×

পুরনো খবর

স্যানিটাইজার কেন এত কার্যকর?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২০, ০২:২৫ পিএম

স্যানিটাইজার কেন এত কার্যকর?

হ্যান্ড স্যানিটাইজার

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এখনো কোনো কার্যকরী প্রতিষেধক আবিস্কার করতে পারেনি বিশ্ব। তবে ভাইরাসটি থেকে বাঁচতে অবলম্বন করতে হচ্ছে বিভিন্ন পন্থা। সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা হিসেবে ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে বিজ্ঞান। সাবান কিংবা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া সম্ভব নয় বলেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। অবশ্য সাবানের চেয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজারকে এগিয়েও রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। যার কারণে জিবানুমুক্ত হতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ওপর নির্ভর করছে মানুষ। যদিওবা এই সময়ের আগে স্যানিটাইজারের সাথে এত বেশি পরিচিত ছিল না বললেই চলে। স্যানিটাইজারের এত গুরুত্ব কেন? এটা বুঝতে গেলে আগে জেনে নিতে হবে সাধারণত কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে স্যানিটাইজার তৈরি করা হয়, আর জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে সেই রাসায়নিকগুলির ভূমিকা কী? স্যানিটাইজার বানানো হয় সাধারণত তিন ধরনের রাসায়নিক দিয়ে। ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানল। আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল। যার আর এক নাম- আইসোপ্রোপানল। এছাড়াও আছে বেঞ্জালকোনিয়াম ক্লোরাইড। তিনটি রাসায়নিকই জলে খুব তাড়াতাড়ি দ্রবীভূত হয়ে যায় বলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানানোর উপাদান হিসাবে এদের এত কদর। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাতশুদ্ধি বানাতে ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানলের ব্যবহার হয়। যা নানা ধরনের মদের অন্যতম প্রধান উপাদান। এটাকেই আমরা অ্যালকোহল বলি। ইথাইল অ্যালকোহল তো বটেই, যে কোনও ধরনের অ্যালকোহলই আমাদের বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে বা তাদের নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের প্রোটিনগুলিকে ভেঙে দিয়ে। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস প্রাথমিক ভাবে আমাদের শরীরের যে কোষগুলিতে আস্তানা গাড়ে, সেগুলিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে পারে প্রায় সব ধরনের অ্যালকোহলই। আবার কখনও তা কোষের বিপাক প্রক্রিয়ারও রদবদল ঘটিয়ে দেয়। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ক্লিনিকাল মাইক্রোবায়োলজি রিভিউজ’-এ ২০১৪-য় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র জানায়, কোনো মিশ্রণে যদি অন্তত ৩০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকে, তা হলেই তা জীবাণুনাশক হয়ে উঠতে পারে। সেই মিশ্রণে অ্যালকোহলের ঘনত্ব যত বাড়ে, ততই সেই মিশ্রণটি জীবাণুনাশের ক্ষেত্রে আরও বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। মিশ্রণে যদি অ্যালকোহলের ঘনত্ব বেড়ে ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তা হলে তা বহু রকমের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস মারতে বা তাদের পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, অ্যালকোহলের ঘনত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবাণুনাশের কাজটি আরও দ্রুত করতে পারে মিশ্রণটি। অ্যালকোহলের ঘনত্ব বাড়তে বাড়তে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশে পৌঁছনো পর্যন্ত সেই মিশ্রণটি জীবাণুনাশ করার ব্যাপারে কার্যকর থাকে। তার পর অবশ্য মিশ্রণের সেই ক্ষমতা ততটা থাকে না। অ্যালকোহলের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। তা কোনো ব্যাকটেরিয়া মারতে পারলে, দীর্ঘ দিন ব্যবহারের পরেও সেই অ্যালকোহলের বিরুদ্ধে ব্যাকটেরিয়ারা তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে না। ফলে, ভবিষ্যতে অ্যালকোহলের ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া মরবে না, এই আশঙ্কাটাও থাকে না। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নানা ধরনের সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার চেয়ে ইথানলের মতো অ্যালকোহল ব্যবহার করলে মূলত তিন ধরনের ব্যাকটিরিয়াকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া যায়। তাদের নাম- ‘এসচেরিচিয়া কোলি’, ‘সেরাটিয়া মার্সেসেন্স’ এবং ‘স্ট্যাফাইলোকক্কাস স্যাপ্রোফিটিকাস’। তবে ডায়ারিয়া হয় যে জীবাণু সংক্রমণের জন্য সেই ব্যাক্টেরিয়া ‘ক্লসট্রিডিয়াম ডিফিসাইল’-কে কিন্তু অ্যালকোহল মারতে বা নিষ্ক্রিয় করতে পারে না। অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় বলে কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদের পর হাতকে জীবানুমুক্ত অকার্যকর হয়ে পড়ারও আশঙ্কা থাকে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App