×

জাতীয়

করোনার থাবা ঘাতক করে তোলে ওদের!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২০, ০৮:৫৪ পিএম

করোনার থাবা ঘাতক করে তোলে ওদের!

কেয়ারটেকার খুনে জড়িতরা

প্রাণঘাতী করোনা পরিস্থিতিতে গোটা দেশ লকডাউন। বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের উৎস, নেই কর্মসংস্থান। ফুরিয়ে গেছে গচ্ছিত সব টাকা। দমবন্ধ হয়ে আসা এই রাজধানীতে আর বাঁচা সম্ভব নয়। তাই যেতে হবে বাড়িতে। কিন্তু কীভাবে যাবে, কোথায় পাবে টাকা? এমন বিপদে পড়ে তারা বাড়ির যাওয়ার মতো টাকা চাইতে যায় কর্মদাতা কনট্রাকটরের কাছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। নিরূপায় হয়ে তারা অন্যভাবে টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে।

নির্মাণাধীন ভবনের পানির পাম্প আর বেশ কয়েক কয়েল নতুন বৈদ্যুতিক তার চুরির সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভবনের কেয়ারটেকার। যে তাদের সেই কনট্রাকটরের আস্থাভাজন। সে থাকলে তো আর চুরি করা সম্ভব নয়। তাই তাকে সরিয়ে দিতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক তারা এক পর্যায়ে খুন করে বসে সেই কেয়ারটেকারকে।

করোনাকালের এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে গত ১৩ এপ্রিল। নিহত কেয়ারটেকার আনোয়ার হোসেন (৫৫) সেখানকার নির্মাণাধীন ১০ তলা একটি ভবনে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। খুনের ঘটনায় অংশ নেয়া ওই ভবনের নির্মাণ শ্রমিক কাওসার, নয়ন, আফাজ, অনন্ত ও আশিকুলকে গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর গাবতলী ও আমিন বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

তাদের কাছ থেকে নিহত আনোয়ারের মোবাইল ফোনের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেয় পুলিশের কাছে। এরপর আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়।

ডিএমপি তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ খান এসব তথ্য জানিয়ে সোমবার (২০ এপ্রিল) ভোরের কাগজকে বলেন, সম্প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের হাতে কোনো টাকা ছিল না। তারা কন্ট্রাকটরের কাছে টাকা চাইলেও পায়নি। এরপর তারা ভবনের পানির পাম্প ও বৈদ্যুতিক তার চুরি করতে চায়। কিন্তু কেয়ারটেকারের কারণে তা করতে পারছিল না। এরপরই এমন ঘটনা ঘটে।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, কেয়ারটেকার আনোয়ারকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গত ১৩ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে তারা ভবনের ওপর থেকে নিচে নামে। একজন পাহারা দিতে থাকে মূল গেট। অপর চারজন গল্প করার ছলে ঢুকে পড়ে একা থাকা আনোয়ারের ঘরে। গল্পের এক পর্যায়ে তারা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আনোয়ারকে। বেঁধে ফেলে তার হাত, পা ও মুখ। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভবনের আট তলায়। নেয়ার কিছুক্ষণের ভেতর মারা যান আনোয়ার।

মৃতদেহ ৮ তলায় রেখেই শেষ রাতে আনোয়ারের মোবাইল ফোনটি নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। দুদিন পর ১৫ এপ্রিল খবর পেয়ে কেয়াটেকারের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। মামলা হলে এ নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। তবে একদিনের ব্যবধানেই রাজধানীর গাবতলী ও ঢাকার আমিন বাজার থেকে আটক করা হয় তাদের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App