পার্ক স্ট্রিটে থাকতেন ‘মাস্টারমশাই’ পরিচয়ে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ১২:০১ পিএম
বঙ্গবন্ধূর খুনি
পার্ক স্ট্রিট হচ্ছে কলকাতার একটি খ্রিস্টান কবরখানা। এটি মাদার টেরিজা সরণিতে অবস্থিত। যেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ শিক্ষক পরিচয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন। সেখানকার পড়া-মহল্লায় লোকজন মাজেদকে আলী আহমেদ ওরফে ইংরেজির মাস্টারমশাই হিসেবে জানতেন। এলাকার লোকেরা জানতেন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে থেকে পাস করেছেন মাস্টারমশাই। টিউশন পড়িয়ে সংসার চালাতেন। প্রথমে তালতলার ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন খুনি মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।
মহল্লার কেউ তাঁকে কখনও উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখেননি। হিংসা-বিবাদ তো দূরের কথা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন নিয়ম করে। সেই তাদের মাস্টারমশাই নাকি বঙ্গবন্ধুর খুনি! সেই শান্তভদ্র লোকটিই যে বঙ্গবন্ধুর খুনি তা বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না লকডাউন ঘোষিত পার্ক স্ট্রিট।
গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের মিরপুরে খুনি আব্দুল মাজেদ গ্রেপ্তারের পর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে রীতিমতো অবাক পার্ক স্ট্রিটের বেডফোর্ড লেনের বাসিন্দারা।
২০১১ সালে মাজেদ তার থেকে ৩২ বছরের ছোট উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের ছয় বছরের এক মেয়ে রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই বাহাত্তর বছরের মাজেদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। গত জানুয়ারি মাসে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে (প্রেসিডেন্সি জেনারেল) এক প্রস্থ পরীক্ষা নিরীক্ষাও হয়।
এর বেশ কিছুদিন পরের ঘটনা। ২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে সেই রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন মাজেদ। সেটাই শেষ। আর বাড়ি ফেরা হয়নি মাজেদের। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন স্ত্রী রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। তদন্তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট থানা। তবে সিসিটিভি ফুটেজ তন্নতন্ন করে ঘেঁটেও হদিস মেলেনি মাজেদের।
এরপর পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, ভোটার আইডি, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক নারীসহ তিন শিশুর ছবি পাওয়া যায়। স্ত্রী সেলিনা পুলিশকে জানান, ব্যাগের মতো তার অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসে কাউকে হাত দিতে দিতেন না মাজেদ।
রহস্যময় ছিল মাজেদের আচরণ। মহল্লায় খুব একটা মেলামেশা করতেন না। টিউশনির পাশাপাশি বড়জোর এলাকার এক চায়ের দোকান, রেশন দোকান এবং এক বিল্ডার্সের দোকানে আড্ডা দিতেন। বাড়ির সদর দরজায় সব সময় তালা লাগানো থাকতো। বাইরের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হতো না। এক আধ বছর নয়, এভাবেই আঠারো-উনিশ বছর ডেরা বেঁধে কলকাতায় আত্মগোপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ।
তবে পিজি হাসপাতালে যাওয়ার দিন ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা ৪ মিনিটে বেডফোর্ড লেনের বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মাজেদের যাত্রাপথের একাংশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেই ফুটেজে কী আছে? সূত্র: বর্তমান।