কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘মানুষ আজ কাঁদছে। মানুষ আজ বড়ো অসহায়…হাতখানি বাড়িয়ে দাও’ করোনা ভাইরাস সংক্রমণে সারাদেশ কার্যত লকডাউন। ফলে কর্মজীবী, শ্রমজীবী মানুষ- যারা দিন আনে দিন খায় তারা আজ নিদারুণ সংকটে। তাদের যেটুকু সঞ্চয় ছিল তা দিয়ে এতদিন চালালেও এখন চরম খাদ্য ও ওষুধ সংকটে। সরকার কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। এছাড়া এমন ব্যক্তি আছেন যারা লাইনে দাঁড়িয়ে অথবা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়ে সাহায্য সংগ্রহ করতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে ওয়ার্কার্স পার্টি ‘করোনা নাশে, মানুষের পাশে’ কর্মসূচি নিয়েছে।
ইতোমধ্যে পার্টির যুব, ছাত্র ও নারী কর্মীরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক তৈরি করে রিকশাওয়ালা, গৃহকর্মী, হকার্স, ছোট দোকানদার, বস্তিবাসী ও দরিদ্র অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছে। কিন্তু বর্তমানে তাদের প্রয়োজন খাবার। সেই লক্ষ্যে পার্টি ৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, দুটি সাবান শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে বিতরণ করছে। পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ভোরের কাগজকে বলেন, ‘করোনা নাশে মানুষের পাশে’ কর্মসূচির মাধ্যমে রাজশাহী, খুলনা, নড়াইল, রংপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ত্রাণ কার্যক্রম চলছে এবং মানুষকে সহযোগিতার প্রচেষ্টা আমাদের অব্যাহত রয়েছে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষকে বাঁচাতে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে পাঁচটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ২৭ শতাংশ শ্রমিক এবং প্রায় ৩ কোটির ওপরে দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার এবং তাদের সহায়তা করার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপক সংকট ঠেকাতে হলে একদিকে যেমন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থায় নজর দিতে হবে। আবার তাদের জীবিকাও বাঁচাতে হবে; না হলে পরে তার পক্ষে কর্মক্ষম থাকা সম্ভব হবে না। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় ফেরত আসার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন মেনন বলেন, গার্মেন্টস শ্রমিকরা তাদের চাকরি বাঁচাতে দলে দলে ঢাকায় চলে এসেছে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত কত অবিবেচক ও কত অমানবিক সেটা আমরা চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি।
দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ মন্তব্য করে মেনন বলেন, এটি অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। তবে প্রধানমন্ত্রী সব ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়েছেন; কিন্তু কৃষির ক্ষেত্রটি একটু বাদ রয়ে গেছে বলে আমার মনে হয়েছে। কৃষককে যদি আমরা এই মুহূর্তে প্রণোদনা দিতে না পারি এবং সামনে যে বোরো ফসল আসছে তার দাম সম্পর্কে যদি তারা নিশ্চিন্ত না হয়; বোরো ফসল কাটা ও সংরক্ষণের জন্যে তাদের যে পুঁজির প্রয়োজন তা যদি তারা না পায়- সেক্ষেত্রে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারবে না তারা।
করোনা সংকটে গণসচেতনতা তৈরিতে ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যক্রম তুলে ধরে পার্টির সভাপতি বলেন, ইতোমধ্যে করোনা সচেতনতার জন্য সারাদেশে বিভিন্ন ইউনিট স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করে জনগণকে হাত ধোয়া ও ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ করছে। মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান বিতরণ করছে। এছাড়া গত সোমবার ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০০ মানুষের মাঝে ৫ কেজি করে চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি মসুর ডাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, আধা কেজি লবণ, আধা লিটার সয়াবিন তেল ও দুটি সাবান সম্বলিত একটি করে ব্যাগ বিতরণ করা হয়। আরো ৫০০ ব্যাগ বিতরণের জন্য রাজধানীর বাইরে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ধারাবাহিকভাবে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল যেমন- মুগদা, খিলগাঁও, বৃহত্তরা উত্তরা, পল্লবী, রূপনগর, আদাবর, মোহাম্মদপুর, দারুস সালাম, শেরেবাংলা নগর, তেজগাঁও, ভাটারা, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, চকবাজার, লালবাগ, গেণ্ডারিয়া, যাত্রাবাড়ী, কদমতলিসহ উত্তর-দক্ষিণ ঢাকা সিটির বিভিন্ন অংশে ক্রমান্বয়ে খাদ্য পৌঁছে দেয়া হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।