×

সারাদেশ

লাইভে এসে স্ত্রীকে হত্যা, যা বলছে পরিবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২০, ০৩:১০ পিএম

লাইভে এসে স্ত্রীকে হত্যা, যা বলছে পরিবার

গ্রেফতার টুটুল

করোনা ইস্যু নিয়ে সারাদেশে যখন বিভিন্ন খবরের ছড়াছড়ি, তখন ফেনীতে নিজের স্ত্রীকে ফেসবুক লাইভে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা তোলপাড় করেছে সারা দেশ। এমন একটি নিৃশংস ঘটনা নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয় মানুষের মনে। কেন ঘটল কী কারণে ঘটল। কেন নিজের স্ত্রীকে এমন ভাবে হত্যা করল ওই যুবক? তবে নিহত ও ঘাতকের পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন ভিন্ন মতামত ও তথ্য।

নিহত তাহমিনা আক্তারের স্বজনরা বলছেন, যৌতুকের দাবিতে অনেক দিন ধরে নির্যাতনের একপর্যায়ে এবং নিজের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ঢাকতে ওবায়দুল হক টুটুল (৩২) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অপর দিকে টুটুলের স্বজনরা বলছেন, অবৈধ সম্পর্ক ছিল তাহমিনার। আর প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহের কারণেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। তবে টুটুলের মানসিক সুস্থতার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দম্পতির মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশীরা।

বুধবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১টার দিকে ’টুটুল ভুইয়া’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায় ওই ঘাতক। ফেনী পৌরসভার উত্তর বারাহীপুর ভুইয়া বাড়িতে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। হত্যার পর নিজেই ৯৯৯ ফোন দেয় টুটুল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে। তাহমিনার ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা ও ফেসবুকে প্রচার চালানো মোবাইলও জব্দ করা হয়।

এ ঘটনায় বুধবার রাত ১২টায় নিহত তাহমিনার বাবা সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে ঘাতক টুটুলের নাম উল্লেখ করে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সাহাবুদ্দিন থানার ভেতরে বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে আমার মেয়ে তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে ওবায়দুল হক টুটুলের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এরইমধ্যে টুটুল আমার কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও নেয়। কিন্তু আরও টাকার জন্য চাপাচাপি করলে আমি তা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এ কারণেই সে আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শস্তি চাই।’

[caption id="attachment_215371" align="alignnone" width="700"]লাইভে এসে স্ত্রীকে হত্যা গ্রেফতার টুটুল[/caption]

নিহতের বোন রেহানা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকায় থাকা অবস্থায় অবৈধ প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে টুটুল। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। টুটুল মাদকাসক্ত। তার চরিত্র খারাপ। বিয়ের আগেও বহু মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ২০১৩ সালে আমার বিয়ের সময় তাহমিনার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্কের সুবাদে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে আমার বোনকে সে মারধর করতো।’

টুটুলের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন মেহেদী এ অভিযোগ অস্বীকার করে তাহমিনার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি দাবি করেন, ‘ভাবির (তাহমিনা আক্তার) অন্য ব্যক্তির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক থাকায় আমার ভাই উত্তেজিত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, ওবায়দুল হক টুটুল উত্তর বারাহীপুর এলাকার গোলাম মাওলা ভুঞার ছেলে। তার দেড় বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘টুটুল ঢাকায় একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করে বলে জানতাম। সন্তান নিয়ে তার স্ত্রী বাড়িতেই থাকতেন। পাঁচ বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে বিয়ে হয়েছিল তাদের। কিন্তু বিয়ের পর থেকে আর্থিক অসচ্ছলতা নিয়ে তাদের পরিবারে প্রায়ই ঝগড়া হতো শুনেছি।’

পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পারিবারিক কলহের কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। আমার মনে হয়েছে এর পেছনে প্রধান কারণ থাকতে পারে স্বামী বা স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, আরেকটি কারণ যৌতুক এবং অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা। এর বাইরে মানসিক সুস্থতার বিষয়টিসহ সবদিক খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে।’

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App