×

আন্তর্জাতিক

লকডাউন না মানলেই তাড়া করছে ভূত!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২০, ১২:৫৬ পিএম

লকডাউন না মানলেই তাড়া করছে ভূত!

ইন্দোনেশিয়ায় ভূতরূপে বসে আছে দু জন

জনগণকে লকডাউনের বাধ্যবাধকতা মানাতে সরকার ও প্রশাসনকে কতো কিছুই না করতে হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে সামাল দেয়া সম্ভব না বলে সেনাবাহিনী নামাচ্ছে সব সরকারই। তবে ব্যতিক্রম আয়োজন ইন্দোনেশিয়ার এক গ্রামে। রাস্তায় বের হলেই তাড়া করছে ভূত! সেই ভয়ে রাতে বাড়ির বাইরে বেরতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। অকারণে বাইরে বেরলেই ধেয়ে আসছে সাদা পোশাকের চেহারারা। তাদের লাল চোখ থেকে যেন আগুন ঠিকরে বেরচ্ছে। চাঁদনি রাতে তাদের লম্ফঝম্ফ দেখলে যে কোনো মানুষের পিলে চমকে যাবেই। এই অশরীরী আত্মা বা ভূতকে ইন্দোনেশিয়ার মানুষ জানে ‘পোকং’ নামে। আর এই পোকংদের দাপটেই ইন্দোনেশিয়ার কেপু গ্রামে সামজিক দূরত্ব পালিত হচ্ছে সাফল্যের সঙ্গেই। কুসংস্কারকে হাতিয়ার করেই জাভা দ্বীপের এই গ্রামে মানুষকে করোনার মারণ ছোবল থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের সঙ্গে পরামর্শ করেই এই নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করছেন গ্রামের যুবকরা। তাঁদের দলের নেতা আনজার পানক্যানিংতাস জানিয়েছেন, ‘আমরা অন্যরকম ভাবে কিছু করার কথা ভাবছিলাম। তখনই পোকং ব্যবহারের কথা মাথায় আসে। কারণ, এর কিংম্ভূত কিমাকার চেহারা আর অন্ধবিশ্বাসের জন্য পোকংকে গ্রামের মানুষ অত্যন্ত ভয় পায়। ফলে, এভাবে ভয় দেখিয়ে গ্রামের মানুষকে বাড়িতে আটকে রাখা সহজ হবে। আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশও ভালোভাবে কার্যকর করা যাবে।’ ইন্দোনেশিয়ার লোকগাথায় অতৃপ্ত আত্মা পোকংয়ের রূপে সমাজে ঘুরে বেড়ায়। আর সুযোগ পেলেই মানুষের অনিষ্ট করে। তাই, গ্রামের মানুষকে সামাজিক বিধি মানতে বাধ্য করানোর জন্য পোকং ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রথম দিকে কিন্তু এই কৌশল ঠিকঠাক কাজে লাগছিল না। সারাক্ষণ পোকংকে ঘুরে বেড়াতে দেখে ব্যাপারটা অনেকের কাছেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। এরপরই পরিকল্পনায় কিছুটা বদল আনা হয়। সব সময় ঘোরাঘুরি না করে পোকংরা আচমকা বাইরে বেরনো মানুষের সামনে উদয় হতে শুরু করে। ব্যাস, তাতেই বাজিমাৎ। আচম্বিতে ঘাড়ের কাছে বিকট চেহারার ভূতকে দাঁত খিচোতে দেখলে, কার না ভয় লাগে! প্রশাসন গ্রামের যুবকদের এই অভিনব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। যুবকরাই পালা করে গায়ে সাদা পোশাক চাপিয়ে, মুখে সাদা পাউডার মেখে, চোখের চারপাশে লাল রং মেখে পোকংয়ের ভূমিকায় নিখুঁত অভিনয় করে পাহারাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ায় এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ২০০-র বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গিয়েছেন ৩৭৩ জন। প্রতি মুহূর্তে এই সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, উপযুক্ত কঠোর পদক্ষেপ না নিলে মে মাসের শেষে ১০ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। আর, মারা যেতে পারেন ১ লক্ষ ৪০ হাজার জন। তবুও দেশজুড়ে লকডাউন না করে নির্দেশ দিয়েছেন পারস্পরিক সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং সুস্থ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে। এরপরই কেপু গ্রামের যুবকরা ভূতের ভয় দেখিয়ে মানুষকে ঘরে আটকে রাখার ফন্দি বের করেন। আর এই অভিনব পদ্ধতি এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের প্রান্তেও চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App