×

স্বাস্থ্য

ডা. মঈনের শরীরে করোনা সংক্রমণ কীভাবে, স্পষ্ট নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫৩ এএম

সিলেটের যে তিনটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয় তার একটিতেও দায়িত্ব পালন করেননি ডা. মঈন

কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে চিকিৎসকদের মধ্যে প্রথম মৃত্যুবরণকারী ডা. মঈন উদ্দিন কীভাবে সংক্রমিত হন, তার সুরাহা হয়নি এখনো। সিলেটের যে তিনটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সেই তিনটির একটিতেও দায়িত্ব পালন করেননি ডা. মঈন। এছাড়া তিনিই ছিলেন সিলেটে প্রথম করোনায় শনাক্ত রোগী। ফলে ডা. মঈনকে করোনাযোদ্ধা বলা যায় কিনা- সে প্রশ্ন উঠেছে স্বাভাবিকভাবেই। ডা. মঈন গত ৩০ মার্চ থেকে নিজ বাসায় কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। ৫ এপ্রিল আইইডিসিআর থেকে তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপর সিলেটের হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ৭ এপ্রিল সিলেট নগরের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ৮ এপ্রিল বিকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। বুধবার মারা যান তিনি। ডা. মঈনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিলেটে করোনা রোগীদের জন্য তিনটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল, সিলেট সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও শাহপরাণ সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই তিনটি হাসপাতালের কোথাও তিনি চাকরি করতেন না। তিনি ওসমানী হাসপাতালে চাকরি করতেন। অতএব, করোনা আক্রান্তকে তার চিকিৎসা দেয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। অন্যদিকে সিলেটে করোনা

আক্রান্তদের মধ্যে ডা. মঈনই প্রথম। এরমানে তিনি নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে করোনা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এসেছিলেন। ইসলামি ছাত্রশিবির ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি ডা. মঈন জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইবনে সিনা হাসপাতালের স্থানীয় শাখায় রোগী দেখতেন। সেখানেও কারো সংস্পর্শে আসতে পারেন। প্রথমদিকে প্রবাসী স্বজনদের মাধ্যমে ডা. মঈন করোনা সংক্রমিত হতে পারেন বলে ধারণা করেছিলেন সিলেটের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু পরে ডা. মঈনের প্রবাসী কোনো স্বজন দেশে আসার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ডা. মঈনের চেম্বারে তথ্য গোপন করে কোনো প্রবাসী চিকিৎসা নিয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ভোরের কাগজকে বলেন, ডা. মঈন ও তার স্ত্রী দুজনেই আমাকে জানিয়েছে, মঈন তার চেম্বারে একজন সন্দেহভাজন রোগী দেখেছিল। তারপরদিন সে করোনা টেস্ট করে এবং রিপোর্ট পজিটিভ আসে। কিন্তু ওই সন্দেহভাজন রোগীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিএমএ মহাসচিব বলেন, এদিকে ডা. মঈনের মামাশ^শুর ডা. জালালী আমাকে বলেছেন, মঈনের প্রাইভেট চেম্বার ইবনে সিনায় তার পাশের এক অর্থপেডিক্সের কাছে সন্দেহভাজন একজন রোগী এসেছিলেন। ডা. মঈন তার খুশখুশি কাশি ও জ¦র দেখেই করোনা সন্দেহ করে এবং তাকে তার কক্ষে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। সম্ভবত, ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই মঈন করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়। কিন্তু সেই ব্যক্তিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার পাশের বাড়িতেও ইতালি প্রবাসী একজন এসেছেন। অন্যদিকে ডা. মঈনের শরীরে করোনা ছড়ানো ব্যক্তি এখনো শনাক্ত না হওয়ায় ওই ব্যক্তি আরো মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারেন- এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও দায়িত্বশীলরা। ওসমানী হাসপাতাল ছাড়াও তিনি নগরীর সোবহানীঘাট এলাকায় ইবনে সিনা নামক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়মিত রোগী দেখতেন। এছাড়া তিনি প্রতিদিন সকালে হাউজিং এস্টেট এলাকায় মর্নিংওয়াক (ব্যায়াম) করতেন। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করতেন। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. ইউনুছুর রহমানের বরাত দিয়ে আমাদের সিলেট ব্যুরোপ্রধান ফারুক আহমদ জানিয়েছেন, ডা. মঈন উদ্দিনের সংস্পর্শে আসা সবারই খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। তার পরিবারের সদস্য, সহকারী, তার কাছে চিকিৎসা নেয়া রোগী, তার ফার্মাসিস্ট সবার করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউই করোনা পজিটিভ নন। ফলে আক্রান্ত চিকিৎসক যে ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেই ওয়ার্ড সচল আছে। চিকিৎসকরাও সেখানে সেবা দিচ্ছেন। একই হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ডা. মঈন ৩০ মার্চ থেকেই তার ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে তিনি ইবনে সিনা হাসপাতালের কেবিনে ৪/৫ জন রোগী দেখেছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কয়েকজন রোগীও দেখেছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে একজন রোগী দেখেছেন। ওসমানীর আইসিইউতেই সেই রোগী মারা যান। সন্দেহ ছিল- এই রোগীর মাধ্যমে মঈন আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এই রোগী মারা যাওয়ার আগে তার নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App