×

জাতীয়

করোনায়ও বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১২:৪৩ পিএম

করোনায়ও বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

কিশোর গ্যাং/ প্রতীকী ছবি

মরণঘাতী করোনার ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থবির হয়ে গেছে পুরো বিশ্ব। করোনার চোখ রাঙানি থামাতে বাংলাদেশকেও অঘোষিত লকডাউন করে দিয়েছে সরকার। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না কেউ। এরমধ্যেও থেমে নেই কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম। দেশজুড়ে পাড়া-মহল্লায় পুরনো রূপেই সক্রিয়ভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তারা। আধিপত্য বিস্তার, চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং, মাদক ব্যবসা, এমনকি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বা অন্য গ্যাংয়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিরোধকে কেন্দ্র করে খুন-খারাবি থেকেও পিছপা হচ্ছে না তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফাঁকা পরিবেশ কিশোর অপরাধীদের জন্য আদর্শ জায়গা। এজন্য লকডাউনের মধ্যেও নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চুরি ছিনতাইয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে কিশোর অপরাধীরা। তাদের প্রতিহত করতে আরো কঠোর নজরদারি দরকার। পুলিশ বলছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তারা কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ ঠেকানোর চেষ্টা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা, এডভেঞ্চার বা ক্ষমতা দেখানোর লোভ, মাদক সেবন, বন্ধুদের পাল্লায় পড়া এবং বিদেশি সংস্কৃতির আদলে কিশোর গ্যাংগুলো তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা স্ট্যাটাস দেয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমুতে তারা একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় করে। বিপক্ষ গ্রুপকে প্রতিহত করতে প্রকাশ্য হুমকি-ধমকি দেয়া তাদের নিত্যদিনের কাজ। আরো উদ্বেগের বিষয়, এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর অপরাধী, এলাকার ত্রাস। এর পেছনের অন্যতম কারণ রাজনৈতিক ‘বড় ভাইদের’ স্বার্থের প্রশ্রয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে শতাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে উঠলেও বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে প্রায় ৫০টি। এসব গ্যাংয়ে অন্তত কয়েক হাজার কিশোর জড়িত। গত ৬ মাসে কিশোর গ্যাংয়ের তিন শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সংশোধনাগারে পাঠিয়েছে আইশৃঙ্খলাবাহিনী। যাদের মধ্যে অনেকেই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেনি। অথচ তারা ভয়ঙ্কর সব অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ গত ১ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দেওভোগ আদর্শনগরে শরিফ হোসেন (৩০) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। আদর্শনগর এলাকার স্থানীয় একটি বাড়ির সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, রামদা, বড় ছোরা, লোহার রড ও লাঠি নিয়ে ১০-১২ জনের একটি দল দৌড়ে রিকশার গ্যারেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিহত শরিফ হোসেনের মালিকানাধীন দোকানের সামনে আড্ডা ও মাদক সেবনে মানা করায় তাকে হত্যা করা হয় বলে জানায় তার পরিবার। এরআগে, গত ৩০ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ গ্যাংয়ের সঙ্গে মারামারিসহ ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটিয়ে আসছিল। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, আমাদের দেশে উচ্চবিত্ত, মধ্য ও নিম্নবিত্ত এই দুই শ্রেণির কিশোর গ্যাং রয়েছে। এদের মধ্যে ২য় শ্রেণির কিশোর অপরাধীরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকায় তাদের মধ্যে সচেতনতার বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায় না। পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের বড় বৈশিষ্ট ফাঁকা পরিবেশে অপরাধ সংগঠিত করা। ফলে করোনার কারণে সারাদেশ লকডাউন করার পরিবেশটা কাজে লাগিয়ে আধিপত্য বিস্তার ও চুরি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছে তারা। তাদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদাড়ি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতি এলাকার গ্যাংয়ের সদস্যদের পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণের কাজসহ বিভিন্ন সামাজিত কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারে। একই সঙ্গে এটির স্থায়ী সমাধানের জন্য তাদের সংশোধনাগারে পাঠিয়ে সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, করোনার প্রভাবে আমরা দুই শ্রেণিতে ভাগ হয়ে কাজ করছি। একটি অংশ মানবিক কাজ ও ফুট পেট্রোলিং এবং অন্যটি আগের মতোই অপরাধ নির্মূলে কাজ করছে। আমরা মাদক জঙ্গিসহ অন্যান্য অপরাধ দমন থেকে চোখ সরিয়ে নেইনি। করোনার অজুহাতে কারোই সক্রিয় হওয়ার সুযোগ নেই। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। করোনার প্রভাবে কিছু ধরনের অপরাধের মাত্রা কমেও এসেছে। তবে এরপরেও কিছু অপরাধ ঘটছে। কিন্তু পুলিশ চেষ্টা করছে কিশোর গ্যাং নামে যেন কোনো অপরাধ না ঘটতে পারে। জনগণের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় পুলিশ সর্বদা সজাগ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App