×

সাহিত্য

গার্মেন্টস মালিকদের নয়, শ্রমিকদেরই প্রণোদনা দিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২০, ০৯:২২ পিএম

গার্মেন্টস মালিকদের নয়, শ্রমিকদেরই প্রণোদনা দিন

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। লেখালেখি শুরু করেছেন সত্তর দশকের গোড়াতেই। কিন্তু জীবনের প্রথম গল্পটি প্রকাশের পর তিনি প্রায় ফাঁপরে পড়ে গিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নেতিবাচক মন্তব্যে। কিছুদিন পর, আবার ইলিয়াসই মনজুরের অন্য একটি গল্পের প্রশংসা করলেন। নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস ও সৃজনের আনন্দটুকু ফিরে পেলেন। আর মনজুর, গল্পে তো বটেই, তাঁর যে-কোনো রচনায় এমন এক প্রাঞ্জল ও কমিউনিকেটিভ গদ্যভাষা ব্যবহার করেন, যা পাঠককে অনায়াসে টেনে নেয় রচনার গভীরে। তাঁর বলার ভঙিটি যতটা না লেখকের তারচেয়ে বেশি কথকের। তার গল্পে আছে মানুষের প্রতিদিনের দুঃখ-আনন্দ কিংবা কালচক্রের ছায়াও : কীভাবে সমাজ বদলাচ্ছে, মানুষের প্রেম ও ক্লেদ, আক্রোশ ও অভিঘাত এবং সময় ও সম্পর্কের লাবণ্যটুকু পাল্টে যাচ্ছে- এসবের অনুপম ও সূক্ষ্ম সংবেদী বয়ান।

শিল্পকলায় প্রাজ্ঞ প্রাবন্ধিক, সমাজনিষ্ঠ কলামলেখক এবং বিশিষ্ট এই কথাসাহিত্যিকের করোনাকাল কেমন কাটছে? ভোরের কাগজের এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, খুবই মনোকষ্টে আছি। মানুষ কতোটা বিপদগ্রস্ত ভেবেই মনটা বিষন্ন হয়ে যাচ্ছে বারবার। আজ হঠাৎ করে আবিস্কার করলাম বাসার কাছে একজন মুচি বসত, সে নেই! বেশ কিছু পরিচিত রিকশাওয়ালাকে চিনি তারাও হঠাৎ নেই হয়ে গেছে! একটা সময় মানুষগুলো তো ছিল! করোনার ধাক্কায় তারা কে কোথায় ছিটকে পড়েছে কে জানে! মানুষের এসব বিপন্নতা দেখে নিজেকে মনে হচ্ছে সুবিধাবাদী মানুষ।

তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষেরা আজ পেটের ক্ষুধায় মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে এসেছে। এ মুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি সমাজের অনেক মানুষ বিপদগ্রস্ত এসব মানুষের পাশে সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার এমন মানুষের খোঁজও আমরা পাচ্ছি যারা ২৩৬ বস্তা চাল সরিয়ে নিচ্ছে। একদিকে ডাক্তাররা প্রাণপাত করছেন। আবার কিছু ডাক্তার বাড়িতে বসে আছেন।

এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ দেই। কারণ তিনি বলেছেন, যারা করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন না তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবে কি-না, তাদের চাকরি থাকবে কি-না তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে। তবে একটা বড়ো সংখ্যক ডাক্তার, সংবাদকর্মী, ট্রাফিক পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

করোনা পরবর্তী পৃথিবী কেমন হতে পারে বলে আপনার মনে হয়? এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট এই কথাশিল্পী বললেন, এই পৃথিবীটা হয়ে উঠতে পারে শিকারি পৃথিবী অথবা সমাজতান্ত্রিক পৃথিবী। সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ বেড়ে যাবে। দ্বিতীয় হোম, তৃতীয় হোম বলে কিছুই থাকবে না।

এই যে গার্মেন্টস শ্রমিকরা কারোনাঝড়েও রাস্তায় নেমে এসেছে তাদের কি হবে? তাদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য? এর জবাবে সংবেদী এই শিক্ষক বললেন, শত শত শ্রমিকদের কেন এভাবে রাস্তায় নামিয়ে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছেন? গার্মেন্ট মালিকদের লজ্জা থাকা উচিৎ। তাদের মনে রাখতে হবে, করোনা কাউকে ছাড়ে না। যাই হোক বিপদগ্রস্ত মানুষদের জন্য বোধোদয় হতে হবে। কারণ আমরা একটা মানুষেরও মৃত্যু চাই না। সরকার যদি গার্মেন্টস মালিকদের ৫০০০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা না দিয়ে শ্রমিকদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন অগ্রিম দিত তাহলেই ভালো হতো। ৩ মাস গার্মেন্টস বন্ধ থাকলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বিষয়টা প্রধানমন্ত্রী ভেবে দেখলে ভালো বৈ মন্দ হবে না। বরং ভালো ফল দেবে বলে আমার বিশ্বাস। বারবার বলছি, গার্মেন্টস মালিকদের নয়, শ্রমিকদেরই প্রণোদনা দিন।

তিনি আরো বলেন, আমাদের কৃষকদের জন্য যদি ৫০০০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয় তাহলে এই বিপর্যয়ে আমরা হারবো না।

এই বিপর্যয় না এলে তো বুঝতেই পারতাম না সারা বিশ্বে এখন নার্স সংকট! আমরা যদি ট্রেনিং দিয়ে বিদেশে পাঠাই তাহলেও এই সংকটের পাশে আমরাও থাকতে পারি।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির মতো এমন দৃষ্টিভঙ্গি সবার যদি থাকতো তাহলে আমাদের এমন পরিস্থিতি দেখতে হতো না। তিনি বলেন, যারা জনগণের ভোট পেয়ে জনগণকে দেখবে না, জনগণের পাশে থাকবে না, তাদেরকে গণশত্রু হসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App