×

স্বাস্থ্য

সম্মুখ যোদ্ধাদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৪ এএম

দেশে করোনা ভাইরাসে একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের সংস্পর্শে আসা অন্য সবাইকেও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালসহ হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট। ফলে সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবায়। স্বাস্থ্য খাত ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) তথ্য অনুযায়ী দেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ১৭০ জন চিকিৎসক, ৮০ জন নার্সসহ তিন শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী। আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন আরো ৫০০ বেশি স্বাস্থ্যকর্মী।? সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মীরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে ৫ শতাংশের বেশি স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন দ্রুত ছড়িয়ে পড়া, কোভিড-১৯ রোগীর তথ্য গোপন, অপরিকল্পিত বহির্বিভাগ, নিম্নমানের সুরক্ষাসামগ্রী (পিপিই) এবং সর্বোপরি সার্বিক অব্যবস্থাপনায় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। এতে স্বাস্থ্যখাত ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

বিডিএফের মহাসচিব ডা. নিরুপম দাশ মনে করেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বেড়ে যাওয়ায় এবং পিপিইর সমস্যার কারণে অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তিনি বলেন, একজন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসাসহ কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ মিলিয়ে প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় কর্মবিরতিতে থাকতে হয়। এছাড়া তাদের সংস্পর্শে আসা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। এতে অনেক হাসপাতাল এবং হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যা এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যসেবার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজকে বলেন, সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য খাত যারা দেখভাল করছেন তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। করোনায় আক্রান্তদের যারা চিকিৎসাসেবা দেবেন সেই সম্মুখ যোদ্ধাদের সুরক্ষার বিষয়টি আমরা নিশ্চিত করতে পারেনি। এতে সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ভোরের কাগজকে বলেন, কমিউনিটি পর্যায়ে করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েও রোগীরা চিকিৎসকের কাছে সেই তথ্য গোপন করছেন। এতে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে; তেমনি একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের বিভাগ।

জানা যায়, চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজধানীর ডেল্টা ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হলে বন্ধ হয় ইনসাফ বারাকাহ কিডনি হাসপাতালের কার্যক্রম। ইমপালস হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চার চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় ওই বিভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তথ্য গোপন করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে করোনা আক্রান্ত এক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন ইব্রাহিক কার্ডিয়াক হাসপাতালে। তাকে চিকিৎসা দেন চিকিৎসকরা। পরে চিকিৎসকদের কাছে সত্য কথা জানায় রোগীর স্বজনরা। এরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় হাসপাতালের সিসিইউ, কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয় ২০ জন চিকিৎসককে। তথ্য গোপনসহ না জেনে চিকিৎসা নিতে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫টি বিভাগের বেশ কয়েকটি ইউনিটের সেবা বিঘ্নিত হয়। কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মিটফোর্ড হাসপাতালের ২৩ জন চিকিৎসকসহ ৪১ জন স্বাস্থ্যকর্মী, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯ জন চিকিৎসক, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ ৬ জন, কুর্মিটোলা, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি এখনই নিশ্চিত করতে না পারলে যে কোনো মুহূর্তে বন্ধ হতে পারে অনেক হাসপাতাল। সংকটে পড়তে পারে চিকিৎসা ব্যবস্থা। যার ফল হবে আমাদের জন্য ভয়াবহ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App