×

জাতীয়

রানাপ্লাজা ট্রাজেডি: আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপুরণের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০৭:১৫ পিএম

রানাপ্লাজা ট্রাজেডি: আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপুরণের দাবি

রানাপ্লাজা ট্রাজেডি। ফাইল ছবি।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবহেলা জনিত মৃত্যুতে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে শ্রম আইন সংশোধনের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারি ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ)।

জি-স্কপ-এর যুগ্ন সমন্বয়ক কামরূল আহসান ও আব্দুল ওয়াহেদ ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল তৈরী পোষাক কারখানায় শতাব্দীর ভয়াবহ বিপর্যয় তথা রানাপ্লাজা ভবন ধ্বসে একহাজার একশত চৌত্রিশ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং আড়াই সহ্স্রাধিক শ্রমিক মারাত্বক আহত হওয়ার ঘটনার শোকাবহ সপ্তম বার্ষিকীতে গভীর বেদনাময় চিত্তে স্মরণ, শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সমব্যথিদের সমবেদনা জানিয়েছেন ।

বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারি ঐক্যপরিষদ নেতৃবৃন্দ বলেন, অবৈধ ভাবে নির্মিত ও ত্রুটিপুর্ণ ভবনে পাঁচটি পোষাক কারখানার প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিককে তাদের আপত্তি সত্বেও মালিকপক্ষ জোর পুর্বক কাজে যোগদানে বাধ্য করে তাদের সকলকে ঐ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় নিপতিত করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো বড় শিল্প দুর্ঘটনা এটিই প্রথম, যা শিল্প দুর্ঘটনার ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ও বিয়োগান্তক অধ্যায়। ঐ ভয়াবহ শিল্প দূর্ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের তৈরী পোষাক শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের করুণ কর্মপরিবেশর চিত্র সামনে নিয়ে আসে এবং বিরুপ ধারণা তৈরী করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভবন ধ্বসে বেঁচে যাওয়া আহতদের মাত্র ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক কাজে যোগ দিতে সক্ষম হয়েছেন। বেঁচে যাওয়া ৫১ শতাংশ আহত শ্রমিকের স্বাস্থ্যের উন্নতি না হওয়ায় কাজে যোগ দিতে সক্ষম হননি। ২০ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিকের অবস্থা এতই খারাপ যে তারা আর কোনো দিন সুস্থ্য জীবনে ফিরে যাবেন তার অবস্থা নেই। আরো ১০ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক ট্রমাতে ভুগছেন বলে একটি গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে। বেঁচে যাওয়া আহত শ্রমিকরা চরম অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ক্ষতিপুরণ প্রদানের দির্ঘসুত্রিতা এবং ভাগে ভাগে প্রদানের কারনে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের কর্মসুচি গতি হারাচ্ছে। আহতদের চিকিৎসা উপযোগী প্রতিশ্রুত হাসপাতালের কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার পর গত সাতবছরে আহতদের সুচিকিৎসা না হওয়ায় তা এখন স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

বিৃতিতে রানাপ্লাজা আহতদের সুচিকিৎসা দেয়া এবং তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহে আর্থিক জোগান ও স্থায়ী রেশন কার্ড নিশ্চিত করা, আইন সংশোধন করে রানাপ্লাজা ঘটনার জন্য দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, কর্মক্ষেত্রে অবহেলাজনিত মৃত্যুতে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপুরণ নির্ধারণ করে শ্রম আইন সংশোধন, ২৪ এপ্রিলকে রাষ্ট্রিয়ভাবে গার্মেন্টস শ্রমিক শোক দিবস ঘোষণা, নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিবেদী নির্মাণ ও ভবনধ্বসের স্থানে স্মৃতি চত্বর করা এবং নিহত শ্রমিকদের কবর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্ব আজ করোনা ভাইরাস কভিড-১৯ মহামারি আক্রান্ত। এই পরিস্থিতে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় জনস্বাস্থ্য বিভাগ ব্যক্তি দুরত্ব বজায় রেখে সামাজিক সুরক্ষা বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানীমুখি শিল্পের জন্য সরকার ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা ব্যবস্থা নিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা দ্রুত পরিশোধ এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার সুযোগ করে দিতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সাধারণ ছুটি চলাকালিন কোনো কোনো কারখানার মালিক কারখানা লে-অফ ঘোষণা এবং শ্রমিক ছাঁটাই করেছেন যা বে-আইনী। আমরা দুর্যোগকালীন এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানাই।

বিবৃতিতে কোভিড-১৯, স্বাস্থ্য বিধি বাধ্যকতা চলমান থাকায় রানা প্লাজা দিবসের কর্মসুচিতে জন-জমায়েত না করে স্মরণবেদী ও কবরস্থানে সিমিত উপস্থিতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে বলে জানানো হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App