×

জাতীয়

রমজানে নিরাপদ খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করার নির্দেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০৩:৩২ পিএম

রমজানে নিরাপদ খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করার নির্দেশ

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। ফাইল ছবি।

পবিত্র রমজানে সেহরি ও ইফতারে ধর্মপ্রাণ রোযাদারদের জন্য নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য পণ্য নিশ্চিত করতে বিএসটিআইয়ের সার্ভিলেন্স কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। পাশাপাশি তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মান পরীক্ষাসহ প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য জরুরি সেবা চালু রাখার নির্দেশ দেন।

আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে ভোক্তা সাধারণের জন্য নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য পণ্য নিশ্চিতকরণ, শিল্পখাতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ যথাযথ বাস্তবায়ন ও করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ বিষয়ক সভায় শিল্পমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার এই নির্দেশনা দেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন।

শিল্পসচিব মো. আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশনের (বিএসসি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) ও বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) মহাপরিচালক, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, রমজান উপলক্ষে বিভিন্ন সুপার শপ এবং চালু থাকা খাদ্যপণ্যের দোকানগুলোতে সার্ভিলেন্স বাড়িয়ে নিরাপদ খাদ্য পণ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হবে । পণ্যের উৎপাদক, ক্রেতা-ভোক্তা সাধারণসহ সবাইকে মানসম্পন্ন খাদ্য পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহারের বিষয়ে বিএসটিআই সম্প্রতি যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, তার আওতা বাড়াতে হবে। তিনি খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গুণগতমানের পণ্য উৎপাদন এবং বিপণনের জন্য বিএসটিআইয়ের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক পত্র প্রেরণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার এবং মোবাইল এসএমএস প্রেরণ করে সবাইকে সচেতন করার পরামর্শ দেন।একই সাথে তিনি রমজান উপলক্ষে ইফতার ও সেহরিতে অধিকাহারে ব্যবহৃত যেসব পণ্যের নমুনা ইতিমধ্যে বাজার থেকে সংগ্রহ করে বিএসটিআইয়ের ল্যাবরেটরীতে টেস্টিং চলছে, সেগুলোর ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করে গণমাধ্যমের সহায়তায় ভোক্তা সাধারণকে জানিয়ে দেয়া নির্দেশনা দেন।

জনাব হুমায়ূন বলেন, পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোক্তা সাধারণের সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সুপার শপগুলোতে আখ থেকে উৎপাদিত দেশীয় গুণগতমানের চিনি সহজপ্রাপ্য করতে হবে। একই সাথে এসব সুপার শপে চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত মসুর ডাল, কেরু এন্ড কোম্পানির ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও 'সোনার দানা' জৈব সার বিপণনের জন্য তিনি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের প্রতি নির্দেশনা দেন।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের প্রতি ইঞ্চি আবাদি জমিতে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন । এর বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিসিআইসির আওতাধীন প্রতিটি সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন চালু রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিরন্তর কাজ করতে হবে। তিনি কৃষকপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে যেসব প্রয়াস নেয়া হয়েছে, তা অব্যাহত রাখার তাগিদ দেন । কৃষকদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, 'দেশে বর্তমানে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অধিক পরিমাণে ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। সুতরাং সার নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আপনারা উৎপাদন অব্যাহত রাখুন, শিল্প মন্ত্রণালয় আপনাদের চাহিদামাফিক সারের যোগান দেব।'

করোনার ফলে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এসব উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় ও বাজারজাতকরণে শিল্পমন্ত্রী পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা দেয়া হবে। তিনি এসএমই শিল্পোদ্যোক্তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে অর্থাৎ ই-কমার্স এর মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে সহযোগিতা বাড়াতে এসএমই ফাউন্ডেশনকে নির্দেশনা দিচ্ছি।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ক্ষুদ্র মাঝারি ও কুটির শিল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ যাতে শুধু ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তারা পান সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোন প্রকার দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। শিল্প প্রতিমন্ত্রী এ সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন চিনিকলগুলোর শ্রমিক,কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করার জন্য বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনকে নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাঠ পর্যায়ে লবণ উৎপাদন যাতে অব্যাহত থাকে এবং করোনার কারণে লবণ চাষীরা যাতে কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে বিসিককে সজাগ থাকতে হবে। প্রতিমন্ত্রী এসময় করোনার কারণে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকদের তৎপর থাকার নির্দেশনা প্রদান করেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক টেন্ডারের অধীনে দেশের মানসম্মত পণ্য ক্রয়ের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারি দপ্তরগুলো যাতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করে সেটি নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আরও তৎপর হতে হবে। এছাড়া, সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে অগ্রিম কর হতে অব্যাহতি প্রদান, সারের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারের ভর্তুকির অর্থ শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান এবং দেশীয় হালকা শিল্পের অনুকূলে ট্যাক্স অবকাঠামো প্রবর্তন করা বিষয়ে আসন্ন বাজেট অধিবেশনের পূর্বেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী। সভায় জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন ১৫টি চিনিকলে ৬৫ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি চিনি মজুদ রয়েছে। এছাড়া বিসিআইসির আওতাধীন সার কারখানা ও গোডাউনসমূহে বর্তমানে মোট ৯ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৩ মে. টন ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। গত বছর একই সময়ে ইউরিয়া সারের মোট মজুদের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৬৯ টন। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ২৫ লাখ ৫০ হাজার টন । ইতিমধ্যে প্রায় ২২ লাখ ৬৯ হাজার ৭১১ মে. টন সার কৃষকদের নিকট সরবরাহ করা হয়েছে।

দেশে এখন লবণেরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।করোনার প্রকোপের মাঝেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে লবণ মাঠ এবং লবণ মিলগুলোতে উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। চলতি লবণ মৌসুমের ২০ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার লবণ চাষী ১২ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করেছে, যা গত মৌসুমের এই সময়ের চেয়ে ৭০ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এ বছর লবণের মোট চাহিদা ছিল ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। ২২ এপ্রিল,২০২০ পর্যন্ত জাতীয় চাহিদা মিটিয়ে লবণ মাঠে উৎপাদন, লবণ মিলসহ লবণসহ সকল উৎস মিলে বর্তমানে দেশে ১১ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে। এছাড়াও দেশের সকল জেলার ডিলার, পাইকারী ও খুরচা বিক্রেতাপর্যায়ে আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য মজুদ রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে মজুদকৃত লবণ দিয়ে আগামী ১০ মাস পর্যন্ত অনায়াসে দেশের লবণের চাহিদা পূরণ করা যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App