×

জাতীয়

নকল এন-৯৫ মাস্ক: পার পেয়ে যাবে জেএমআই!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৪ এএম

নকল এন-৯৫ মাস্ক: পার পেয়ে যাবে জেএমআই!

নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহে অভিযুক্ত জেএমআই

যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এন-৯৫ মাস্কের বদলে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহ করে আলোচনায় আসা প্রতিষ্ঠান জেএমআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নারাজ কেন্দ্রীয় ওষুধ ভাণ্ডর বিভাগ (সিএমএসডি)। বরং ওই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষেই সাফাই গাইছে তারা। ওই ঘটনায় স্পষ্টত দুর্নীতি হয়েছে বলে চিকিৎসকসহ সাধারণ মানুষ মনে করলেও এটিকে ‘ভুল’ বলে সহজে মেনে নিয়েছে সিএমএসডি। ফলে এ ঘটনায় সিএমএসডির সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা এখন সে প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। এ বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও।

গত ৩০ মার্চ মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ৩০০টি ‘এন-৯৫’ মাস্কের নামে নকল মাস্ক সরবরাহ করার পর এ ঘটনাটি আলোচনায় আসে। মাস্কগুলো প্রকৃতপক্ষে ‘এন-৯৫’ কিনা, সে বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী টেলিফোনে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জানতে চান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় মতামত চেয়ে হাসপাতালের পরিচালক চিঠি লেখেন সিএমএসডিতে। বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে এলে সিএমএসডি পরিচালক এক বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। সেখানে ভুলক্রমে এন-৯৫ এর বক্সে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছিল বলে জানানো হলে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

এদিকে ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি সিএমএসডি বা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেএমআই সিরিঞ্জ ও মেডিকেল ডিভাইসের সরবরাহ করা ভুয়া এই মাস্ক নিয়ে কার্যত কিছুই হচ্ছে না বলে জানা গেছে। এ নিয়ে বিশেষ করে চিকিৎসকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। করোনার মতো ভয়াবহ ভাইরাস মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকা চিকিৎসকরা নিজেদের নিরাপত্তা আশঙ্কায় রয়েছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুলনার এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় চিকিৎসকদের ক্ষোভ আরো বেড়েছে।

এ বিষয়ে ডক্টর সেফটি এন্ড রাইটসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাত বলেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এন-৯৫ মাস্কের সংকট এখন বিশ্বজুড়ে। এর দাম সাধারণ মাস্কের কয়েক গুণ বেশি। এ সুযোগে জেএমআই নামক কোম্পানি সরকারি কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে দুর্নীতি করেছে। এটা ভুল নয়, এটা প্রহসন। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ওষুধ ভাণ্ডার বিভাগ (সিএমএসডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা কোনো কোম্পানিকে এমন কোনো কার্যাদেশ দেইনি। আর জেএমআই ভুলবশত এন-৯৫ এর মোড়কে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করেছে। আমি সব জায়গায় বলে দিয়েছি, এটা সাধারণ মাস্ক। ইতোমধ্যে এই কোম্পানির সরবরাহ করা সব মাস্ক ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। এখানে কোনো অসাধু সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের সবকিছু স্বচ্ছ, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। কিছু লোক এই এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এটা ভুলবশত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো আপডেট তার জানা নেই। তিনি অন্য একটি কাজে ব্যস্ত আছেন বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।

এদিকে সিএমএসডির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভুলক্রমে এন-৯৫ এর বক্সে সাধারণ মাস্ক সরবরাহ করেছিল জেএমআই। কিন্তু এন-৯৫ একটি আমেরিকান ব্র্যান্ড। যার মালিকানায় রয়েছে থ্রিএম নামের প্রতিষ্ঠান। চীন, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের অনুমোদিত তিনটি কারখানাই কেবল এই মাস্ক তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন এসে যায়, এন-৯৫ মাস্কের এতগুলো বক্স পেল কোথায় জেএমআই? নাকি নিজেদের তৈরি নিম্নমানের মাস্ক অতি উচ্চমূল্যে বিক্রির জন্য এন-৯৫ মাস্কের নকল বক্স তৈরি করেছে তারা?

সচেতন মহল বলছে, এত হেলাফেলায় বিষয়টি ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। কেননা এর সঙ্গে শুধু চিকিৎসক বা নার্সের ঝুঁকির দিকটিই নয়, জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও জড়িত। এছাড়া দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উল্লেখ্য, শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে গত মাসে চীনকে ১০ লাখ হ্যান্ড গ্লাভস, পাঁচ লাখ মাস্ক, দেড় লাখ টুপি, এক লাখ হাত পরিষ্কারক, ৫০ হাজার জুতার কাভার ও ৮ হাজার গাউন দিয়েছে বাংলাদেশ। যার বেশিরভাগই সরবরাহ করেছে জেএমআই।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App