×

সারাদেশ

নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসনের ‘মানবিক মোবাইল কোর্ট’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ০১:৪৮ পিএম

নোয়াখালীতে জেলা প্রশাসনের ‘মানবিক মোবাইল কোর্ট’
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারী নির্দেশনার কারণে নোয়াখালীতে কয়েক লাখ শ্রমজীবি মানুষ বাড়িতে অবস্থান করতে গিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তারা দিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় চাল, ডাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে ঘরে ফিরতেন। সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অভাবের তাড়নায় অনেকেই জীবিকার সন্ধানে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন । এ অবস্থায় নোয়াখালী জেলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশনা পালন ও খাদ্য সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন পরিচালনা করছে ‘মানবিক মোবাইল কোর্ট’। জেলা প্রশাসক তন্ময় দাসের তত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ এ ‘মানবিক মোবাইল কোর্ট’ পরিচালনা করছেন। যানবাহনের উপর চলাচলে নিষেধাজ্ঞার পরও যে সব সিএনজি, রিক্সা ও ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা চালকরা রাস্তায় বের হচ্ছেন এবং যেসব চা-পান দোকানদার দোকান খোলা রাখছেন, তাদেরকে সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন মোবাইল কোর্টের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ । এছাড়া জেলায় কর্মহীন হয়ে যাওয়া দিনমজুর, ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোকজনদের তালিকা করে তাদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। মধ্যবিত্ত যারা লাইনে দাড়িয়ে খাদ্য সহায়তা নিতে পারেননা তাদের জন্য একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। এ হটলাইনে আসা তথ্য অনুযায়ী তাদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ছিন্নমুল মানুষের জন্য উম্মুক্ত ভোজনালয় চালু করা হয়েছে। এখানে কয়েকশত মানুষকে প্রতিদিন দুপুরের খাবার দেয়া হচ্ছে। দূরত্ব ও নিরাপত্তা বজায় রেখে টিসিবি’র মাধ্যমে ন্যয্য মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্রি করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হটলাইনে ৩০০০ এর অধিক ব্যক্তি ও পরিবারের কাছ থেকে এসএমএস এসেছে। ইতিমধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ৬০০ জনের অধিক পরিবারের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। জেলার পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রায় ১,৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে বাকীদের বাড়ী বাড়ী খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে। জেলাবাসীর সুবিধার্থে হোম ডেলেভারী সিস্টেম চালু করা হয়েছে। তৃত্বীয় লিঙ্গ, বেদে সম্প্রদায় এবং যাদের ঠিকানা নাই তাদেরও খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মহীন-দরিদ্র মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সামগ্রহী পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: রোকনুজ্জামান খান বলেন, সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যেসব চালক যানবাহন নিয়ে রাস্তায় নামেন এবং যে সব চা দোকানী দোকান খোলা রাখেন তাদেরকে ৫-১০টাকা করে জরিমানা ও দোকান বন্ধ করে দিয়ে সাথে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করি, যাতে তারা বাড়ীতে খাদ্যের অভাবে কষ্ট না পায়। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম সরদার বলেন, আমরা পরিবহন শ্রমিকদের তালিকা করে তাদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। এছাড়া উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মহীন হয়ে যাওয়া দিনমজুর, ছিন্নমূল, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের তালিকা করে তাদের খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মানবিকতাকে দেখছি, খাদ্যের ব্যবস্থা রাখছি, সে সাথে যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখছি। আমরা চাই নোয়াখালীর কোন মানুষ যেন খাদ্যাভাবে কষ্ট পেয়ে ঘর হতে বের হতে না হয়। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ সারাদিন মাঠে থাকেন যখনি তারা কোন ব্যক্তির এসএমএস পান তখনই এলাকা ভাগ করে উক্ত ব্যক্তির নিকট খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেন। একাজে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটগণ দিনরাত পরিশ্রম করছেন। সকল উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক কর্মহীন মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিটি ওয়ার্ডে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলায় প্রায় পঞ্চাশজন ডাক্তার টেলি মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App