×

জাতীয়

বাঙালির বর্ণহীন বর্ষবরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৩৭ এএম

বাঙালির বর্ণহীন বর্ষবরণ

বাংলা নববর্ষের এবার রাজপথে ঘুরবে না চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে প্রকাশ করা হয়েছে এই ডিজিটাল পোস্টার।

বাঙালির বর্ণহীন বর্ষবরণ

ফাইল ছবি

মঙ্গল শোভাযাত্রার পোস্টারে দেয়া হয়েছে অভয়বাণী- ‘মুক্ত করো ভয়’

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস এবার সবকিছুর মতোই বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আনন্দ থামিয়ে দিয়েছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা হৃদয় নিংড়ানো আবেগে পথে পথে আলপনা আর দেয়াল রাঙিয়ে জাতিসত্তার চেতনা কথা, বাঙালিয়ানা আর বাঙালির রঙিন সাংস্কৃতিক চর্চার কথা বলছে না। বিশ^ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার ঘুরে বেড়াবে না রাজধানীর রাজপথে। তবে প্রকাশ হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার পোস্টার যার স্লোগানে ক্রান্তিকালে নিমজ্জিত মানুষকে দেয়া হয়েছে অভয় বাণী। ‘মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ স্লোগানটি বেছে নেয়া হয়েছে কালো জমিনের চমৎকার সজ্জার পোস্টারে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী ভোরের কাগজকে বলেন, কবিগুরু যে প্রবল প্রাণে বৈশাখকে আহ্বান করেছিলেন, সেতো আমাদের বাংলার মানুষের যাপিত জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী এই দুর্যোগের মধ্যে এ আয়োজন করতে গেলে বিপদ আছে। তাই সরকারের উদ্যোগকে আমি সমর্থন করছি।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, পহেলা বৈশাখে আনন্দ হয়। এই আনন্দ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বৈশাখের আনন্দ মনে যেমন পরিবর্তন ঘটায়, প্রকৃতিতেও তেমন একটা পরিবর্তন বয়ে আনে। কিন্তু করোনার কারণে আমাদের মুজিববর্ষের আয়োজন থেকে শুরু করে সব আয়োজন ভেস্তে গেল। প্রকৃতির এই বিপর্যয়কে মেনে নিতেই হবে। এটা তো আমাদের একার দুর্যোগ নয়, সারা বিশ্বের। ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ও জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী বলেন, ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলা গান অবলম্বন করে আমাদের মধ্যে যাতে বাঙালি সত্তা বিকশিত হয় সে লক্ষ্য নিয়ে ছায়ানট রমনার বটমূলে মেলার আয়োজন করে। এ বছর মহামারীর মধ্যে যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে, তাতে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার পরিবেশও নেই। আমরা দুটো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথমত, দুর্গত মানুষ এবং বিপদগ্রস্ত শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো এবং দ্বিতীয়ত, মৃত্যুভয়ে আতঙ্কে যারা ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন তাদের এই হতাশা কাটানোর উপায় বাতলানো।

সেজন্য গত ৩ বছর ধরে বিটিভিতে যে গানগুলো সম্প্রচার করেছে, তার মধ্য থেকে কয়েকটি গান আমরা বাছাই করেছি। যে গান মানুষের মধ্যে প্রশান্তি জাগায় এবং তাদের মধ্যে আশাবাদ জাগাতে পারে। এই গানগুলো নিয়ে বিটিভিতে এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান আজ সকাল ৭টায় প্রচার করবে। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, আগে তো মানুষের প্রাণ বাঁচাতে হবে। তারপর উৎসব। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, করোনার ভয়াবহতার কারণে এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা বের না হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা ‘ডিজিটাল’ পদ্ধতিতে বর্ষবরণ করছি। প্রতি বছরই আমরা পোস্টার করি। এটি এবারো করেছি। তিনি জানান, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি’ থেকে ‘মানুষকে ধ্বংস করা যায় কিন্তু পরাজিত করা যায় না’ লাইনটি নেয়া হয়েছে, এভাবেই যা এতদিন মোটিফের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হতো, তা এবার পোস্টারেই তুলে ধরা হয়েছে। জনসমাগম না করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’ প্রতিপাদ্য করে এবার বর্ষবরণের আয়োজন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ।

[caption id="attachment_214947" align="aligncenter" width="700"] ফাইল ছবি[/caption]

বাণী ও কর্মসূচি : আজকের অন্যরকম বৈশাখের দিনটি উপলক্ষে দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধানরা। দেশের মানুষকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পহেলা বৈশাখ তথা ডিজিটালি বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে ডাকে সাড়া দিয়ে সীমিত আকারে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’- এ প্রতিপাদ্যে সীমিত আকারে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ২ দিন আগে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি দেয়া হয়।

বিবৃতি জানানো হয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নবসজ্জার অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে আজ পহেলা বৈশাখ ভোর ৭টা থেকে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের কাছ থেকে সব বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এ অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা রাখবে। এই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক নানা বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের নির্বাচিত গান এবং বর্তমান সংকটের প্রেক্ষাপটে ছায়ানট সভাপতি সনজীদা খাতুনের সমাপনী কথন দিয়ে, যা বিটিভি ছাড়াও ছায়ানটের ইউটিউব চ্যানেলেও সম্প্রচারিত হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আরেকটি ধারণকৃত অনুষ্ঠান বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধারণকৃত একটি বক্তব্য ছাড়াও বৈশাখের গান, নৃত্য, আবৃত্তি আয়োজন থাকবে। ফেসবুকে ডিজিটালি বর্ষবরণের আয়োজন করেছে উদীচী। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App