×

স্বাস্থ্য

সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২০, ১০:৩৩ এএম

সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে তার ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ করতে শুরু করেছে করোনা ভাইরাস। রাজধানী ঢাকায় এর ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ৫০৩ জনকে সংক্রমণ করেছে করোনা। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরেই এই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭৭ জন। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ জন। একই সঙ্গে সিলেট ও বরিশাল বিভাগে বসতি বিস্তৃত করছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। তবে চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রকোপ কিছুটা কমেছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগরে যেখানে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ১ হাজার ৬৮৩ জন রোগী সেখানে গতকাল শুক্রবার ৩৭৭ জন বেড়ে ২ হাজার ৬০ জন হয়েছে। অর্থাৎ সারাদেশে আক্রান্তের ৫০ দশমিক ৫৯ শতাংশ রোগীই ঢাকা মহানগরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার পরে উল্লেখযোগ্য হারে রোগী বেড়েছে কেবল নারায়ণগঞ্জে। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জন রোগী বেড়ে হয়েছে ৫৬৬ জন। অন্য ঝুঁকিপূর্ণ জেলা গাজীপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ২ জন বেড়ে হয়েছে ২৯২, কিশোরগঞ্জে একজন বেড়ে হয়েছে ১৮০। নরসিংদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোনো আক্রান্ত নেই। ফলে ১৪১ জন রোগী নিয়ে নরসিংদী সংক্রমণ সামাল দেয়ার চেষ্টা করছে। আর বিভাগওয়ারী দেখা গেছে, আগের দিনের তুলনায় গতকাল শুক্রবার শুধু সিলেটে দশমিক ২৮ শতাংশ এবং বরিশালে দশমিক ৫ শতাংশ আক্রান্তের পরিমাণ বেড়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে আগের দিনের চেয়ে গতকাল শুক্রবার আক্রান্তের পরিমাণ কমেছে দশমিক ৩২ শতাংশ। একইভাবে রংপুর বিভাগে দশমিক ৩, খুলনা বিভাগে দশমিক ১, রাজশাহী বিভাগে দশমিক ৭ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা মহানগরে পরীক্ষার সংখ্যা বেশি হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য এলাকায় বেশি করে নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় রোগীর সংখ্যা বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে না। টুকটাক যেখানে পরীক্ষা হচ্ছে সেখানেই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জকে করোনার এপিসেন্টার বলা হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকা মহানগরে সবচেয়ে বেশি। গতকাল পর্যন্ত দেশের রাজধানী শহরে রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকায় করোনা রোগী ঠেকানোই একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর এ কারণে ঢাকার বিপুল সংখ্যক লোক ঝুঁকিতে রয়েছেন।

দেশের অন্য যে কোনো জায়গার তুলনায় ঢাকা শহরটি বেশি জনাকীর্ণ। এসব এলাকায় লোকজনকে ঘরে থাকার কথা বললেও তারা তা শুনছেন না। ফলে মহানগরীর এলাকাগুলোতে করোনার সংখ্যা বাড়ছে। লকডাউন চলাকালীন লোকদের চলাচলের কারণে কি পরিমাণ মানুষ স্থানীয় সংক্রমণে পড়েছেন বা নতুন আক্রান্তরা কতজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন তা এখন নির্ধারণ করা শক্ত। এর ফলে সহসাই ঢাকাকে করোনা থেকে মুক্ত করা যাবে না বলেই অভিমত পাওয়া গেছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকাকে করোনার ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত করতে হলে বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যারিকেড দিয়ে পুরো অঞ্চলকে স্যানিটাইজ করতে হবে। দ্রুতগতিতে বাজার স্থানান্তর করতে হবে। সামাজিক দূরত্বের ব্যবস্থা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করাসহ বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাড়াতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত এলাকা ও ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে জ¦র, কাশি বা সর্দির মতো ফ্লু উপসর্গের রোগীদের চিহ্নিত করে পরীক্ষা করতে হবে। কারণ এসব রোগে আক্রান্তরা চিকিৎসার আওতায় আসছেন না। তাদের যেভাবেই হোক চিকিৎসাসহ পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্বাসকষ্ট থাকা অবস্থায় রোগীরা খুব দেরিতে চিকিৎসকের কাছে আসছেন। ফলে রোগীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। করোনায় অন্যতম লক্ষণ শ্বাসকষ্ট এবং এটি রোগীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। অথচ এসব রোগীকে আগেভাগে চিহ্নিত করে চিকিৎসকের কাছে আনলে শুধু অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়ে তোলা যায়। কিন্তু আক্রান্তরা যখন চিকিৎসকের কাছে আসেন তখন নিউমোনিয়া মারাত্মকভাবে সংক্রমণ করে। এতে তাদের জীবনকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। কাজেই এসব লক্ষণ পেলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে এবং তাতে রোগীর জীবন বাঁচানো যাবে। বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন, করোনা আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর হালকা লক্ষণ থাকে এবং বেশির ভাগের হাসপাতালের চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। তবে ভাইরাসটির বিস্তার রোধে আইসোলেশন বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখার দরকার হয়। আরো ১৫ শতাংশ রোগী কেবল সহায়ক এবং অক্সিজেন থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ করা যায়। ৫ শতাংশেরও কম রোগীর জন্য ক্রিটিকাল কেয়ার বিছানা বা ভেন্টিলেটর থেরাপির প্রয়োজন হয়। রেকর্ড সংখ্যক ৫ শতাধিক নতুন আক্রান্ত : দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ৫০৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬৮৯ জনে। এছাড়া করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৩১ জনে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৮৬ জনের। এর মধ্যে দেশে একদিনে সর্বাধিক ৫০৩ জনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় যা নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তা গতকালের চেয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৪ জনই ঢাকার : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর মিছিল প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩১ জনে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, নতুন করে যে ৪ জন মারা গেছেন তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা এবং তারা সবাই পুরুষ। তাদের সবার বয়স ৫১ থেকে ৬০-এর মধ্যে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরো ৪ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১২ জন। ২৪ ঘণ্টায় ১২৩ জনকে আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ঢাকা সিটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও করোনার হটস্পট হিসেবে ধরা হয় নারায়ণগঞ্জকে। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন রোগী। এছাড়া সেখান থেকে অন্যান্য জেলায় যাওয়ার পরও কয়েকজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এই ভাইরাসকে রুখতে সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া অন্য কোনো উপায় এখনও নেই। করোনার ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেল গঠন : করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য প্রচার, প্রেস ব্রিফিং, জনসচেতনতা বাড়াতে প্রচার, করোনা সংক্রান্ত ভুল তথ্য সংশোধন সংক্রান্ত বিষয় পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খানকে আহ্বায়ক এবং মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধানকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট মিডিয়া সেল গঠন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত এ সেল গত বৃহস্পতিবার থেকে কাজ শুরু করেছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) রীনা পারভীন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম-সচিব (জনস্বাস্থ্য) নীলুফার নাজনীন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়র সিস্টেম এনালিস্ট আহমেদ লতিফুল ইসলাম। এতে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কমিটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবকে অবহিত করবে। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে নিয়মিত ব্রিফিং ও সব ধরনের মিডিয়াকে জানাবে এ সেল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App