×

সাহিত্য

এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি

Icon

nakib

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২০, ১১:৪৮ এএম

এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক। দেশের কোনো আন্দোলন-গণসংগ্রাম থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নিজেকে কখনো দূরে রাখেননি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কখনোই সামান্য দূরে সরে যাননি বা জেগে থেকে ঘুমাননি। এভাবেই নিজের মধ্যে বিপ্লব করে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন তিনি। মানুষের পক্ষে, সমাজ পরিবর্তনের পক্ষে সিরাজুল ইসলাম সবসময়ই সোচ্চার। অন্যায় অসঙ্গতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি আজীবন লড়াই করেছেন। সর্বদাই প্রত্যাশা করেছেন সমাজতান্ত্রিক সমাজের। যে সমাজে ধনী-গরিবের কোনো বৈষম্য থাকবে না। বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন একেবারেই নীরবে। তার বিভিন্ন লেখায় সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা উঠে এসেছে।

শিক্ষক হিসেবে জনপ্রিয়তা রয়েছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর। কলাম লেখক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয়। সত্তরের দশক থেকে বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখে আসছেন। অধ্যাপকের পদ থেকে অবসর নেয়ার পর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহিত্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘নতুন দিগন্ত’ সম্পাদনা করছেন।

বৈষম্যহীন শোষণমুক্ত সমাজের প্রত্যাশী এই শিক্ষকের করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোজই বাইরে যেতাম। সেমিনার মিটিংয়ে নয়, পত্রিকা সম্পাদনা ও সাংগঠনিক কাজে বের হতাম। হঠাৎ করে এমন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হলো! এ রকম পরিস্থিতিতে এর আগে কখনো পড়িনি। একাত্তর সালে হাঁটতে বের হতাম। এখন তো একেবারেই পারছি না। আমি পড়ার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম। ১৯৬০ সালে জাহাজে করে ফিরেছিলাম। লিভারপুল থেকে বম্বে পর্যন্ত এসেছিলাম জাহাজে করে। উনিশ দিন লেগেছিল। উনিশ দিনের পড়ার মতো বইপত্র ছিল। বৈচিত্র্য ছিল। জাহাজের মধ্যে এক ধরনের আটকা ছিলাম। কিন্তু লোকজন ছিল, দেখাশোনা হতো। এখানে তো লোকজনের সঙ্গে দেখাও করা যাচ্ছে না, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি! এ রকম অভিজ্ঞতা আমার আগে কখনো হয়নি। তবে সময় কাটছে বইপত্র পড়ে আর লেখালেখি করে। একাত্তর সালের যুদ্ধ সংক্রান্ত বই পড়ার কৌত‚হল ছিল অনেকদিন ধরে, সেসব পড়ছি। লিখছি একাত্তরের যুদ্ধ এবং জাতীয়তাবাদের সূচনা।

সাধারণ মানুষকে অনেক ক্ষেত্রে দমানো যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের যাওয়াটা অন্যরকম। একাধিক কারণে তারা বেরুচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দরকার, তার কাজের বা উপার্জন দরকার। আরেকটা কারণ হচ্ছে ত্রাণের আশায় বাড়িতে থাকলে তো না খেয়ে থাকতে হবে। তৃতীয় কারণ হচ্ছে অনেক মানুষের বাড়িই নাই। তাদের বাইরে যাওয়াটা অত্যাবশ্যকীয়। তাদের এই আবাসন সমস্যা আমরা আসলে বুঝিই না। এই ঢাকা শহরে হাজার হাজার মানুষ বাইরে পথেঘাটে মসজিদের সামনে রেলস্টেশনে রাত যাপন করে।

করোনাক্রান্ত এই পৃথিবীটা আপনার চেনা পৃথিবীর সঙ্গে মিলছে কী? বিশিষ্ট এই সমাজচিন্তক বলেন, না না, একেবারেই আমার চেনা পৃথিবীর সঙ্গে এই পৃথিবীটার কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আমি বেশ বুঝতে পারছি, এই চেনা পৃথিবীটা অনেক আরো বদলে যাবে। এর প্রধান কারণ হবে অর্থনৈতিক। বিশ্বজুড়েই এই অর্থনৈতিক মন্দা আসবে। আমাদের দেশে ভয়ংকরভাবেই আসবে। বেকারত্ব বাড়বে। দীর্ঘদিন এই যে উৎপাদন হলো না, রপ্তানি হলো না। বাইরে থেকে রেমিট্যান্স এলো না। এর প্রভাব পড়বে। অনেক মানুষ না খেয়ে থাকবে। মানুষের মধ্যে হিং¯্রতা বাড়বে। বাড়বে এজন্য এই রোগ মানুষের স্বভাব বদলে দিচ্ছে। মানুষ বিচ্ছিন্ন, আতঙ্কগ্রস্ত, আত্মকেন্দ্রিক, পরের প্রতি সহানুভূতিহীন সেই প্রবণতাগুলো আগে এভাবে কখনো চর্চা দেখা যায়নি। এই রোগের কারণে এই চর্চাটা হচ্ছে। এটা একটা নতুন সংকট। আমি মনে করি চরম সংকট। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার চরম সংকট। পুঁজিবাদ যে বিচ্ছিন্নতা, আত্মকেন্দ্রিকতা মানুষের মধ্যে তৈরি করছিল তার ফল। যারা বাণিজ্যের বিশ্বায়ন তৈরি করছিল, সেটা ছিল বাণিজ্যের বিশ্বায়ন। এখন একটা নতুন বিশ্বায়ন হলো সেটা হচ্ছে আতঙ্কের বিশ্বায়ণ। যে আতঙ্ক সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে দিল। যারা বাজার দখল করছিল, সেই পুঁজিবাদীরাই।

সরকারের ত্রাণ তৎপরতা তো চলছে- এ নিয়ে কোনো পরামর্শ আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা জাতীয় দুর্যোগ। এই জাতীয় দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতা করা উচিত ছিল সর্বদলীয়ভাবে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের আন্দোলনের সময় হয়েছিল। যেখানে কোনো অপচয় হতে পারবে না। অর্থাৎ সর্বদলীয় কমিটি করতে হবে। দলীয়ভাবে করা মোটেই উচিত হয়নি। পুলিশ এবং আর্মি দিয়ে নয়ই। স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে করাই উচিত ছিল। তারা চিনবে এবং কার দরকার হবে জানবে।

প্রকৃতির প্রতি মানুষের অত্যাচারের কারণেই এমন দুর্যোগ ? তিনি বলেন, প্রকৃতিকে উত্ত্যক্ত করেছে মানুষ। তাই প্রকৃতি এতটা প্রতিশোধপরায়ণ হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App