×

জাতীয়

ছয় ডাক্তার বরখাস্তে তুঘলকি কারবার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৪ এএম

ছয় ডাক্তার বরখাস্তে তুঘলকি কারবার

হঠাৎ করে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসককে বরখাস্ত করা নিয়ে তুঘলকি কারবার ঘটেছে। যে চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করছিলেন তাকে যেমন কোনো কিছু না জানিয়ে বরখাস্ত করা হয়েছে, তেমনি যিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন তাকেও বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের এমন বালখিল্যতার কারণে রীতিমতো রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। বরখাস্ত হওয়ার পর দুজন চিকিৎসক মুখ খোলায় এই রহস্যের ডালপালা আরো বেশি করে মেলেছে। দেখা দিয়েছে সন্দেহ। এ ঘটনায় যেমন চিকিৎসকরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তেমনি আতঙ্কিত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। প্রশ্ন উঠেছে, ছয় চিকিৎসককে বরখাস্তের পেছনে কি শুধুই কর্তব্যে অবহেলা বা অনুপস্থিতি? নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ লুকিয়ে আছে? তবে হঠাৎ করে চিকিৎসকদের বরখাস্তের বিষয়টি মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। চলমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসক বরখাস্তের ঘটনা কেন- এর উত্তর খুঁজছেন সবাই।

উল্লেখ্য, গত শনিবার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয়জন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশ করেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সেহাব উদ্দিন। ওই দিনই সন্ধ্যায় অধিদপ্তর তাদের সাময়িক বরখাস্তের ঘোষণা দেয়। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে এই ছয় চিকিৎসক অনিচ্ছা দেখিয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন। বরখাস্ত হওয়া এই চিকিৎসকদের মধ্যে দুজন কথা বলেছেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজন আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। অন্য তিনজন হাসপাতালে আসছিলেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারির আগে চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী প্রথমে শোকজ করতে হবে এবং ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব চাইতে হবে। যদি শোকজের জবাব না দেয় তখন বরখাস্তের ব্যাপার আসবে। কিন্তু এখানে এসবের কিছুই মানা হয়নি। এছাড়া আরো কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। তবে এই ত্রুটি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে, অননুমোদিতভাবে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে বরখাস্তের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, এ ঘটনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে খারাপ বার্তা যাবে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) বেলাল হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় ভোরের কাগজকে বলেন, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অভিযোগের ভিত্তিতে অধিদপ্তর চিকিৎসকদের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু কর্তব্যে অবহেলা, না অন্যকোনো অপরাধে বরখাস্ত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্যকোনো ঘটনা এখানে রয়েছে কিনা, তা জানি না। তবে এখন একটি তদন্ত হবে। তদন্তে তারা দোষী অথবা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন। বরখাস্তের পর তদন্ত- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি নিরুত্তর ছিলেন।

এর আগে গতকাল সকালে বরখাস্ত হওয়া চিকিৎসক শারমিন হোসেন তার সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় শারমিনকে তার বক্তব্য লিখিতভাবে স্বাস্থ্যসচিবকে জানাতে বলেছেন তিনি। তবে, এই আদেশ প্রত্যাহারের কোনো পরিকল্পনার কথা তিনি জানাতে পারেননি। এদিকে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর বলেছেন, নিয়ম মেনেই ওই ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর একটি হাসপাতালে ১৫টি বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মুহাম্মাদ ফজলুল হক এবং একই হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা) শারমিন হোসেন বলেছেন, তারা কখনো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানাননি। গতকাল ফেসবুক লাইভে শারমিন হোসেন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক স্যার আমাকে কোনো টেলিফোন না করে বা কোনো কিছু না জানিয়ে আমার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নাম পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি নাকি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিতে ইচ্ছুক না। এমন কথা আমি মৌখিক বা লিখিতভাবে কখনো স্যারের কাছে অথবা কারও কাছে প্রকাশ করিনি। তিনি আরো বলেন, গত ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি। রাতের পালার কাজ সেরে বাসায় ফিরেছি। একদিন পর জানতে পারি, আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। শারমিন হোসেন তার হাজিরা খাতার ফটোকপি নিয়ে গতকাল রবিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. বেলাল হোসেনকে দিয়েছেন। এছাড়া গতকাল রাতে বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন বরখাস্ত হওয়া আরেক চিকিৎসক মুহাম্মদ ফজলুল হক। তিনি নিয়মিত হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানান।

বিএমএর উদ্বেগ : অননুমোদিতভাবে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে বরখাস্তের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ)। সংগঠনের প্যাডে গতকাল রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি আদেশে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ছয় চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তের আগে উল্লিখিত কর্মকর্তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। বরখাস্ত হওয়াদের মধ্যে দুজন চিকিৎসক রোস্টার ডিউটিতে ছিলেন। এতে আরো বলা হয়, বরখাস্ত হওয়া চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী তারা কেউই কোভিড-১৯ রোগী দেখতে অপারগতা প্রকাশ করেননি। সরকারি চাকরি বিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন না করে এসব চিকিৎসকদের বরখাস্তের আদেশ গোটা চিকিৎসক সমাজকে হতাশ করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে যেখানে করোনা মোকাবিলা করছেন সেখানে এ ধরনের আদেশ হঠকারী ও।

চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে যে কাউকে অন্য কোথাও বদলি করা যেত, তাদের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া যেত। কিন্তু অকস্মাৎ গণমাধ্যমের এ চাঞ্চল্যকর বিষয়টি বর্তমানে মহামারি আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে খারাপ বার্তা পৌঁছাবে। এতে কারা লাভবান হবে বিষয়টি পরিষ্কার নয়; এ ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি চিকিৎসক হয়রানির আদেশের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএমএ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App