×

সাহিত্য

পড়ালেখা করছি সিনেমা দেখছি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ১০:৩৬ এএম

বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। আজও কাজ করে চলেছেন মঞ্চ, টিভি অঙ্গনে। শিল্পী হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রতিভাবান মানুষটির করোনাকাল কেমন কাটছে, ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দিন কাটতেই চায় না। এর ভেতর পড়ালেখার চেষ্টা করছি, হয় না! সিনেমা দেখছি! একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে জনজীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঘরে আটকে আছি। মনের আনন্দটাই চলে গেছে। তারপরও এর মধ্যেও খাচ্ছি, ঘুমাচ্ছি, উপন্যাস পড়ছি।

কার লেখা পড়ছেন? দুটো খুব চমৎকার আত্মজীবনী পড়লাম। একটি হচ্ছে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী। সাড়ে তিনশ পৃষ্ঠার বই। পড়ে শেষ করলাম। এখন আব্বাস উদ্দীন পড়ছি। মাঝখানে স্বপ্নময় চক্রবর্তী এবং হাসান আজিজুল হকের অনেকগুলো ছোট গল্পও পড়লাম। পুরনো ছায়াছবি দেখছি, সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলো দেখছি। কালকে লুইস বুনুয়েলের ছবি দেখলাম। দিনগুলো এভাবেই কাটছে। একটাই উপায় ঘরে থাকা। কিন্তু মানুষ তো ঘরে থাকছে না? জীবিকার প্রয়োজনে, অতিঔৎসুক্যে মানুষ তো বেরুচ্ছেই? মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব? এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট এই অভিনেতা বলেন, বাঙালি মিলিত হওয়ার জাতি। আমাদের ইতিহাস কী বলে? সংঘবদ্ধ জনতাই সবকিছু করেছে এবং এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি আসা, একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হওয়া। আমরা তো পশ্চিমাদের মতো নয়। কথা বলা, এসব তো বন্ধ হয়ে গেছে। এটা হয়তো কেউ কেউ মানতে চাইছে না। এজন্যই এটা শুরু হয়েছে। দেখা করে একটু চা খাওয়া, আড্ডা দেয়ার মধ্য দিয়ে জীবনের অপূর্ণতাগুলো আমরা আনন্দ দিয়ে ভরিয়ে তুলি। ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিয়ে ভরিয়ে তুলি। আমি তো ভেবেছিলাম, সামলাতে পারবেই না। তাও তো অনেকটা হয়েছে। কিন্তু আমি যেটা ভয় পাচ্ছি রোজা নিয়ে। আর মাত্র ১৪ দিন বাকি। তারাবি না হয় বাসায় পড়ল। কিন্তু ইফতারের সময় মানুষকে ঘরে রাখা খুবই কঠিন হবে।

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা পারবে মনে করেন বলেন মামুনুর রশীদ, সহসা যাবে বলে মনে হয় না। আমি আমার ডাক্তার এবং বিজ্ঞানী বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এটা একটা সাইকেলের মতো। এই চক্রটা একটা জায়গায় গিয়ে দুর্বল না হওয়া পর্যন্ত তার সংক্রমণ চালিয়েই যাবে। সেটার যে সময়টা ওই সময়টা দিতে হবে। কেউ কেউ এটা ঈদ পর্যন্ত থাকবে। আমাদের সমন্বয় করেই এগিয়ে যেতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, আমাদের ১৮ কোটি মানুষ আর এর জন্য আইসিউই মাত্র ১১২টা। মহা মুশকিল!

প্রকৃতির ওপর মানুষের যথেচ্ছারও এমন ডিজাস্টারের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে এই যোদ্ধা বলেন, এটা একটা বড় কারণ। এখানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোনো গবেষক নেই, যা করেছে পশ্চিমা দেশ আর শক্তিমান রাষ্ট্র যারা তারাই। ভারতের মতো একটা দেশ

যেখানে দারিদ্র্য প্রবল। সেখানে তারাও চাঁদে মানুষ পাঠাচ্ছে। এরকম রাষ্ট্রিয় অ্যারোগেন্সের ফলে গবেষণা করতে গিয়ে ভাইরাস ছোঁয়ার বাইরে ছড়িয়ে গেছে উহানে, যা প্রকৃতির ওপরেই অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানুষ প্রতিদিনই করছে তেজস্ক্রিয় অস্ত্রগুলো দিয়ে মরুভ‚মিতে, পানিতে, সর্বত্রই করা হচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে সুনামি এসেছিল। এটাও প্রকৃতিরই প্রতিশোধ। এর আগে আফ্রিকাতেও একটা ভয়ঙ্কর অসুখ হয়েছিল। তাই প্রকৃতির ওপর এই অতিরিক্ত অত্যাচার কমাতে হবে। নইলে প্রকৃতি উল্টো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবে, এখন যেমন হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App