×

জাতীয়

সেই নম্বর দুটো কার?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২০, ০৫:২৩ পিএম

সেই নম্বর দুটো কার?

বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

কলকাতায় আত্মগোপনে থেকে বাংলাদেশের দুটি ফোন নম্বরে নিয়মিত কথা বলতেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদ। পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের ভাড়া বাড়িতে ২৩ বছর ধরে নিজেকে লুকিয়ে রেখে প্রায় প্রতিদিন কথা বলতেন বাংলাদেশে। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য, তার সেই লুকিয়ে কথা বলা গত ১০ বছরেও জানতে বা বুঝতে পারেননি তার চেয়ে বয়সে ৩৩ বছরের ছোট পার্ক স্ট্রিটে বসবাসকারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। আর বাংলাদেশে মাজেদের যোগাযোগ করার মাধ্যম ছিল দুটি ফোন নম্বর। এর মধ্যে একটি গ্রামীণফোন. আরেকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানার টেলিটক কোম্পানির। সেই দুটি নম্বর থেকেই খুনি মাজেদ প্রতিদিন বাংলাদেশে কথা বলতেন। গত ৭ এপ্রিল রাজধানীর মিরপুর থেকে রহস্যজনকভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর এই খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরপরই কলকাতা তথা পার্ক স্ট্রিটে তোলপাড় ওঠে। তাদের সেই ভদ্র-শান্ত মাস্টারমশাই-ই যে বঙ্গবন্ধুর খুনি তা জানার পর বাকরুদ্ধ হয়ে যান পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দারা। এরপর থেকেই মাজেদের ২৩ বছরের আত্মগোপন নিয়ে রহস্য দানা বাঁধে। পার্ক স্ট্রিটে প্রায় দুই যুগ ধরে আত্মগোপন আর বাংলাদেশে গিয়ে ধরা পড়ার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা শুরু হয়। কৌতুহল বাড়ে তার শেল্টারদাতাদের নিয়েও। কার হাত ধরে তিনি কলকাতায় ডেরা তৈরি করেছিলেন আর কার ওপর ভরসা করে অচেনা ভিনদেশি বুড়ো লোককে বিয়ে করেছিলেন পার্ক স্ট্রিটের সেই অল্প বয়সী নারী- এসব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এসব রহস্য সামনে রেখেই অভিযানে নেমে পড়ে কলকাতা পুলিশ। পরে পুলিশ খুনি মাজেদের মোবাইল ফোনে তল্লাশি চালিয়ে দুটি নম্বর উদ্ধার করে, যে দুটি নম্বর থেকে প্রায় প্রতিদিন মাজেদ বাংলাদেশে কথা বলতেন। তবে কার সঙ্গে কথা বলতেন, সেই দুটি নম্বরের ব্যবহারকারী কারা- সেসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কলকাতা পুলিশকে সহায়তা নিতে হবে বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে। এদিকে, মাজেদের আত্মগোপন রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে কলকাতার ‘বর্তমান’ পত্রিকার সুজিত ভৌমিক তুলে ধরেন গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য। তার ধারাবাহিক প্রতিবেদনে মাজেদরহস্যের জট খুলতে শুরু করে। গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) সুজিত ভৌমিকের ‘রোজ দেশে ফোন করাই কাল হল মাজেদের’ শিরোনামে সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আর সেই প্রতিবেদনেই বাংলাদেশের দুটি ফোন নম্বর উল্লেখ করা হয়। একটি গ্রামীণফোন (+৮৮০১৭১১১৮৬২৩৯) আরেকটি টেলিটক (+৮৮০১৫৫২৩৮৭৯১৩) নম্বর।
বুধবার রাতেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা নম্বর দুটিতে ভোরের কাগজ লাইভের পক্ষ থেকে ফোন করা হয়। এসময় গ্রামীণফোনের নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর টেলিটকের নম্বরটি সচল নেই বলে জানানো হয়। তবে ট্রুকলারের মাধ্যমে জানা যায়, গ্রামীণফোনের নম্বরটি শাহিন নামের এক ব্যবহারকারীর। আর টেলিটকের ব্যবহারকারীর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি ট্রকলারের মাধ্যমে।। যদিও গ্রামীণফোন নম্বর ব্যবহারকারী সেই শাহিন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
গত ১০ এপ্রিল ফাঁসি কার্যকর করার আগের দিনে কারাগারে খুনি মাজেদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী সালেহা বেগম, স্ত্রীর বোন ও বোন জামাই। সঙ্গে আরো ছিলেন মাজেদের ভাতিজা ও একজন চাচাশ্বশুরসহ মোট ৫ জন। তাদের মধ্যে শাহিন নামে কেউ ছিলেন কিনা তা জানা যায়নি। ভারতীয় গোয়েন্দারের ধারণা, বাংলাদেশে প্রতিদিন কথা বলাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল মাজেদের। কেননা, বাংলাদেশে মাজেদের পরিবারের সদস্যদের ফোনে আড়ি পাততো ঢাকার গোয়েন্দারা। সেই আড়ি পাতা থেকেই মাজেদের আত্মগোপন রহস্য জানা হয়ে যায় তাদের। গ্রেপ্তারের ব্লুপ্রিন্টও তৈরি হয়। আর এ ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে কলকাতার গোয়েন্দাদের সহায়তা নিয়েছিল ঢাকার গোয়েন্দারা। যদিও মাজেদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে কলকাতা আর ঢাকার ব্যাখ্যার মধ্যে যেমন কোনো মিল নেই, তেমনি তার আত্মগোপন নিয়েও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি গণমাধ্যমকে। এদিকে, কলকাতায় মাজেদ যে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন সে দুটির একটিও নিজের নামে ছিল না। দুটো সিমকার্ডই ছিল সেখানকার স্ত্রীর নামে। প্রশ্ন উঠেছে, স্ত্রীর নামে নেয়া মোবাইল ফোন থেকে বছরের পর বছর ধরে প্রতিদিন বাংলাদেশে কথা বলে গেলেন আর তার স্ত্রী কোনো কিছুই আঁচ করতে পারলেন না। সেটা কীভাবে সম্ভব? মাজেদের বাংলাদেশে কথা বলা দুটি নম্বরের ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করতে পারলেই সব ধোঁয়াশা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমনটাই মনে করছেন অনেকেই। তবে সেই কাজটা এখন গোয়েন্দারা করবেন কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। আরো পড়ুন-

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App