×

স্বাস্থ্য

উপসর্গ ছাড়াই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২০, ১০:৪৯ এএম

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ৪২ দিন পর্যন্ত হবিগঞ্জে মাত্র একজন রোগী ছিলেন। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় জেলাটিতে আরো ১০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সেখানে এখন আক্রান্তের সংখ্যা ১১। যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের কোনো উপসর্গ ছিল না। একই চিত্র দেখা গেছে দেশের অন্য জেলায়ও। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে যারাই লকডাউনের মধ্যে চুরি করে নিজ নিজ এলাকায় গেছেন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে বাধ্য হয়েছেন তারাই করোনা সংক্রমণে পড়েছেন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয় দিনের মতো শনাক্তের সংখ্যা চারশো পেরিয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে এখন করোনা রোগীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার ছুঁইছুঁই। ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা নয়। সব মিলিয়ে করোনা কেড়ে নিল ১১০ জনের প্রাণ।

বিশ্লেষেণে দেখা গেছে, দেশজুড়ে এখন যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা ঢাকা অথবা নারায়ণগঞ্জফেরত। আর আগে থেকেই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জফেরতদের নমুনা নিয়েছে এবং তাতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা গেছে, উপসর্গ ছাড়াই রোগটি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ায় এ মুহূর্তে ঠিক কতজন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন তা বলা মুশকিল। উপসর্গহীন রোগীর কারণে উদ্বেগও বাড়ছে। এ অবস্থায় শুধু উপসর্গের ওপর নির্ভর করে করোনা সংক্রমিত রোগী চিহ্নিত করার আর সময় নেই। এখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় গণহারে পরীক্ষা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আর সরকারও সে কাজই করছে। দেশের ইউনিয়নের ওয়ার্ডগুলোতে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমে সরকার করোনার নমুনা সংগ্রহ শুরু করেছে। গত কয়েকদিন ধরে এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাতে দেশে করোনা সংক্রমণের ঠিকঠাক চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারপরও কতটা সমাধান হবে সেটা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, উপসর্গহীন রোগ থাকলে সেটা চিহ্নিত করাও খুবই কঠিন। কারণ করোনার চিকিৎসা না থাকায় অনেকেই এই রোগের নমুনা দিতে চাচ্ছেন না। তারা মনে করছেন, করোনা হলে শেষ পরিণতি মৃত্যু। আর এ কারণে ফার্মেসি থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সর্দি-জ¦রের ওষুধ কিনে খেয়ে নিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যত বেশি পরীক্ষা করা যাবে তত আমাদের জন্যই ভালো। অর্থাৎ শনাক্ত যেরকম বাড়বে তেমনি আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুহার কমে আসবে। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই যে সবার মৃত্যু ঘটবে না, সেই তথ্যটিও মানুষের মধ্যে পৌঁছতে হবে। মানুষকে সতর্ক রাখার জন্য ঘরে থাকতে বলার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে থেকে মৃত্যুর উৎকণ্ঠাও কমানো উচিত। নয়তো আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগতে থাকা অনেকে মৃত্যু চিন্তায় আরো বেশি অসুস্থ বোধ করতে পারেন। গবেষকদের মতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসে কিনা এবং কতদিন এভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, সে ব্যাপারে ধারণা পেতে হলে আগে জানতে হবে, করোনায় আক্রান্ত কতজনের মধ্যে মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছে বা কতজনের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। মৃদু উপসর্গ দেখা দেয়া বা উপসর্গহীন সংক্রমিতের সংখ্যা জানা গেলে তা সহায়ক হবে গবেষণার কাজে। ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফরে শামান গবেষণায় দেখিয়েছেন, প্রকোপ শুরু হওয়ার আগেই ৮৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গহীন সংক্রমিতরা এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেবেন। তার গবেষণাপত্রে সতর্ক করা হয়েছে এমন নীরব সংক্রামকদের ব্যাপারে। তিনি ওই গবেষণায় বলেছেন, এমন অনেক সংক্রমিত রয়েছেন যাদের কোনো উপসর্গ নেই। আবার, এমনও পেয়েছেন যাদের সব উপসর্গ আছে কিন্তু সংক্রমণ নেই। কেউ সংক্রমিত হলে তার শরীরে লক্ষণ দেখা দিতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তি অনেক মানুষকে সংক্রমিত করে ফেলার আশঙ্কা আছে। এক অর্থে সবাই সংক্রমিত। তাই শুধু সংক্রমিতদের ঘরে রাখলে চলবে না। সবাইকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে হবে। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অদিপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি কোনো উপসর্গ ছাড়াই একটা ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকে যাচ্ছে। ভাইরাসটি নতুন, এ নিয়ে এখন শুধুই গবেষণা হচ্ছে। ফলে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বলা যাচ্ছে, উপসর্গ ছাড়াই সংক্রমণ হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ মানুষের চিকিৎসা ঘরে থেকেই সম্ভব। জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হলেও মাস্ক বাধ্যতামূলক। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তফা কামাল রউফ বলেন, আক্রান্তদের ৮০ ভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এছাড়া করোনা পজেটিভ মানেই হাসপাতালে যেতে হবে এমন নয়। তিনি বলেন, আমরা এখন চতুর্থ ধাপের প্রথম স্তরে আছি। সংক্রমণের মাত্রা আরো বাড়বে। আক্রান্ত থেকে মৃত্যু ১০ থেকে ১৪ দিন পিছিয়ে থাকে। আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে একটা রোগীর মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ পরিবর্তন করছে। আমাদের দেশে পরিবর্তন হয়েছে কিনা জানি না। ভারতে একটা পরিবর্তন হয়েছে। তার মতে, যদি রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে তাহলে রোগীর মৃত্যুর হার কমে যায়। বয়সের ব্যাপার বলতে গেলে, আমাদের দেশে এখনো ৪০ বা তার বেশি বয়স্কদের মৃত্যুর হার বেশি। কারণ, এই বয়সে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। তার পরামর্শ হচ্ছে, এই রোগে প্রায় ৮০ ভাগ রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে না। ২০ ভাগ রোগী ভর্তি হয়। এখান থেকে ১৫ ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরে। নতুন ৪৩৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত, মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ল : নতুন করে ৪৩৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩ হাজার ৩৮২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৯৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্তের ৪৩৪ জন আক্রান্তের সংখ্যা শনাক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ হাজার ৫৭৮ জন মানুষের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা হয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ বুলেটিনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য জানান অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো নয়জন মারা গেছেন। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন মৃতের সংখ্যা ১১০ জন। গতকাল যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, মহিলা চারজন। এদের মধ্যে মধ্যে ষাটোর্ধ্ব তিনজন, ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে আছেন ৩, চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছর বয়সের মধ্যে আছেন তিনজন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা জেলায় ২৪ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তি : গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে আরো ৪৩৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক সংক্রমিত ব্যক্তি পাওয়া গেছে। রাজধানী মহাখালীর ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের মিলনায়তনে করোনা ভাইরাসসংক্রান্ত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, এ সময়ে ঢাকা জেলায় সর্বাধিক ২৪ শতাংশ সংক্রমণ হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App