×

জাতীয়

খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০৬:২৪ পিএম

খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবি
আগামীকাল ২৪ এপ্রিল ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড দিবস। ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট-রাজবন্দীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম বৃহষ্পতিবার (২৩ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে খাপড়া ওয়ার্ডের সব শহিদ ও যোদ্ধার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই আমাদের গণতান্ত্রিক ও বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ পর্ব। খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াই ইতিহাসের বিপ্লবী আখ্যান এবং ভবিষ্যতের দিশা। নেতৃবৃন্দ খাপড়া ওয়ার্ডের শহিদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া এবং পাঠ্যপুস্তকে খাপড়া ওয়ার্ডের বিপ্লবী আন্দোলনকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরেও কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেছেন। কমিউনিস্টদের সে দিনের লড়াই, আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি। আদর্শের প্রতি কমিউনিস্ট-বন্দীদের কমিটমেন্ট, তাঁদের লড়াই ও আত্মত্যাগের ধারা নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে। খাপড়া ওয়ার্ডের লড়াইয়ের পথ ধরে সমাজতান্ত্রিক-সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের রক্তের হোলি খেলায় ঝরে যায় ৭টি বিপ্লবী প্রাণ। বন্দী অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহিদ হন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা সুধীন ধর, বিজন সেন, কমরেড হানিফ শেখ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেন, কমরেড কম্পরাম সিং ও আনোয়ার হোসেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন বাড়তে থাকে, কমিউনিস্টদের ধরে ধরে জেলে ভরা হয়। কমিউনিস্ট-বন্দীদের দ্বারা ভরে যায় পূর্ববাংলার কারাগারগুলো। অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে জেলের মধ্যেই আন্দোলন শুরু করেন কমিউনিস্ট-বন্দীরা। উত্তেজিত ও বেসামাল হয়ে সরকার কমিউনিস্ট বন্দীদের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলে কমিউনিস্ট-বন্দীরা অনশন করতে থাকেন। ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহী জেলে সাধারণ কয়েদীরা অনশন শুরু করলে, কমিউনিস্ট-বন্দীরাও যোগ দেন। ঘানি টানানো হবে না, ভালো খাবার দেওয়া হবে-এই আশ্বাসের ভিত্তিতে ১৪ এপ্রিল অনশন প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে কমিউনিস্ট-বন্দীদের ওপর জুলুম বাড়তে থাকে। ২১ এপ্রিল রাজবন্দীদের ধমক দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়, শাস্তি হিসেবে ১০ জন বন্দীকে কনডেমনড্ সেলে (ফাঁসির আসামি যে সেলে রাখা হতো) স্থানান্তর করা হবে। কমিউনিস্ট কর্মীরা কনডেমন্ড সেলে যেতে অস্বীকৃতি জানান। ২৪ এপ্রিল সোমবার আনুমানিক সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে, সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগ সরকারের বিশ্বস্ত তাঁবেদার রাজশাহী জেল সুপারিন্টেনডেন্ট এডওয়ার্ড বিল দলবল নিয়ে হঠাৎ করেই খাপড়া ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন। এক পর্যায়ে ‘কমিউনিস্টরা ক্রিমিনাল’ বলে গালি দিতে দিতে ওয়ার্ড থেকে বের হয়েই বিল দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। বিল বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই পাগলা ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। বিলের নির্দেশে সিপাহীরা বাঁশ দিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙে, জানালার ফাঁকের মধ্যে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করতে থাকে। রক্তে ভেসে যায় খাপড়া ওয়ার্ড। দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে সিপাহী ও কয়েদী পাহারা মেটরা, আহত-নিহত নির্বিশেষে সবাইকে পেটাতে শুরু করে। এরপর বিলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওয়ার্ডে ঢুকে আবার লাঠিপেটা শুরু করে। রক্তস্নাত খাপড়া ওয়ার্ডে ঘটনাস্থলেই ৫ জন কমরেড শহিদ হন। রাতে মৃত্যুবরণ করেন কমরেড কম্পরাম সিং আর কমরেড বিজন সেন। তাঁদেরকে হয়তো বাঁচানো যেত, কিন্তু আহতদের কোনো চিকিৎসাই হয়নি। নিরস্ত্র ৩৯ জন বন্দীর ওপর ১৮০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল সেদিন। খাপড়া ওয়ার্ডের জীবিত প্রত্যেক বন্দীই গুলি ও লাঠিচার্জে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App