×

অর্থনীতি

করোনায় নষ্ট আড়াইশ কোটি টাকার ফুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১১:৪৯ এএম

করোনায় নষ্ট আড়াইশ কোটি টাকার ফুল

ফুল/ ফাইল ছবি

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে নষ্ট হচ্ছে আড়াইশ কোটি টাকার ফুল। আঘাত এসেছে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৩০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকায়। এই ক্ষতি পোষাতে দেশের ২৪ জেলার ফুলচাষিদের বিনাসুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ফুল উৎপাদন করছেন দেশের চাষিরা। আর ফুল চাষ, বাজারজাতকরণ ও বিপণনের সঙ্গে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে। ভ্যালেনটাইনস ডে, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা ফালগুন, পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ দিবসগুলোতে ফুলের বিক্রি বেশি হয়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও তার পরিপ্রেক্ষিতে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার বাগানেই নষ্ট হচ্ছে ফুল। এতে বিপাকে পড়েছেন ফুলচাষিরা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার পর ফুল সেক্টরকে বাঁচাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ফ্লাওয়ার সোসাইটির নেতারা। ২৪ জেলার ফুলচাষিদের তালিকা করে বিনা সুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। যাতে তারা আবারো ফুল চাষ করে করোনার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেন। এর আগে ফুল চাষের সঙ্গে জড়িতদের পরিবারকে প্রতিদিনের খাদ্য সরবরাহ করা দরকার। এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সোসাইটির পক্ষ থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। ফুল বেচাকেনার দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার যশোরের গদখালিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেখানে পূর্ব আকাশে লাল সূর্য উঁকি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠত ফুলের বাজার। সেখানেই করোনার প্রাদুর্ভাবে বাজার প্রাঙ্গণ জনমানবশূন্য। নেই কোনো হাঁকডাক। গুটিকয়েক দোকানদার বসে আছেন দোকান খোলে। ফুল চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। চাষিদের চোখে-মুখে বিষণ্ণতার ছাপ! গদখালি ফ্লাওয়ার সোসাইটি সূত্র জানায়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কৃষক ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করছেন। ফুল চাষে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনও হয়েছিল। দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার গদখালি বাজারে প্রায় ১২ রকমের ফুল বেচাকেনা হয়। গদখালির কৃষক রাজিব আহমেদ জানান, তার আড়াই বিঘা জমির গোলাপ ফুল এখন ছাগলের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে ১৫ দিন ধরে ফুলের বেচাকেনা নেই। এদিকে বাগান থেকে প্রতিদিনই দেড় থেকে দুই হাজার গোলাপ কেটে ছাগল-গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। কারণ গোলাপ না কাটলে বাগান নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে ফুলের বেচাকেনা নেই, অন্যদিকে ফুল কাটার জন্য শ্রমিক খরচ গুনতে হচ্ছে। পানিসারার ফুলচাষি কামাল কাজী জানান, বাংলা বর্ষবরণ উৎসব সামনে রেখে ফুল উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কয়েক লাখ টাকা গোলাপ বাগানে বিনিয়োগ করা আছে। ঠিক সেই সময়ে করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের কারণে ১৫ দিন ধরে পরিবহন-দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফুলের বাজার বসছে না। ক্ষেত থেকে প্রতিদিনই দেড় হাজারের বেশি গোলাপ ফুল কেটে ছাগল-গরু দিয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। ফুল না কাটলে নতুন করে আর কুড়ি আসে না। আমার মতো না এই এলাকার হাজারো ফুলচাষি এমন বিপাকে পড়েছেন। তাদের বাগানের রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুল কেটে গরু দিয়ে খাওয়াচ্ছেন। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, দেশের ফুলচাষিরা বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ফুল উৎপাদন ও কেনাবেচা করেন। এরমধ্যে ভ্যালেনটাইনস ডে, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা ফালগুন, পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ কিছু দিবসেই বিক্রি হয় ৯০০ কোটি টাকার ফুল। এই দিবসগুলোতে বাজারে ফুল ওঠাতে চাষিরা অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন এবং বিশেষ এই দিবসগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার তারা পথে বসতে চলেছেন। সারাদেশের ফুলের দোকানগুলো বন্ধ। গত ১৮ মার্চ থেকে চাষিরা কোনো ফুল বিক্রি করতে পারেনি। তিনি বলেন, ফুল ক্ষেতে রাখা যায় না, ফুল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। সব মিলিয়ে ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রায় আড়াইশ’ কোটি টাকার ফুল। এ অবস্থায় ফুলচাষিদের বাঁচাতে এবং দেশের সম্ভাবনাময় এই ফুল সেক্টরকে রক্ষা করতে বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App