×

জাতীয়

ত্রাণ চুরি রোধে কড়া মেজাজে সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০১:১১ পিএম

ত্রাণ চুরি রোধে কড়া মেজাজে সরকার

সরকারি ত্রাণ

ইউএনওদের নজরদারি বাড়াতে বললেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। ৫৩ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিল দুর্যোগ মন্ত্রণালয়।

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন থেকে যেসব মেম্বার ও চেয়ারম্যান ত্রাণের চাল চুরির দায়ে অভিযুক্ত হচ্ছেন তাদের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানার পাশাপাশি ত্রাণের চাল বিতরণে ইউএনওদের নজরদারি বাড়াতে বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। অন্যদিকে করোনা ভাইরাস মহামারিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও কর্মহীনদের মধ্যে ত্রাণ বিলির কার্যক্রম তদারকি করতে ৫৩ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে কর্মহীনদের সরকারি খাদ্য সহায়তা প্রকল্পের ত্রাণ বিতরণে প্রতিদিনই নানা অনিয়মের অভিযোগ আসছে। এর মধ্যে নাটোরের সিংড়ায় ত্রাণের ১৩ বস্তা চাল এবং এক ইউপি সদস্যসহ ৩ জনকে আটক করেছে উপজেলা প্রশাসন। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ত্রাণের তালিকা তৈরিতে টাকা নেয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ত্রাণের খাদ্যসামগ্রী কেড়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ৩ নং মির্জাপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে। যশোরের একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে সরকারি ৮০ বস্তা চাল জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। নওগাঁয় একটি বাড়ি থেকে ১৪ বস্তা সরকারি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল উদ্ধার করা হয়েছে। গাইবান্ধাতে সরকারের ১০ টাকা কেজি দরের বিক্রির চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বগুড়ায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল নিয়ে মহিষাবান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওয়াজেদ হোসেন এবং কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজিউল হকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

করোনার প্রকোপের সময় সরকার ত্রাণ দিলেও দেশজুড়ে লুটপাটের মহোৎসবের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। গতকাল অনেকেই ফেসবুকে লেখেন, করোনা রোগীর চেয়ে ত্রাণের চাল চুরির দায়ে অভিযুক্ত মেম্বার, চেয়ারম্যানের সংখ্যা বেশি। তবে এর বিপরীতে অন্য চিত্রও রয়েছে। দেশজুড়ে কিছু মেম্বার, চেয়ারম্যান রয়েছেন যারা সত্যি সত্যি এই সংকটে তালিকা করে ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, যেসব মেম্বার, চেয়ারম্যান চাল চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন, তারা রক্ষা পাবেন না। মন্ত্রণালয় থেকে আগেই মেসেজ দেয়া আছে। নতুন করে সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দিয়ে বলা হচ্ছে, কোথাও যেন ত্রাণের চাল লুটপাট না হয় সে বিষয়ে কড়া নজরদারি রাখতে। যারা গরিবের খাবার চুরি করবে তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লেখে পাঠানো হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি। মন্ত্রী সিলেটের একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানকার একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চাল চুরিতে ধরা খাওয়ার পর বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে এসেছে। এরপরই সিলেটের প্রশাসনকে মন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ওই জনপ্রতিনিধির বিষয়ে দ্রুত মন্ত্রণালয়ে লিখে পাঠাতে। যারা অভিযুক্ত হবে তারা কোনোদিনই মাফ পাবে না। ত্রাণ কার্যক্রম তদারকিতে ৫৩ কর্মকর্তা : দেশের সবকটি জেলা-উপজেলায় ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপসচিব পদমর্যাদার ৫৩ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারা কোন জেলা ও বিভাগে ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করবেন তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

ত্রাণ হিসেবে বিতরণের জন্য সরকারি চাল চুরি করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাসহ বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করবেন। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্রে (এনডিআরসিসি) প্রতিবেদন পাঠাবেন।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রথম ধাপে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস-আদালত ও যানবাহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরে দুই দফায় এই ‘ছুটি’ বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এই সময়ে বিশেষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। ফলে ঘরবন্দি শ্রমজীবী মানুষ হঠাৎ করেই কর্মহীন হয়ে পড়েন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কর্মহীনদের তাৎক্ষণিক মানবিক সহায়তা দিতে সরকার চার দফায় ২২ কোটি ১৫ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকা এবং ৫৬ হাজার ৫৬৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চালও হতদরিদ্রদের দেয়া হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App