন এদেশের মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে অবলোকন করেছে প্রকৃতির অমানবিক তান্ডব। কিন্তু ভয়াল এই দিনটির ৩০ বছর পার হলেও এখনো অরক্ষিত আনোয়ারা উপকূল। সরকার গত বছর উপকূল রক্ষায় আনোয়ারায় ৪ শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধে গহিরা বারআউলিয়া অংশে প্রায় ২ শ মিটার এলাকায় বাঁধের কোন অস্থিত্ব খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। পাথর গুলো পড়ে আছে। জোয়ারের পানি ঢুকছে আর বের হচ্ছে। এতে করে আনোয়ারা উপকূলের মানুষের শংখা যেন কাটছেইনা।

উপকূলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাযায়, গহিরা বারআউলিয়া এলাকায় প্রায় দুইশ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বেডিবাঁধের পাশে দেয়া পাথর গুলো পড়ে আছে। যার ফলে স্থানীয় বারআউলিয়া জামে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, বসত ঘর ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান হুমকীর মুখে পড়ে। শুধু তাইনয় রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া বাতিঘর,ফকির হাট ও সরেঙ্গা যে সব অংশে পাথর নেই এসব এলাকার বিভিন্ন অংশের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখাদিয়েছে। বারআউলিয়া এলাকায় খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। বর্তমানে ভাঙনের কবলে পড়ে ১৬ ফুট প্রস্তের বেড়িবাঁধের ২ শত মিটার এলাকার সম্পন্ন বিলিন হয়ে যায়। বেডিবাঁধের পাশে দেয়া শুধু পাথর গুলোই রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ নির্মানের সময় সিডিউল অনুযায়ী বাঁধ তৈরী না করা, বাঁধের নিকট থেকে মাটিকাটা, বাধেঁর মাটি না চাপানো, মাটির সাথে ৭০ শতাংশ বালি দেয়ায় বাঁধ নির্মানের বছর পার না হতেই বাঁধটি বিলিন হয়ে যায়। আগামী বর্ষার আগে বেডিবাঁধটির ভাঙনের অংশে মেরামত না করলে মানুষ দূর্ভোগে পড়বে।

স্থানীয় বাইগ্যার ঘাট এলাকার বাসিন্দা ছালেহ আহমদ (৫৫) জানায়, স্থানীয় কিছু নেতার জোগসাজশে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বেড়িবাঁধের কাজ করার কারণে নির্মানের এক বছর যেতে না যেতেই বাঁধটি বিলিন হয়ে যায়। এতে করে স্থানীয় মসজিদ,মাদ্রাসা, কবরস্থান, বসত বাড়ী ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায়,গত অর্থবছরে রায়পুর ইউনিয়নের বাইগ্যার ঘাট থেকে ছিপাতলী ঘাট পর্যন্ত ১৯৪২ মিটার বেড়িবাঁধের ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাহের এণ্ড ব্রাদার্স।

স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম জানান, রায়পুর ইউনিয়নের আলোচিত এক নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে বেড়িবাঁধের মাটি কাটা ও ব্লক নির্মান কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়ম চলে আসছে। যার ফলে এলাকার হাজার হাজার মানুষের মাঝে ক্ষোভ আছে। শুধু তাইনয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো কার্য্যাদেশ মোতাবেক ও যথাসময়ে কাজ না করার করণে উপকূলের হাজার হাজার মানুষ আগামী বর্ষায় জোয়ারের পানিতে প্রতিনিয়ত দূর্ভোগের শিকার হবে। তাই বর্ষার আগেই বেডিবাঁধটি মেরামত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হবে।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অলি আফাজ চৌধুরীর মুঠো ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App