×

মুক্তচিন্তা

ঘরে বসে তারাবিহর নামাজ পড়ুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২০, ০৯:১২ পিএম

বাংলাদেশসহ বিশ্বে করোনা পরিস্থিতিতে রহমতের মাস রোজা এসেছে। এবার মসজিদে না গিয়ে তথা জনসমাগম এড়িয়ে ঘরে বসে তারাবিহ্র নামাজ পড়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মুসল্লিকে সরকারি এ নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। মাহে রমজানের অবিচ্ছেদ্য পালনীয় বিধান নামাজে তারাবিহ। প্রতিদিন নামাজে তারাবিহ্ আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা। যা অবশ্যই আদায় করতে হবে। রমজানে তারাবিহ্ নামাজে পূর্ণ এক খতম কুরআন শরিফ আদায় করা সুন্নাত হলেও তা সব অবস্থায় সর্বস্তরের মুসল্লিদের জন্য জরুরি নয়। বরং খতম তারাবিহ্র সুযোগ না থাকলে স্বাভাবিক নামাজের মতো বিভিন্ন সুরা দিয়েও নামাজ আদায় করা যায়। ‘তারাবিহ্’ শব্দের অর্থ আরাম ও প্রশান্তি। তাই তারাবিহ্র নামাজ পড়তে হবে ধীরে সুস্থে, তাড়াহুড়ো করে নয়। কারণ নামাজের মধ্যে একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতা না থাকলে তা নামাজই হয় না। মাহে রমজানে তারাবিহ্র নামাজ আদায় করা একটি বিশেষ ইবাদত। রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে তারাবিহ্র নামাজ আদায় করতে হয় না। তাই তারাবিহ্ নামাজের প্রতি যুব-বৃদ্ধ-কিশোরসহ সর্বস্তরের রোজাদার মুসলমানদের বিশেষ মনোযোগী হতে দেখা যায়। এটি একটি ভালো অভ্যাস। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের প্রতি মনোযোগী হতে পারলেই কামিয়াব। রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাস করতে পারলে সে অভ্যাস আর সহজে যাবে না। হজরত আবু হুরাইরা (রাদ্বি:) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলে করীম (দ.) ইরশাদ করেছেন “যে ব্যক্তি রমজান মাসের রাতে ঈমান ও নিবিড় সতর্কতাসহ (সওয়াবের উদ্দেশ্যে) নামাজ আদায় করবে, তাঁর পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে” (বুখারী মুসলিম)। ইমাম বায়হাকি ও তিরমিজি রইসুল মুফাসসিরিন হজরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাদ্বি:) থেকে বর্ণনা করেন যে, আমাদের প্রিয় নবী (দ.) মাহে রমজানে ২০ রাকাত তারাবিহ্র নামাজ আদায় করতেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত (হানাফি, শাফেয়ি, মালেকি ও হাম্বলি মাযহাব) এর সর্বসম্মত মতানুযায়ী এবং বিশ্বের সনিষ্ঠ মুসলিমদের সর্বসম্মত মত অনুসারে বিশ রাকাত তারাবিহ্র পূর্ণ নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ (ফতোয়ায়ে শামী)। তারাবিহ্ প্রতিদিন পড়তে হবে। নামাজে তারাবিহ্ ঐচ্ছিক নয়, আবশ্যিক। পারলে সুযোগ থাকলেই কেবল খতমসহ তারাবিহ্ পড়া ভালো। নচেৎ সুরা তারাবিহ্ই উত্তম। তাছাড়া খতমে তারাবিহ্ পড়ার জন্য যতটুকু সময় ও ধৈর্য প্রয়োজন মুসল্লিদের তেমন অবস্থা থাকে না। নামাজে কুরআন খতম করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে নামাজ শেষ করার চেষ্টা না করে সহজ পন্থা বেছে নিতে হবে। পূর্ণ মনোযোগসহ সুরা তারাবিহ্ দ্বারা নামাজ আদায় করা তাড়াহুড়ো করে খতমে তারাবিহ্ আয়োজনের চেয়ে অনেক উত্তম। নামাজে তারাবিহ্ সারা দেশে সব মসজিদে একই নিয়মে আদায় করার উদ্যোগ নেয়া যায়। নামাজে তারাবিহ্তে কুরআন খতম আদায়ের ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরামর্শ এতে গ্রহণ করা যায় কি-না ভেবে দেখার অনুরোধ করি। তা হচ্ছে প্রথম ৬ দিন দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিন এক পারা করে পড়ে লাইলাতুল কদরে ২৭ রমজান কুরআন খতম করার সরকারি পরামর্শটি সব মসজিদে একযোগে অনুসরণ করা যেতে পারে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে সব জায়গায় ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তারাবিহ্ নামাজ সহজে সঠিকভাবে পড়তে পারার জন্য এ নিয়ম সর্বোত্তম। এভাবে নামাজে তারাবিহ্র হক আদায় হবে। নামাজের ব্যাপারে একটি নির্দেশনা হলো লা সালাতা ইল্লা বিহুযুরিল ক্বালব অর্থাৎ একাগ্রতা ও নিষ্ঠা ছাড়া কোনো নামাজ হয় না। নামাজে এর ব্যতিক্রম হলে তা অন্তঃসারশূন্য ইবাদতে পর্যবসিত হবে। কুরআন মজিদে সুরা মুয্যাম্মিলে স্পষ্টতই বলা হয়েছে ওয়া রাত্তিলিল কুরআনা তারতিলা তোমরা নির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতিতে ধীরে সুস্থে কুরআন মজিদ তেলাওয়াত কর। তাই কুরআনের এই নির্দেশনা মেনে নিয়েই যথাযথ নিয়মে যৌক্তিক সময় নিয়ে হয়তো খতমে তারাবিহ্ পড়তে হবে আর তা সম্ভব না হলে সুরা তারাবিহ্ই অধিক শ্রেয়। সোশ্যাল ডিস্টেন্স বা সামাজিক দূরত্ব মেনে এবার ঘরে বসে তারাবিহ্র নামাজ আদায় করুন। এতে সওয়াব মোটেই কম হবে না। লেখক : সাংবাদিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App