-
ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি
-
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন
-
রায় কার্যকরে প্রস্তুত সরকার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসির রায় যে কোনো সময় কার্যকর হতে পারে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কাছে মাজেদ প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, অন্য খুনিদের মতো তারও প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করবেন রাষ্ট্রপতি। আর আবেদন নাকচের পরই সরকার মাজেদের ফাঁসির রায় কার্যকর করবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসায় সপরিবারে হত্যার শিকার হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি আবদুল মাজেদ। দীর্ঘদিন তিনি পলাতক ছিলেন। ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে বাংলাদেশ পুলিশ।
গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর থেকে মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল বুধবার ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মাজেদকে উপস্থাপন করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ সময় বিচারক হেলাল চৌধুরী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও মামলার রায় পড়ে শোনান এবং ফাঁসির পরোয়ানা জারি করেন। এরপর তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু এবং ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল মান্নান বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
আবদুল মান্নান বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মাজেদকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করলে আদালত তাকে বুধবার উপস্থিত করার দিন ধার্য করেন। সে অনুয়ায়ী ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়। এ সময় বিচারক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও মামলার রায় পড়ে শোনান। এরপর বিচারক তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাজা পরোয়ানা জারি করেন। আসামি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে পিপি বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিলেন। আমার জানা মতে, তিনি আপিল করার সুযোগ পাবেন না।
এরপর গতকাল সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব শহীদুজ্জামান বলেন, আমরা আবেদন পেয়েছি। সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, গতকাল রাতেই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে যে কোনো সময় সিদ্ধান্ত দেবেন। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য খুনির মতো মাজেদের আবেদনও নাকচ করবেন রাষ্ট্রপতি। আর রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন ফেরত এলেই আইন অনুযায়ী, ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে সরকার। এর আগে গত মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের সাজার রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে এই মৃত্যু পরোয়ানা জারির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বুধবারের ছুটি বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে দেশের সব অফিস-দপ্তরের মতো আদালতেও নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কেবল জরুরি এবং আইনি
বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রেই আদালত বসছে। গতকাল বুধবার মৃত্যু পরোয়ানা জারির জন্য সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ছুটিতে থাকায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের বিষয়ে জরুরি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিল না। তাই মঙ্গলবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে লিখিত আবেদন করে। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে আজকের (বুধবার) জন্য এ আদালতের ক্ষেত্রে ছুটি বাতিল করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার নথি থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএস) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।
১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অন্য বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে।
পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে পাঁচ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতি মঞ্জুর করেন। ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। পরে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রেই আদালত বসছে। গতকাল বুধবার মৃত্যু পরোয়ানা জারির জন্য সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত খোলা হয়। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত ছুটিতে থাকায় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদের বিষয়ে জরুরি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছিল না। তাই মঙ্গলবার ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে লিখিত আবেদন করে। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে আজকের (বুধবার) জন্য এ আদালতের ক্ষেত্রে ছুটি বাতিল করা হয়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার নথি থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৬ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএস) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। একই বছরের ১২ মার্চ ছয় আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়। ১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।
২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অন্য বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। পরে হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে পাঁচ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতি মঞ্জুর করেন।
২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। পরে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।
