×

জাতীয়

ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার দিতে চুল বিক্রি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২০, ০১:২৩ এএম

ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার দিতে চুল বিক্রি

চুল বিক্রির পর সাথী বেগম। ছবি: সংগ্রহ।

ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার দিতে চুল বিক্রি

সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর আলম রাজীবের হাত থেকে টাকা এবং খাবার গ্রহণ করছেন সাথী বেগম।

মার্কিন ছোটগল্পকার উইলিয়াম সিডনির (যার ছদ্মনাম ও. হেনরি) লেখা ‘গিফট অব দ্য মেজাই’ গল্পটি যারা পড়েছেন ডেলা চরিত্রটি তাদের মনে নিশ্চিত দাগ কেটেছে। গল্পে স্বামীর জন্য উপহার জোগার করতে গিয়ে নিজের অতি যত্নে বড় করা শখের চুল বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

ঠিক এমনি এক ডেলার সন্ধান পাওয়া গেছে রাজধানী ঢাকার সাভারে। তবে স্বামীর জন্য নয়, দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য প্রিয় চুলগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। এ ঘটনা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ডেলারূপী সেই নারীর নাম সাথী বেগম। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। দিনমজুর স্বামী মানিক মাটি কেটে কিংবা রিকশা চালিয়ে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতেন। আর সাথী অন্যের বাড়িতে কাজ করতেন। মাস চারেক আগে অভাবের কারণে রাজধানীর মিরপুরে চলে আসেন। সেখান থেকে মাস খানেক আগে চলে আসেন সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায়। সেখানকার নান্নু মিয়ার একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নেন।

করোনার কারণে লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মানিক আর সাথী। ঘরে দেড় বছরের শিশুসহ দুই সন্তান। গত দুদিন ধরে শিশুসহ ঘরের খাবার ফুরিয়ে যায়। কী করবেন, বুঝতে পারছিলেন না কেউই। ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিলেন।

অবশেষে ২০ এপ্রিল বিকেলে পথিমধ্যে পরিচয় হয় চুলক্রেতা এক হকারের সঙ্গে। মাথার চুল দেখিয়ে বিক্রি করলে কত টাকা পাবেন জানতে চান সাথী। হকার মাথার চুল কেনা বাবদ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দেয়ার কথা জানায়। তবে মাথার চুল কেটে নেয়ার পর হাতে মাত্র ১৮০ টাকা ধরিয় দিয়ে চলে যায়। কষ্ট পেলেও তা মেনে নিয়ে চুল বিক্রি করে বুকের সন্তানের জন্য দুধ আর সংসারের জন্য দুই কেজি চাল কিনে আনেন।

[caption id="attachment_216339" align="aligncenter" width="1080"] সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর আলম রাজীবের হাত থেকে টাকা এবং খাবার গ্রহণ করছেন সাথী বেগম।[/caption]

লকডাউনে সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম চলমান থাকার পরেও কেন চুল বিক্রি করতে গেলেন? গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাথী জানিয়েছেন, সাভারে তারা নতুন আসার কারণে তেমন কারও সঙ্গে তাদের পরিচয় নেই। কয়েক জায়গায় গেছেনও কিন্তু কোথাও সাহায্য পাননি।

গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর পান সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাথী বেগমের বাসায় গিয়ে তিনি নগদ ছয় হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য এবং ১৫ দিনের খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়েছেন। এরপর সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর আলম রাজীব সাথীর বাসায় গিয়ে টাকা এবং খাবার পৌঁছে দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App