×

সারাদেশ

আড়ত বন্ধে হিম হচ্ছে ইলিশ, জেলেদের হাহাকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২০, ০২:৩৪ পিএম

আড়ত বন্ধে হিম হচ্ছে ইলিশ, জেলেদের হাহাকার

চরফ্যাশন উপজেলার নদী উপকূলের জেলেরা

আড়ত বন্ধে হিম হচ্ছে ইলিশ, জেলেদের হাহাকার

নদী-সাগরে যেতে পারছে না নৌকা

আড়ত বন্ধে হিম হচ্ছে ইলিশ, জেলেদের হাহাকার

নৌকা চলাচল বন্ধ

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়েছে বাংলাদেশও। লকডাউনে আটকে গেছে দক্ষিণের হাজারো জেলের জীবন-জীবিকা। বিশেষ করে দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শত, শত মাছের আড়ৎ বন্ধ হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরফ্যাশনে একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইলিশের পাইকাররা রপ্তানি করতে পারছে না ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। বরফ মিলে শতশত টন ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ পড়ে রয়েছে হিম হয়ে। যার ফলে মৎস ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহে লোকসান হচ্ছে শত কোটি টাকা। এছাড়াও প্রতি বছরের পহেলা বৈশাখে চরফ্যাশন ও মনপুরা থেকে ঢাকাসহ চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন জেলায় প্রচুর মুনাফায় হাজার হাজার টন ইলিশ রপ্তানি হতো। স্থানীয় বাজারে লাখ টাকার ইলিশ ক্রয় বিক্রয় হতো। এবছর মহামারি ভাইরাস ও অবরোধ থাকায় বাজারে পাইকার ও ক্রেতা না থাকায় বিক্রি হয়নি স্বাদের এই রূপালী ইলিশ। [caption id="attachment_215565" align="aligncenter" width="960"] নদী-সাগরে যেতে পারছে না নৌকা[/caption] শুধু বিপাকেই পড়েননি জেলেরা, রীতিমত হাহাকার চলছে উপকূলের জেলেদের ঘরে ঘরে। একদিকে করোনা অন্যদিকে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে চলছে অবরোধ। সব মিলিয়ে এখন জীবিকা নেই কর্মহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার জেলের। জীবিকার জন্য জেলে পরিবারের রোদে পোড়া কালো মানুষগুলো নদী ও সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল হলেও লকডাউনে এখন সরকারি ত্রাণই যেন তাদের একমাত্র ভরসা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা ভাইরাস ও অবরোধকে উপেক্ষা করে নদীতে গিয়েও কোস্টগার্ডের তাড়া খেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন তেতুলিয়া ও মেঘনাপাড়ের জেলেরা। অনেক জেলেরা এখন চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। আবার নতুন বছর আসায় আড়ৎ ও নৌকা মহাজনদের সঙ্গে বছর জুড়ে মাছ দেয়ার চুক্তিবদ্ধ হয়ে অনেকেই নিয়েছেন দাদন। জেলেদের দাদনের এ টাকা চাল ও বাজার খরচেই শেষ হয়ে গেছে ভাঙাঘরের চালা ঠিক করাসহ অন্যান্য স্বপ্ন। লকডাউন ও অবরোধের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়া অনেক জেলে এখন ছেঁড়া জাল জোড়া দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন নদীপাড়ে। সামরাজ ও মাইনুদ্দিন ঘাটের একাধিক জেলে জানান, সপ্তাহ ও মাস জুড়ে নদী সাগরে থাকার অভ্যাস আমাদের, তাই লকডাউন ও অবরোধের জন্য নদীতে যেতে না পাড়ায় ঘরে বসেই অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। বাড়িসংলগ্ন নদী পাড়ে হাত জাল মারলেও মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য ছোটমাছ পেলেও বিক্রি করে তা দিয়ে বাজার সদাই কেনার মতো টাকাও জুটছে না কপালে। মাছের সিজন না থাকা ও অবরোধে বছরের ৬ থেকে ৭ মাস ডাঙ্গায় থাকতে হয়, এসময় মানুষের বাড়ি ঘরে কামলা মজুরের কাজ করলেও করোনা ভাইরাসের জন্য তা আর পারছি না। [caption id="attachment_215567" align="alignnone" width="960"] নৌকা চলাচল বন্ধ[/caption] ইদ্রিস মাঝি বলেন, ঘর থেকে বের হতে পারছিনা তবে সুযোগ পেলে মাঝে মধ্যে নদীতে গেলেও প্রজনন মৌসুম প্রায় শেষ হওয়ায় এখন আর তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। সামান্য পাওয়া গেলেও ভাইরাসের কারণে মাছের আড়তগুলো বন্ধ থাকায় ডাকে বিক্রি করতেও অসুবিধা হচ্ছে। হাজারিগঞ্জ মাইনুদ্দিন মৎস ঘাটের ব্যবসায়ি ইসমাইল হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের জন্য নৌ পথ বন্ধ থাকায় ইলিশসহ সকল প্রকারের মাছ রপ্তানি বন্ধে আমার কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে। ব্যবসায়ী মো. লোকমান হোসেন বলেন, সামরাজ ঘাটে প্রায় ১০০টি মাছের আড়ৎ রয়েছে। বর্তমানে সকল আড়ৎ বন্ধ থাকায় প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ও মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার লোকসান গুনছেন সামরাজের ব্যবসায়ীরা। নদীতে প্রত্যেক নৌকা ও ট্রলারে শত কোটি টাকার দাদন রয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ব্যাংক ঋণ। আমরা জানি না এ সঙ্কট কিভাবে কাটিয়ে উঠবো। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, গত মার্চ মাসে প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে রপ্তানি হয়েছিল। অবরোধ ও করোনা ভাইরাসে লকডাউন থাকায় জেলেরাও নদী সাগরে যাচ্ছে না। ফলে ইলিশের এ রপ্তানি বন্ধ হয়ে আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App