×

আন্তর্জাতিক

করোনার নতুন ভরকেন্দ্র হবে আফ্রিকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২০, ১০:০৮ এএম

করোনার নতুন ভরকেন্দ্র হবে আফ্রিকা

মানচিত্র আফ্রিকা

কাগজ ডেস্ক: আফ্রিকায় ৬ মাসের মধ্যে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তাদের ধারণা, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পরবর্তী ভরকেন্দ্র হবে এই অঞ্চলটি। এরই মধ্যে সেখানে ১৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে আর প্রাণ হারিয়েছে ১ হাজার মানুষ। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সেখানকার অন্তত ৩ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এবং প্রায় তিন কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিতে বলে আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারাও।

বিবিসি বলছে, গত সপ্তাহে আফ্রিকাজুড়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখার পর সেখানকার প্রায় ১৩০ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। আফ্রিকার জন্য গঠিত জাতিসংঘের বিশেষ অর্থনৈতিক কমিশন মহাদেশটির জন্য একশ কোটি ডলারের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছে। এ বলয়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত।

আফ্রিকার মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশেরও বেশি সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত; শহুরে অধিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই বিভিন্ন বস্তিতে গাদাগাদি করে থাকে। এসব কারণে করোনা ভাইরাস আফ্রিকায় ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে অনুমান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তাদের মতে, যদি আফ্রিকায় করোনার বিস্তার শুরু হয় তাহলে সেটা ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও অনেক বেশি পরিমাণে ধ্বংসাত্মক হবে। সেখানে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র পাঁচটি আইসিইউ রয়েছে। যেখানে ইউরোপে ১০ লাখে রয়েছে ৪০০০টি। ভেন্টিলেটর কম থাকাই সেখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে এই ভাইরাস মোকাবিলায়।

সংস্থাটির আফ্রিকা অঞ্চলের পরিচালক ড. মাতসিদিসো মোয়েতি বলেন, আফ্রিকার খুব কম মানুষ আন্তর্জাতিক সফর করেন। তারপরও সেখানে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে গেছে। এরপর দেখা যাবে অন্যান্য দেশের মতোই সেখানেও খুব দ্রুত ভাইরাসটির বিস্তার ঘটবে।

এদিকে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই, এর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক সপ্তাহে বিশ্ব থেকে নেই হয়ে গেছেন ৫০ হাজার মানুষ। তথ্য বলছে, প্রথম মৃত্যুর পর ৫০ হাজার ছাড়াতে সময় লাগে ৮২ দিন। আর এর পরের ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে সময় লেগেছে মাত্র ৮ দিন। পরবর্তী ৫০ হাজার মানুষ মারা গেছেন সাত দিনেই। এখনো ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোয় বিভীষিকা ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ৮০ শতাংশ মানুষই ইউরোপ-আমেরিকার। যুক্তরাষ্ট্রেই আছে মোট আক্রান্তের প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ। মৃত্যুর দিক থেকেও শীর্ষে আছে দেশটি।

আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোয় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সব দেশেই এক থেকে দেড় মাস পরে বড় ধরনের উত্থান ঘটেছে করোনার। ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, ২৯ জানুয়ারি ইতালি, ৩০ জানুয়ারি স্পেন, ২৬ জানুয়ারি জার্মানি ও ২৩ জানুয়ারি ফ্রান্সে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তবে দেশগুলোয় করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে মার্চে। যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। দুই লাখ ছুঁই ছুঁই করছে ইতালি ও স্পেন। লাখ পেরিয়ে গেছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। প্রায় একই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় আঘাত হানে করোনা। ২৩ জানুয়ারি প্রথম করোনা-আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করে নেপাল। এখন পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত মাত্র ৩০ জন। ২৬ জানুয়ারি করোনা শনাক্ত হয় শ্রীলঙ্কায়। সেখানে রোগীর সংখ্যা ২৪৮। ২৯ জানুয়ারি ভারত, ২৩ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান, ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান, ৫ মার্চ ভুটান, ৬ মার্চ মালদ্বীপ ও সর্বশেষ ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তের শুরুতেই লকডাউন ঘোষণা করে নেপাল ও ভুটান। একটু দেরিতে হলেও লকডাউন ঘোষণা করে মালদ্বীপ। এ তিনটি দেশে এখনো করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। তবে সিদ্ধান্তে বিলম্বের কারণে কিছুটা বিপাকে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলো। এ কারণে পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে বেশি হারে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ।

এদিকে ভারতে লকডাউনের কারণে সংক্রমণ কম ছড়াচ্ছে বর্তমানে। আগে যেখানে তিন দিনে নতুন রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছিল, লকডাউনের পর দেখা যাচ্ছে তা হতে ছয় দিনের একটু বেশি সময় লাগছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী এক সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হবে।

মৃত্যুর তালিকার শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত মারা গেছেন প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইতালিতে প্রায় ২৩ হাজার, স্পেনে ২০ হাজার, ফ্রান্সে ১৯ হাজার, যুক্তরাজ্যে প্রায় ১৫ হাজার, ইরানে ৫ হাজার, জার্মানিতে সাড়ে ৪ হাজার ও চীনে সাড়ে ৪ হাজার মানুষ মারা গেছেন কোভিড-১৯ রোগে। অন্যদিকে আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে ৭ লাখ ১০ হাজার, স্পেনে প্রায় ২ লাখ, ইতালিতে ১ লাখ ৭৩ হাজার, ফ্রান্সে ১ লাখ ৬৫ হাজার, জার্মানিতে ১ লাখ ৪১ হাজার এবং যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ১৪ হাজার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App