×

সারাদেশ

ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা চাষীরা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২০, ১১:৫৭ এএম

ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা চাষীরা!

তরমুজ

চরফ্যাশনে তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। তারপরও ঋণ পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা তরমুজ ও বাঙ্গি চাষীরা। করোনা ভাইরাস  সংক্রমণ প্রতিরোধেসাড়াদেশ লকডাউনে থাকায় তরমুজ বিক্রি হচ্ছে কম। এমন পরিস্থিতিতে চাষিদের চোখেমুখে অন্ধকারের ছাপ। স্থানীয় হাটবাজার-যানবাহন বন্ধ থাকায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে তরমুজ ও বাঙ্গি।

পাইকাররা ক্ষেত থেকে মাঝারি ও বড় সাইজের তরমুজ ক্রয় করছেন ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। এতে বিনিয়োগের টাকা না উঠায় চিন্তার ভাজ চাষীদের কপালে। অথচ লকডাউনের মধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে এসব তরমুজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়।

চলতি মৌসুমে আসলামপুর, নুরাবাদ,আহাম্মদপুর, মুজিব নগর, রসুলপুর, চরকলমী, উত্তর আইচা, কুকরি মুকরিসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। দুলারহাটের একাধিক তরমুজ চাষী জানান, ঝড় ও শিলা বৃষ্টি না হওয়ায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।

বাবুরহাট এলাকার তরমুজ চাষী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ধানের চেয়ে তরমুজে সাধারণত ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি লাভ হয়, এবছর তরমুজ চাষ করে বাম্পার ফলন হয়েছে। তবুও লোকসান গুণতে হচ্ছে তরমুজ চাষ করে, পাইকাররা ন্যায্যমূল্যে তরমুজের ক্ষেত কিনছেন না। প্রতিবছর এক একটি ছোট,বড় ক্ষেত ২ থেকে ৪ লাখ টাকায় ঠিকায় বিক্রি হতো। বর্তমানে হাটবাজার বন্ধ থাকায় পাইকাররাও ন্যায্য মূল্য দিচ্ছেন না । খুচরা বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখন আমার পরিবার নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ করে এ তরমুজ আবাদ করেছিলাম। এখন এ দেনা পরিশোধ করবো কীভাবে? প্রশাসন যদি আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সাপোর্ট দিতো তাহলে আমরা চাষিরা আমাদের বিনিয়োগের টাকা উঠাতে পারতাম।

চর কলমি এলাকার পাইকার মো. জামাল উদ্দিন জানান, সাড়াদশের লকডাউনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আড়ত তরমুজ আমদানি কমিয়ে দিয়েছে, আর তাই আমরাও ধীরগতিতে রপ্তানি করছি। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই কম দামে পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করছে।

চরফ্যাশন বাজারের খুচরা বিক্রেতা মো. সবুজ ও বিল্লাল জানান, এবছর একশত তরমুজ ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় ক্রয় করছি, বড় সাইজের একশত তরমুজ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় ক্ষেত ও আড়ৎ থেকে বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় দাম অনেক কম।

এছাড়াও প্রতিটি বড় সাইজের বাঙ্গি ২০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর প্রতি পিসের মূল্য ছিলো ১২০ টাকা। চরফ্যাশন বাজারের আড়ৎদারা বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমদানি ও রপ্তানি কম হওয়ায় তরমুজ চাষিরা শহরে তরমুজ রপ্তানি করতে না পাড়ায় আড়তে নিয়ে আসছেন, আমরা চাষিদের প্রতি পিস তরমুজ এক থেকে দুই টাকা আড়ৎদারি রেখে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ডাকে বিক্রি করে দিচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু হাসনাইন বলেন, গত বছর যেখানে ২ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে এবার সেখানে ৫ গুণ বেশি জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গির চাষ হয়েছে। এ বছর রোগ বালাই ও ঝড় বন্যা না হওয়ায় তরমুজ ও বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে।

চলতি মৌসুমে চরফ্যাশন উপজেলায় ৬ হাজার ৯ শ হেক্টর জমিতে সুপার এমপিআর, বন্টিক বেরি, পাকিজা, বল্লাক, ডায়মণ্ড, ট্রাফিক্যাল ড্রাগন, সুলতান, আনার কলি, বিগ ফ্যামিলী, হানি কুইন ও লেন ফাই জাতের তরমুজের আবাদ হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App