×

রাজনীতি

ভারতে মাজেদকে ‘শেল্টার’ দিয়েছিল কে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২০, ১২:৩৭ এএম

ভারতে মাজেদকে ‘শেল্টার’ দিয়েছিল কে?

খুনি মাজেদের পাসপোর্ট। তবে নাম বদলে আলী আহমেদ।

ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণের সব কাগজপত্রই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি বরখাস্ত হওয়া ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের। ভারতের ভোটার হিসেবে সচিত্র কার্ড বানিয়েছিলেন ২০১২ সালে। তার নামে আধার বা রেশন কার্ডও ছিল। সর্বশেষ মাজেদের ভারতীয় পাসপোর্ট বানানো হয় ২০১৭ সালে। সেই পাসপোর্টে তার জন্মস্থান হাওড়া উল্লেখ করা হয়েছে।

সব নিয়ম মেনেই কলকাতার পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশ ভেরিফিকেশন করার পরই মাজেদকে তার বৈধ পাসপোর্ট ইস্যু করেছিল। কোথাও কোনো ফাঁক ফোকর ছিল না। বলা যায়, রাখা হয়নি। অর্থাৎ ইতিহাসের কলঙ্কিত একটি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত মাজেদকে সুকৌশলে রক্ষা করা, তার জীবনকে নিরাপদ রাখার একটা প্রাণপণ প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতা ছিল।

এসব ঘটনা থেকে ধারণা করা যায়, ভারতের তথা কলকাতার অত্যন্ত প্রভাবশালী কেউ মাজেদকে এসব কাজে সরাসরি সহযোগিতা করে আসছিল। বঙ্গবন্ধুর ঘাতককে আত্মগোপন করার ক্ষেত্রে নাম পাল্টে, পরিচয় মুছে দিয়ে গভীরভাবে সহায়তা করে যাচ্ছিল। যেন কোনোভাবেই তার আসল নাম সামনে চলে না আসে। তাকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী কোনোভাবেই যেন ধরতে না পারে। আর বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা না হয়।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে আসে, কে এই প্রভাবশালী? কী তার উদ্দেশ্য ছিল? সেই প্রভাবশালী খুব ভালো করেই জানতেন মাজেদ বঙ্গবন্ধুর ঘাতক। আর সেই সত্য জেনেই ঘাতককে নিবিড়ভাবে সহায়তা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে সেই প্রভাবশালীর কোনো অনুতাপ কিংবা প্রতিক্রিয়া ছিল না। বরং ঘাতকের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি সচেতন ছিলেন। তার সঙ্গে বন্ধুত্বও অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন।

আবার এটাও সত্য, খুনি মাজেদকে সেই প্রভাবশালী যেহেতু পাসপোর্ট, রেশনকার্ড, ভোটার আইডি কার্ডের মতো রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন তাই এটা মানতেই হবে, ভারত সরকারের সঙ্গে তার অতিঘনিষ্ট যোগাযোগও রয়েছে। ধরেই নেয়া যায়, বঙ্গবন্ধুর কলঙ্কিত খুনিকে নিরাপত্তা দেয়া সেই প্রভাবশালী ভারত সরকারের খুব কাছের এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ লোক। রাষ্ট্রের ভেতরে তার বিশাল ক্ষমতার জালও বিছানো রয়েছে।

ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থেকে বলা যায়, একাত্তর সালে পাকিস্তানের পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করা কিংবা হত্যাকারীকে শেল্টার দেয়ার পেছনে পাকিস্তানের প্রতি প্রবল সমর্থন আর গভীর সমবেদনা থাকতে বাধ্য। খুনি মাজেদকে ভারতের মাটিতে শেল্টার দেয়া কিংবা নিরাপদে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া পাকিস্তানের প্রতি প্রবল ভালোবাসাকেই প্রমাণ করে।
[caption id="attachment_215667" align="aligncenter" width="465"] খুনি মাজেদের পাসপোর্ট। তবে নাম বদলে আহমেদ আলী।[/caption]

পেছনে ফিরলে দেখতে পাই, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ভারতে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। আর কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষী এবং অত্যন্ত কাছের বন্ধু। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ক্ষেত্রে ইন্দিরা গান্ধী এককভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধুর খুনিরা নিঃসন্দেহে কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবারের রাজনীতির বিপরীত ধারার একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী ছিলেন।

এভাবে যুক্তির সূত্র ধরেই বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর ঘাতককে কলকাতায় এতসব রাষ্ট্রীয় ডকুমেন্ট দিয়ে পলাতক ও আত্মগোপনে থাকতে সহযোগিতা করে যাওয়া সেই প্রভাবশালী সরকারের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কোনো চরই হবেন। সেটা হতে পারে পাকিস্তানের চর!

ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, গান্ধী এবং কংগ্রেস কখনই পাকিস্তানের মিত্র বা শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল না। যারা গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ট বন্ধুর হত্যাকারীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে কলকাতায় লুকিয়ে রেখে ফাঁসির হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন, তারা নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুপ্রতীম। বলা যায়, তারা ভারতের মাটিতে বসে পাকিস্তানের হয়ে কাজ করছেন। অবশ্য এটাও সত্য, ভারত আর পাকিস্তান চির বৈরি সম্পর্কের দুটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই পাকিস্তানের কোনো সুসম্পর্ক নেই এবং কখনও ছিলও না।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের ভেতরেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে ধরনের জঙ্গিবাদী বা মৌলবাদী তৎপরতা দেখা গেছে সে সবে পাকিস্তানপন্থী ভারতীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধন থাকাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যেই একটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, ভারতের বর্তমান সরকারের ভেতরেই তবে কি লুকিয়ে রয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল, যারা মূলত পাকিস্তানের চর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন? যারা বর্তমান সরকারের জন্যও হুমকি তৈরি করছে।

না হলে, বাংলাদেশের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ঘনিষ্ট বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতেই কী করে দীর্ঘদিন ধরে নির্বিঘ্নে বসবাস করে গেল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি? যে দেশটি একাত্তরে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল অকৃত্রিম বন্ধ হয়ে, সহযোদ্ধা হয়ে?

মাজেদের শেল্টারদাতা সেই প্রভাবশালীকে খুঁজে বের করলেই বহু প্রশ্নের উত্তর মিলবে। যেসব উত্তরের সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও যেমন গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট, তেমনি বাংলাদেশের জন্যও। কৃতজ্ঞতা: হাফপোস্ট-এর কলামিস্ট সাব্বির খান।

আরো পড়ুন-

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App