এক মানব দরদী চিকিৎসক ছিলেন মঈন উদ্দিন। সর্বমহলে তিনি ‘গরীবের ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত। বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের ব্যবস্থাপত্র দিতেন। বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে ছাতকের নাদামপুরে ছুটে আসতেন। ৩০ মার্চ পর্যন্ত রোগীদের সেবা দিয়েছেন তিনি। এরপর চলে গেছেন কোয়ারেন্টাইনে।

এলাকার মুরুব্বী আশরাফুল আহমদ বলেন, ডা. মঈনুদ্দিন শুধু গরিবের ডাক্তার ছিলেন না। এলাকার কোনো রোগী সিলেট চেম্বারে গেলেও তাদের ফ্রি দেখতেন। তার বাবা মুনসী আহমদ উদ্দিন ছিলেন একজন পল্লী চিকিৎসক। মৃত্যুর আগে ছেলেকে বলেছিলেন, এলাকার অসহায় রোগীদের যেন নিয়মিত সেবা দেন। বাবার সেই কথা রেখেছেন ডা. মঈন উদ্দিন।

ডা. মঈন উদ্দিন সিলেটে করোনা যুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা ছিলেন। ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। এ হাসপাতালের উদ্যোগে গঠিত সিলেট করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। এর আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটিরও সদস্য ছিলেন।

জানা যায়, ডা. মঈন উদ্দিন ১৯৭৩ সালের ২ মে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নাদামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি। এরপর ধারণ নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯০ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। একই বছর ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৮ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর তিনি এফসিপিএস ও এমডি কোর্স সম্পন্ন করেন।

২২তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ স্বাস্থ্য ক্যাডারে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৪ সালের ২০ মে ওসমানী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।

মঈনুদ্দিনের স্ত্রী ডা. রিফাত জাহান সিলেটের বেসরকারি পার্ক ভিউ মেডিক্যাল কলেজের ফিজিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তার বড় ছেলে জিহাদের বয়স ১২ বছর। আর ছোট ছেলে জায়ানের বয়স ৭ বছর। তারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম ডা. মঈন উদ্দিন।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডা. মঈন উদ্দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বুধবার (১৫ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৭টায় ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে মারা যান তিনি। গত ৫ এপ্রিল করোনা আক্রান্তের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এরপর বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন। তিনিই সিলেটের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৮ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়।