×

অর্থনীতি

করোনা সংকটে ভ্যাট দিতে অনীহা ব্যবসায়ীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২০, ০১:১৭ পিএম

করোনা সংকটে ভ্যাট দিতে অনীহা ব্যবসায়ীদের

এনবিআর।

করোনা মহামারির কারণে দেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। বন্ধ রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের প্রতিষ্ঠান। এই পরিস্থিতিতে ভ্যাট দিতে অনীহা ব্যবসায়ীদের। তারা বলছেন, একে তো প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, নানা সঙ্কট সামনে অপেক্ষমাণ। এই পরিস্থিতিতে ভ্যাট দেয়া খুবই মুশকিল। একটি ব্যবসায়ী সংগঠনও ভ্যাট দিতে অপারগতার কথা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময় নির্ধারণ করে একটি সার্কুলার জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পরই মূলত ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে আপত্তি এসেছে। প্রথমে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি এই পরিস্থিতিতে সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে দেশের সব সিরামিক (টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার) কারখানা বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট দিতে অনীহা প্রকাশ করে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। সংগঠনটি বলছে, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে অধিকাংশ সিরামিকশিল্প এলাকা প্রশাসনের অবরোধ ঘোষণার আওতায় থাকায় কারখানাগুলো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও সড়কে স্বাভাবিক চলাচলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে চলমান সরকারি নির্দেশনা মেনে দেশের সব সিরামিক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মাসিক ভ্যাট দাখিলপত্র দাখিলের বর্তমান সময়সীমার আদেশ স্থগিত করার আবেদন জানায় সংগঠনটি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিক্রি করলে তো ভ্যাট আসবে। যেখানে সবকিছু বন্ধ রয়েছে, কিভাবে ভ্যাট দেয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে সরকারের সুনজর খুবই জরুরি বলে মনে করেন তারা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার চলার জন্য যেমন রাজস্ব আদায় প্রয়োজন, তেমনি ব্যবসায়ীদের

বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের অধিকাংশের পক্ষে ভ্যাট দেয়া কঠিন। ইতোমধ্যে এই সংক্রান্ত বেশকিছু সুপারিশ বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এনবিআরের কাছে দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার চলতি অর্থবছর ও আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলনের সময় ভ্যাটের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। তাই এনবিআরও রাজস্ব আদায়ের চেষ্টা করছে। তবে ব্যবসায়ীদের বিষয়টি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। রাজধানীর একাধিক ভ্যাট কমিশনারেটের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা স্বেচ্ছায় ভ্যাট দিয়েছেন, তাদের ভ্যাট রিটার্ন জমা নেয়া হচ্ছে। আর কেউ কেউ অনলাইনেও জমা দিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর একটি ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার ভোরের কাগজকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে আমরা ভ্যাট রিটার্ন জমা নিচ্ছি। আর আগের তুলনায় কম হলেও অনেক ব্যবসায়ী ভ্যাট রিটার্ন জমা দিচ্ছেন। আর কিছু লোক তো আছেই যদি এনবিআর খোলা না রাখে তাহলে অজুহাত দেবে, খোলা ছিল না তাই রিটার্ন দিতে পারিনি। তবে কাউকে রিটার্ন জমা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা এখন গভীর সঙ্কটে দিনাতিপাত করছি। শ্রমিকের বেতন দেয়াই কঠিন। অস্থিত্বের লড়াইয়ে আছি আমরা। ভ্যাট রিটার্নের বিষয় নিয়ে ভাবার সময়ও পাচ্ছি না। করোনা মহামারির এই গভীর সঙ্কট বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর রিটার্ন জমার সময়সীমা বাড়াবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App