বোরো ধান কাটা নিয়ে বিপাকে কৃষক
nakib
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২০, ১১:০২ এএম
ধান নিয়ে বিপাকে হাওর অঞ্চলের মানুষ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন দেশের লাখ লাখ কৃষক পরিবার। ধান কাটার শ্রমিক ও পর্যাপ্ত মেশিনের অভাবে বোরো ধান কেটে গোলায় উঠাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা। কারণ নির্দিষ্ট সময়ে ধান কাটতে না পারলে কালবৈশাখী ঝড় ও বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশের খাদ্য সরবরাহের বড় অংশটি নিশ্চিত হয় বোরোর ধানের মাধ্যমে। সরকারি গুদামে মজুতের মূল অংশটিও নির্ভর করে এ ফসল থেকে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে মূলত বোরো কাটা শুরু হলেও এবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। এবার বোরোতে ২ কোটি টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেটের একাংশের অন্তত আড়াইশ হাওরে বোরো আবাদ হয়। দেশের উৎপাদিত মোট ধানের প্রায় ১৯ শতাংশ আসে এসব হাওর থেকে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বোরো ফসল উঠিয়েই ধান বিক্রি করে ধান কাটার শ্রমিক, মাড়াই ও ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এবার করোনার কারণে ধানের দাম আরো কমে যাওয়া আশঙ্কা করছেন তারা।
মূলত বোরো কাটা এখনো পুরোদমে শুরু করা যায়নি। এবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে। কিশোরগঞ্জের ইটনা ধইলং হাওরে প্রায় দুই হাজার মণের ফসল করেছেন বাচ্চু মিয়া। তিনি জানান, পুরো ধান কাটতে আমার প্রয়োজন ৪০ জন শ্রমিক। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১২ জনকে ম্যানেজ করতে পেরেছি। ইতোমধ্যে বিআর ২৮ ধান পেকে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ ধান না কাটতে পারলে নষ্ট হয়ে যাবে। বাকি জাতের ধান আগামী ১০ দিনের মধ্যে কেটে শেষ করতে হবে। না হয় হাওরে পানি চলে আসবে। এখন কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা রিপার ও হারভেস্টার কিনেছি। যন্ত্রপাতিগুলো কৃষকদের দেয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের বরাদ্দ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে হাওরাঞ্চলে ৩৬২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও এক হাজার ৫৬টি রিপার সচল রয়েছে। এ ছাড়াও পুরোনো মেরামতযোগ্য ২২০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ৪৮৭টি রিপার অতি দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চার ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, সারাদেশে উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশের বেশি আসে হাওরাঞ্চল থেকে। কিন্তু কোনো রকম বন্যা হলেই ফসলগুলো তলিয়ে যায়। এতে পথে বসতে হয় কৃষকদের। কৃষি সম্প্রসারণের মহাপরিচালক ড. আবদুল মঈদ বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ৫০ শতাংশ পরিশোধের মাধ্যমে ধান কাটার মেশিন দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ধান কাটার শ্রমিক সংকট জটিল আকার দেখা দিলে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান বলেন, ধান কাটার শ্রমিক নিয়ে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। সে জন্য এবার আমরা অতিরিক্ত ধান কাটার যন্ত্রপাতি দিয়েছি। অন্যান্য জেলা থেকে ধান কাটতে আসার শ্রমিকরা যেন সমস্যায় না পড়েন সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে হাওর এলাকায় শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সেই উদ্যোগ নেয়া হবে।
খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানম জানিয়েছেন, চলতি বোরো মৌসুমে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ১৮ লাখ ২৫ হাজার টন খাদ্যশস্য কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ টন চাল, ৬ লাখ টন ধান ও ৭৫ হাজার টন গম রয়েছে। এর বাইরেও দেড় লাখ টন বোরো আতপ চাল কিনবে সরকার। আগামী ১৫ এপ্রিল থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এই খাদ্যশস্য কেনা হবে। এতে কৃষকরাই লাভবান হবেন এবং তারা ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবেন।