×

পুরনো খবর

উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ করোনা মোকাবিলায় খরচ করা হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২০, ১০:২১ পিএম

উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ করোনা মোকাবিলায় খরচ করা হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

সংসদে সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা এবং সংসদ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রার্দূভাব এখন আমাদের দেশেও পড়েছে। সেকারণে আমরা এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদোনা ঘোষণা করেছি। আমরা অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ আপাতত বন্ধ রেখে করোনা মোকাবিলায় খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী তিন বছর যাতে কোন অসুবিধা না হয় সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা একটি পরিকল্পণা নিয়েছি। এক্ষুনি সমাপ্ত না হলে যাতে কোন অসুবিধা না হয়, সে ধরনের প্রকল্প একটু ধীরে করার চিন্তা ভাবনা করেছি। তবে বেশ কিছু বড় প্রকল্প আমরা শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে কোন ধরনের সমস্যায় এসব প্রকল্প থেকে সহায়তা পাওয়া যায়। সেজন্য তিন বছর মেয়াদী পরিকল্পণা নিয়েছি। আজ শনিবার জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। মাত্র ১ ঘন্টা ২০ মিনিট স্থায়ী হলো একাদশ সংসদের সপ্তম অধিবেশন।

এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি উত্থাপণ করেন । শোক প্রস্তাবে আলোচনায় আরো অংশ নেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম, সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙা। পরে শোক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে গৃহিত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবরকম ভাবে করোনা মোকাবিলার পদক্ষেপ নিয়েছি। স্বল্পমেয়াদী, মধ্য মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছে সরকার। বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। আরও ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি পরিবার রেশন কার্ডের আওতায় আসবে। আর এই এক কোটি লোকের পরিবারের সদস্য সংখ্যা যদি পাঁচজন হয়, তাহলে পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে। বিশ্বের বড় বড় ধনী ও দেশ যখন এ ভাইরাসের প্রকোপে নাজেহাল তখন আমরা করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তিনবছরে মেয়াদী অর্থ নৈতিকভাবে নেতিবাচক যেসব অসুবিধা আসতে পারে তার জন্য প্রণোদোনা ঘোষনা করেছি। শিল্প কৃষি খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিক কৃষক, ব্যবসায়ী সবার বিষয় বিবেচনা করে আমরা প্যাকেজ তৈরি করেছি। আমরা ইতিমধ্যে প্রায় ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রনোদোনা প্যাকেজ দিয়েছি। যা জিডিপির ৩.৩ শতাংশ। কৃষিতে ৪ শতাংশ সুধে ঋণ দেব আমরা। কৃষি উৃৎপাদন অব্যাহত রাখবো। এময় তিনি দিন মজুর,কলেজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সকলকে ধান কাটতে সহায়তার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বের কত শক্তিশারী দেশ, কত তাদের অস্ত্র তা কোন কাজে লাগলো না একটা ভাইরাসের কাছে। পৃথিবীর প্রায় ১০৯টি দেশ আজ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ,এই করোনা ভাইরাসের কারণে ২২ লাখ ৬০ হাজারের ওপরও মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭১৪ জন। প্রতি মিনিটে করোনার কারণে মৃত্যু বরণ করছে। আমাদের দেশে যখনই এ ভাইরাসের সম্ভাবনা দেখেছি তখনই সতর্কতা অবলম্বণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলা করেছি, কিন্তু ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যের এ দুর্যোগ এর আগে মোকাবিলা করেনি। ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের পূর্ব কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ করি। সকল বিমান বন্দর, সমুদ্র, স্থল বন্দর সব কিছু বন্ধ করে দিই। এবিষয় ডাক্তার, নার্স, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অক্লান্ত কাজ করে চলেছে। এ পর্যন্ত দেশে ২১ হাজার ৩০৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তার মধ্যে ২ হাজার ১৪৪ জন করোনা চিহ্নিত হয়েছে এবং ৮৪ জন মারা গেছে। বিশ্বের অনেক দেশেও অনেক বাঙালী মৃত্যু বরণ করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, কতদিন এই অবস্থা থাকবে তা কেউ বলতে পারছে না। তবে আমাদের দেশেল মানুষ বড় সাহসী তারা কোন নিয়ম কানন মানছেণ না। বাইরে বেরিয়ে গল্প গুজব করছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেছি। কিন্তু স্বাস্থ্যে যে এমন ঝড় বয়ে যাবে তা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। পূর্বে আমাদের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করেছি। সব রকম ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। বিনা পয়সায় চিকিৎসা হচ্ছে। প্রত্যেকটি বন্দরে টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মানুষকে সচেতন করা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুল কলেজ বন্ধ করেছি, যাতয়াত সিমিত করেছি। ন্যাশনাল প্লান ফর কোভিট-১৯ প্রণয়ন করি। সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি। খাদ্যে যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। তিনি বলেন, ঢাকার অনেকগুলো হাসপাতাল সহ প্রত্যেক জেলা হাসপাতালে আইসিইউ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেলা উপজেলা ইউনিয়ন পর্যন্ত কমিটি করা হয়েছে। যাতে করোনার চিকিৎসা পায়। বিনা পয়সায় চিকিৎসা করা হচ্ছে। এতে অনেক বিশ্ব সংস্থা এগিয়ে এসেছে। ৯২ হাজার কিট সংগ্রহ করা হয়েছে, ২০ হাজার বিলি করা হয়েছে এবং ৭২ হাজার এখনো সংগ্রহে আছে।

তিনি বলেন, আমরা ২০২০ সালে জাতীর পিতার জম্ম শতবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নেই। যা আমার কাছে একটা বিশাল পাওয়া ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা তা তেমন ভাবে উৎযাপন না করে স্থগিত করে দিন।

এদিকে শনিবার বিকেল ৫টায় করোনা আতঙ্কের মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে সংসদের সপ্তম অধিবেশন বসে। মাত্র ১ ঘন্টা বিশ মিনিট আলোচনা শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শোক প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন এবং সাথে সাথে রাষ্ট্রপতির সংসদ সমাপ্ত বিষয়ক বিজ্ঞপ্তিটি পাঠ করে শোনান। এটি হলো বাংলাদেশের সংসদীয় বিষয়ক সর্ব স্বল্পতম অধিবেশনের রেকর্ড। এবং একই দিনে সংসদ শুরু হয়ে শেষ হবার নজির এর আগে আর কোন অধিবেশনে ছিল না। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় ব্যতিক্রমী এ অধিবেশন শুরু হয় বাছাইকৃত সংসদ সদস্যদের (এমপি) নিয়ে। সম্ভব সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে এতে অংশ নেন এমপিরা। এসময় তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস দেখা যায়। এক অধিবেশন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আবার সংসদ বসার বাধ্যবাধকতা সংবিধানে রয়েছে। সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে ১৮ এপ্রিল সংসদের অধিবেশনটি বসলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App