সর্বকালের স্বল্পসময়ের বেকর্ড গড়বে সপ্তম অধিবেশন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ০৪:৫৮ পিএম
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের মধ্যে দেশ যখন প্রায় লক ডাউনে এমন সময় সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই বসতে চলেছে একাদশ জাতীয় সংসদের নিয়মরক্ষার সপ্তম অধিবেশন। অধিবেশনটি আগামী ১৮ এপ্রিল বিকেল ৫টায় বসেই সিটিং এমপি ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবেই শেষ হবে। এটি হতে চলেছে সংসদের সর্বকালের সবচেয়ে কম সময়ে চলা অধিবেশনের রেকর্ড। ওই দিন মাত্র ৩০ মিনিট থেকে ঘন্টা খানেকের মতো চলে অধিবেশনটি শেষ হবে। এ অধিবেশনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধীকার নিয়ন্ত্রিত করা হতে পারে বা কোনো সাংবাদিক পাশ নাও দেয়া হতে পারে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ আতঙ্কের মধ্যে যেখানে সারা দেশ লকডাউনে রয়েছে, রাষ্ট্রিয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তার মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য বসছে এ অধিবেশনটি। সেজন্য আহুত এ সপ্তম অধিবেশনে কোরাম সংকটের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সচিবালয় একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী দায়িত্ব নিয়ে ঢাকা ও আশপাশের ৬০-৭০ জন এমপির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। তিনি স্পিকার ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর সংসদ সদস্যদের ফোন করে সপ্তম অধিবেশনে উপস্থিত থেকে কোরাম সংকট কাটিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছেন। এ অধিবেশনে ৩৫০ জন এমপির মধ্যে ৬০ জন উপস্থিত হলেই অধিবেশনটি শুরু হবে। দেশের দূর দুরান্তরের এমপিদের এ অধিবেশনে না আসার জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে অধিবেশন ঢাকা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। কেননা, সংবিধান মোতাবেক কোনো অধিবেশন শেষ হবার অনধিক ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে অপর অধিবেশন শুরু হতে হবে। এর কোনো ব্যত্যয় হলে চলে না। কোনো দৈব-দূর্বিপাকে অধিবেশন পিছানোর কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন পেছানোর ক্ষেত্রে সেটি হতে পারে। যেহেতু চলতি সংসদের ষষ্ট অধিবেশনটি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়, সে কারণে সপ্তম অধিবেশনটি আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে শুরু হতে হবেই। যার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফায় দেয়া ক্ষমতাবলে আগামী ১৮ এপ্রিল সপ্তম অধিবেশন আহ্বান করেছেন। তবে এ অধিবেশনে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত হতে হবে এমন নয়। আমরা করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সংসদে মাত্র কোরাম পূরণ করতে চাই, সেহেতেু ঢাকা ও এর আশপাশের এমপিরা এলেই চলবে। অধিবেশনটি যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত হবে।
আবার সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে, অধিবেশনটি যেহেতু ৩০ মিনিট থেকে ঘন্টা খানেক চলতে পারে সে জন্য সাংবাদিক বা দর্শক গ্যালারীতে কাউকে প্রবেশাধীকার না দেবার কথা ভাবা হচ্ছে । গণসংযোগ-১ এর পরিচালক মো. তারিক মাহমুদ জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার জন্য ১৮ এপ্রিল সংসদের সপ্তম অধিবেশনটি আহ্বান করেছেন। যেহেতু অধিবেশনের প্রথম দিনে একজন সিটিং এমপির মৃত্যুজনিত কারণে মুলতবি হবার রেওয়াজ রয়েছে। তাই অধিবেশনের শুরুতেই শোক প্রস্তাব তুলবেন স্পিকার। পরে এর ওপর প্রধানমন্ত্রীসহ দু-একজন স্মৃতিচারণ করতে পারেন। তার পরে শোকপ্রস্তাবটি গ্রহণ করবে সংসদ। এর পরে অধিবেশন সমাপ্ত করা হবে। তাই ৩০ মিনিট থেকে বড় জোর ঘন্টা খানেকের চলা এ অধিবেশন সাংবাদিকরা রিস্ক নিয়ে পার্লামেন্টে এসে কভার না করে টিভি দেখে নিউজ করাই ভালো। আমরা সে কারণে সকলের মতামত নিচ্ছি, হয়তো সাংবাদিক কার্ড ইস্যু এ অধিবেশনে নাও করা হতে পারে।
সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, অধিবেশন শুরু হবে ১৮ এপ্রিল বিকেল ৫টায়। তার এক ঘন্টা আগে কার্যউপদেষ্ঠা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের সময়কালসহ সব কিছু ঠিক করা হবে। অধিবেশনের শুরুতেই সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপণ করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন সিনিয়র সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। তার পরে স্পিকার অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্টপতির আদেশ পড়ে শোনাবেন। অর্থাৎ অধিবেশণ শুরু ও শেষ একই দিনে হতে যাচ্ছে। সেকারণে এটি হতে পারে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্পকালীন অধিবেশন।