×

জাতীয়

বেকায়দায় পোশাক শ্রমিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২০, ১০:১৮ এএম

বেকায়দায় পোশাক শ্রমিকরা

পোশাক শ্রমিক। ফাইল ছবি

চাকরি হারানোর ভয়ে চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে চড়ে, পায়ে হেঁটে দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকায় এসেছিলেন তারা। কিন্তু ৫ এপ্রিল সকালে গিয়ে দেখেন বেশির ভাগ গার্মেন্টসে ঝুলছে আরো সপ্তাহখানেকের ছুটির নোটিস। দু-চারজন বাদে অধিকাংশ মালিকই মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার বিজিএমইএর ঘোষণার পরও খোলা রাখা হয়েছে কিছু কিছু কারখানা। এদিকে পুরোপুরি লকডাউনের কারণে ফের গ্রামে ফিরতে পারছেন না শ্রমিকরা। আবার অনেক বাড়িওয়ালা গ্রাম ফেরত এসব শ্রমিককে বাসায় থাকতে দিচ্ছেন না করোনা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে। তারপরও আছে অর্থসংকট। সবমিলিয়ে চরম বেকায়দায় পড়ছেন পোশাক শ্রমিকরা। গার্মেন্টস মালিকদের সিদ্ধান্তের দোলাচল ও এমন আচরণকে খুবই অমানবিক বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজিএমইএর তথ্যমতে, সোমবার (৪ এপ্রিল) পর্যর্ন্ত মাসের বেতন পরিশোধ করেছে মাত্র ৩০টি পোশাক কারখানা। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, এ পর্যন্ত ৩০টি কারখানা বেতন পরিশোধ করেছে। বাকি কারখানাগুলো ধাপে ধাপে ১৬ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ করবে। বিভিন্ন কারণে সোমবার ৮৯টি কারখানা চালু ছিল। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণের ফলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ হাজার ১১৫টি গার্মেন্টসে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। তাই এখন একটি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক মালিকদেরও কিছুটা সময় দিতে হবে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কায় যখন জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তখন পোশাক কারখানা চালু করা হলে তা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে বলে মনে করেন সিপিডির সম্মানিত ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, কোনোভাবেই সরকারের নিষেধ অমান্য করে পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে এমন টালবাহানা করা ঠিক হয়নি। আবার তাদের মার্চ মাসের বেতনও এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এ ধরনের প্রহসন না করলেও হতো। নিষ্ঠুরতম মাস এপ্রিলে আরেকটি নিষ্ঠুরতম কাজ করল পোশাক মালিকরা। করোনার ছোবল যখন ভালো করে আঘাত হানেনি, তখন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চাইলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলেন ৫ হাজার কোটি টাকা। তারপরও এ ধরনের প্রহসন না করলেও পারত।

করোনা আতঙ্কের মধ্যেই চাকরি হারানোর শঙ্কা বেতন পরিশোধ করেছে মাত্র ৩০ কারখানা

আশুলিয়ার কেআরএস কারখানার শ্রমিক শাহাদাত হোসেন বলেন, অনেক কষ্ট করে গ্রাম থেকে চাকরি হারানোর ভয়ে ঢাকায় এসেছি। এসে দেখি, মার্চ মাসের বেতন না দিয়েই গার্মেন্টস বন্ধ করে দিয়েছে। আবার যে বাসায় ভাড়া থাকি, সেই বাড়িওয়ালাও করোনা আক্রান্তের ভয়ে ঘরে ঢুকতে দিতে চান না। এখন আবার ঢাকা থেকে বের হওয়া যাবে না- তাহলে আমরা যাবো কোথায়? খাবো কী?

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পিপিই, মাস্ক তৈরি ছাড়া বাকি সব গার্মেন্টস আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ। সোমবার (৪ এপ্রিল) সব কারখানার মালিকদের কাছে এ ব্যাপারে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ রাখতে বিজিএমইএর অনুরোধ অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে বিজিএমইএর সব সদস্য প্রতিষ্ঠানকে যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকদের মার্চের মজুরিও দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সদস্যদের সহায়তার জন্য সংগঠনটির দপ্তরে একটি সেল খোলা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিস্তার রোধকল্পে আগামী ৬ থেকে ১৪ এপ্রিল দেশের সব ইপিজেড এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। এ সময় ইপিজেডের সব কারখানায় সমস্ত উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এর ফলে, ইপিজেডগুলোর মধ্যে অবস্থিত তৈরি পোশাকসহ মোট ৪৭৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেল।

করোনা ভাইরাসের বিরূপ পরিস্থিতি উপেক্ষা করে সাভার ও আশুলিয়া শিল্প এলাকার শতাধিক পোশাক কারখানা খোলা থাকতে দেখা গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, সাভারের হেমায়েতপুর, উলাইল, তেঁতুলঝোড়া, রাজফুলবাড়ীয়া, উলাইল, কর্নপাড়া, আশুলিয়ার চারাবাগ, খেজুরবাগান, জিরাবো, ঘোষবাগ, জামগড়াসহ বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানাগুলো খোলা রয়েছে। শ্রমিকদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও মালিকপক্ষ জরুরি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছেন অভিযোগ করে অনেক শ্রমিক বলেন, পোশাক মালিকরা করোনা ভাইরাস কি তা যেন ভুলেই গেছেন। তারা আরো বলেন, কাজ না করলে পেটের খোরাক জোগাড় হবে না। তাই করোনা ভাইরাসে তাদের কিছু যায় আসে না। গাজীপুরে অনেক কারখানায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ চলেছে। রাজধানীতে বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App